পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७कभ ब्रा5नावब्नी বলিয়া প্রতীতি জন্মাইল। প্রতীতিমাত্র নবকুমারের জীবনাশা পািনর দীপিত হইল। মনষ্যেসমাগম ব্যতীত এ আলোকের উৎপত্তি সম্পভাবে না, কেন না, এ দাবানলের সময় নহে। নবকুমার গাত্ৰোথান করিলেন। যথায় আলোক, সেই দিকে ধাবিত হইলেন। একবার মনে ভাবিলেন, “এ আলোক ভৌতিক ?—হইতেও পারে; কিন্তু শঙ্কায় নিরস্ত থাকিলেই কোন জীবন রক্ষা হয় ?” এই ভাবিয়া নিভীকচিত্তে আলোক লক্ষ্য করিয়া চলিলেন। বক্ষ, লতা, বালকাসন্তাপ পদে পদে তাঁহার গতিরোধ করিতে লাগিল। বাক্ষলতা দলিত করিয়া, বালকোসতািপ লঙ্ঘিত করিয়া নবকুমার চলিলেন। আলোকের নিকটবত্তীর্ণ হইয়া দেখিলেন যে, এক অত্যুচ্চ বালকাসত্যুপের শিরোভাগে অগিন জীবলিতেছে, তৎপ্ৰভায় শিখরাসীন মনষ্যমাত্তি আকাশপটস্থ চিত্রের ন্যায় দেখা যাইতেছে। নবকুমার শিখরাসীন মনষ্যের সমীপবত্তীর্ণ হইবেন স্থির সঙ্কলপ করিয়া, অশিথিলীকৃত বেগে চলিলেন। পরিশেষে সইেত পারোহণ করিতে লাগিলেন। তখন কিঞ্চিৎ শঙকা হইতে লাগিল-তথাপি আকম্পিতপদে সন্ত পারোহণ করিতে লাগিলেন। আসীন ব্যক্তির সম্মািখবত্তীর্ণ হইয়া যাহা যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাঁহার রোমাণ্ড হইল। তিনেিঠবেন কি প্রত্যাবৰ্ত্তন করিবেন, তাহা সিথর করিতে পারিলেন না। শিখরাসীন মনষ্যে নয়ন মাদ্রিত করিয়া ধ্যান করিতেছিল—নবকুমারকে প্রথমে দেখিতে পাইল না। নবকুমার দেখিলেন, তাহার বয়ঃক্রম প্রায় পঞ্চাশ বৎসর হইবে। 'পরিধানে কোন কাপাসবসত্ৰ আছে কি না, তাহা লক্ষ্য হইল না; কটিদেশ হইতে জানা পয্যন্ত শান্দালচন্মে আব্বত। গলদেশে রদ্রাক্ষমালা ; আয়ত মখমন্ডল শামশ্রীজটােপরিবেষ্টিত। সম্মখে কাঠে অগিন জবালিতেছিল—সেই অগিনর দীপিত লক্ষ্য করিয়া নবকুমার সে স্থলে আসিতে পারিয়াছিলেন। নবকুমার একটা বিরাট দগন্ধ পাইতে লাগিলেন; ইহার আসন প্রতি দক্ষিটপাত করিয়া তাহার কারণ অনভূত করিতে পারিলেন। জটাধারী এক ছিন্নশীষ গলিত শবের উপর বসিয়া আছেন। আরও সভয়ে দেখিলেন যে, সম্মখে নরকপাল রহিয়াছে, তন্মধ্যে রক্তবর্ণ দ্রব পদার্থ রহিয়াছে। চতুদিকে স্থানে সথানে অস্থি পড়িয়া রহিয়াছে—এমন কি, যোগাসীনের কন্ঠস্থ রুদ্রাক্ষমালামধ্যে ক্ষদ্র ক্ষদ্র অস্থিখন্ড গ্রথিত রহিয়াছে। নবকুমার মন্ত্রমাগধ হইয়া রহিলেন। অগ্রসর হইবেন, কি সস্থান ত্যাগ করিবেন, তাহা বঝিতে পারিলেন না। তিনি কাপালিকাদিগের কথা! শ্রত ছিলেন। বঝিলেন যে, এ ব্যক্তি কাপালিক। যখন নবকুমার উপনীত হইয়াছিলেন, তখন কাপালিক মন্ত্রসাধনে বা জপে বা ধ্যানে মগন ছিল, নবকুমারকে দেখিয়া ভ্ৰক্ষেপও করিল না। অনেকক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিল, “কসত্বং ?” নবকুমার কহিলেন, “ব্রাহ্মণ।” কাপালিক কহিল, “তিশঠ।” এই কহিয়া পািব্বকায্যে নিযক্ত হইল। নবকুমার দাঁড়াইয়া রহিলেন । এইরপে প্রহরান্ধ গত হইল। পরিশেষে কাপালিক গাত্ৰোখান করিয়া নবকুমারকে পািব্বদ্বৎ সংস্কৃতে কহিল, “ম্যমান সর।” ইহা নিশ্চিত বলা যাইতে পারে যে, অন্য সময়ে নবকুমার কদাপি ইহার সঙ্গী হইতেন না। কিন্তু এক্ষণে ক্ষধাতৃষ্ণায় প্রাণ কন্ঠাগত৷ অতএব কহিলেন, “প্রভুর যেমত আজ্ঞা। কিন্তু আমি ক্ষধাতৃষ্ণায় বড় কাতর। কোথায় গেলে আহায্য সামগ্রী পাইব অননুমতি করবেন।” কাপালিক কহিল, “ভৈরবীপ্রেরিতোহসি; ম্যমান সর; পরিতোষঃ তে ভবিষ্যতি।” নবকুমার কােপালিকের অনগামী হইলেন। উভয়ে অনেক পথ বাহিত করিলেন—পথিমধ্যে কেহ কোন কথা কহিল না। পরিশেষে এক পর্ণকুটনীর প্রাপ্ত হইল—কাপালিক প্রথমে প্রবেশ করিয়া নবকুমারকে প্রবেশ করিতে অনািমতি করিল; এবং নবকুমারের অবোধগম্য কোন উপায়ে একখন্ড কাঠে অগিন জবালিত করিল। নবকুমার তদালোকে দেখিলেন যে, ঐ কুটনীর সব্বাংশে কিয়াপাতায় রচিত। তন্মধ্যে কয়েকখানা ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্মম আছে-এক কলস জল ও কিছ ফলমল আছে । কাপালিক অগিন জবালিত করিয়া কহিল, “ফলমলে যাহা আছে, আত্মসাৎ করিতে পাের। পৰ্ণপাত্র রচনা করিয়া, কলসজল পান করিও । ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্মম আছে, অভিরাচি হইলে শয়ন করিও। নিবিবাঘের তিন্ডাঠ-ব্যান্ত্রের ভয় করিও না। সময়ান্তরে আমার সহিত সাক্ষাৎ হইবে। যে পয্যন্ত সাক্ষাৎ না হয়, সে পয্যন্ত এ কুটনীর ত্যাগ করিও না।” S 8 SR