পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७:कश ज्ञष्नाबव्ी কিন্তু যােবক উত্তরের প্রতীক্ষা হ’া করিয়া বাহিরে আসিলেন। বাহিরে আসিয়া দেখিলেন যে, প্রায় প্রভাত হইয়াছে। চতুন্দিক অতি গাঢ় কুজীবাটিকায় ব্যাপিত হইয়াছে; আকাশ, নক্ষত্র, চন্দ্ৰ, উপকােল, কোন দিকে কিছই দেখা যাইতেছে না। বঝিলেন, নাবিকদের দিগভ্ৰম হইয়াছে। এক্ষণে কোন দিকে যাইতেছে, তাহার নিশ্চয়তা পাইতেছে না-পাছে বাহির-সমান্দ্ৰে পড়িয়া অকলে মারা যায়, এই আশঙ্কায় ভীত হইয়াছে। হিমনিবারণ জন্য সম্মখে আবরণ দেওয়া ছিল, এজন্য নৌকার ভিতর হইতে আরোহীরা এ সকল বিষয় কিছই জানিতে পারেন নাই। কিন্তু নব্য যাত্রী অবস্থা বঝিতে পারিয়া বন্ধকে সবিশেষ কহিলেন; তখন নৌকামধ্যে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল। যে কয়েকটি সন্ত্রীলোক নৌকামধ্যে ছিল, তন্মধ্যে কেহ কেহ কথার শব্দে জাগিয়াছিল, শনিবামাত্র তাহারা আত্তনাদ করিয়া উঠিল। প্রাচীন কহিল, “কেনারায় পড়! কেনারায় পড়! কেনারায় পড়া!” নব্য ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “কেনারা কোথা, তাহা জানিতে পারিলে এত বিপদ হইবে יי ק אbr>6 ইহা শনিয়া নৌকারোহীদিগের কোলাহল আরও বন্ধি পাইল। নব্য যাত্রী কোন মতে —চারি পাঁচ দন্ডের মধ্যে অবশ্য সংয্যোদয় হইবে। চারি পাঁচ দন্ডের মধ্যে নৌকা কদাচ মারা যাইবে না। তোমরা এক্ষণে বাহন বন্ধ কর, স্রোতে নৌকা যথায় যায় যাক: পশ্চাৎ রৌদ্র হইলে পরামর্শ করা যাইবে।” নাবিকেরা এই পরামশে সম্মত হইয়া তদনরাপ আচরণ করিতে লাগিল। অনেকক্ষণ পয্যন্ত নাবিকেরা নিশেচন্ডট হইয়া রহিল। যাত্রীরা ভয়ে কণঠাগতপ্ৰাণ। বেশী বাতাস নাই। সতরাং তাঁহারা তরঙগান্দোলনকক্ষপ বড় জানিতে পারিলেন না। তথাপি সকলেই মাতু্য নিকট নিশ্চিত করিলেন। পরিষেরা নিঃশব্দে দােগানাম জপ করিতে লাগিলেন, সত্ৰীলোকেরা সর তুলিয়া বিবিধ শব্দবিন্যাসে কাঁদিতে লাগিল। একটি সত্ৰীলোক গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসজ্জাজন করিয়া আসিয়াছিল, ছেলে জলে দিয়া আর তুলিতে পারে নাই,-সেই কেবল কাঁদল না। প্রতীক্ষা করিতে করিতে অনভবে বেলা প্রায় এক প্রহর হইল। এমত সময়ে অকস্মাৎ সকলেই জিজ্ঞাসা করিয়া উঠিল, “কি ! কি! মাঝি, কি হইয়াছে ?” মাঝিরাও একবাক্যে কোলাহল করিয়া কহিতে লাগিল, “রোদ উঠেছে! রোদ উঠেছে! ঐ দেখি ডাওগা!” যাত্রীরা সকলেই ঔৎসক্যসহকারে নৌকার বাহিরে আসিয়া কোথায় আসিয়াছেন, কি বক্তান্ত, দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন, সৰ্য্যেপ্রকাশ হইয়াছে। কুজব্বাটিকার অন্ধকাররাশি হইতে দিঙামন্ডল একেবারে বিমক্স হইয়াছে। বেলা প্রায় প্রহরাতীত হইয়াছে। যে স্থানে নৌকা আসিয়াছে, সে প্রকৃত মহাসমদ্র নহে, নদীর মোহনা মাত্র, কিন্তু তথায় নদীর যেরপ বিস্তার, সেরাপ বিস্তার আর কোথাও নাই। নদীর এককােল নৌকার অতি নিকটবত্তীর্ণ বটে,-এমন কি, পঞ্চাশৎ হস্তের মধ্যগত, কিন্তু অপর কালের চিহ্ন দেখা যায় না। আর যে দিকেই দেখা যায় অনন্ত জলরাশি চঞ্চল রবিরশিমমালাপ্ৰদীপিত হইয়া গগনপ্রান্তে গগনসহিত মিশিয়াছে। নিকটস্থ জল, সচরাচর সকদম নদীজলবণী ; কিন্তু দীরস্থ বারিরাশি নীলপ্ৰভ। আরোহীরা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত করিলেন যে, তাঁহারা মহাসমাদ্ৰে আসিয়া পড়িয়াছেন; তবে সৌভাগ্য এই যে, উপকােল নিকটে, আশঙ্কার বিষয় নাই। সােয্যপ্লতি দলিট করিয়া দিক নিরাপিত করিলেন। সম্মখে যে উপকােল দেখিতেছিলেন, সে সহজেই সমদ্রের পশ্চিম তট বলিয়া সিদ্ধান্ত হইল। তাঁটমধ্যে নৌকার অনতিদারে এক নদীর মািখ মন্দগামী কলধৌতপ্রবাহবৎ আসিয়া পড়িতেছিল। সঙ্গমস্থলে দক্ষিণ পাশের বহৎ সৈকতভূমিখন্ডে নানাবিধ পক্ষিগণ অগণিত সংখ্যায় ক্ৰীড়া করিতেছিল। এই নদী এক্ষণে “রসালপরের নদী” নাম ধারণ করিয়াছে।