পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডলা দুই অকুণ, বঞ্চনলতা ছিন্ন করতে নবকুমার আর একবার যত্ন পাইলেন–কিন্তু সে যারও নিমফল এমত সময়ে নিকটে বালিকার উপর অতি কোমল পদধবনি হইল-এ পদধবনি কাপালিকের নহে। নবকুমার নয়ন ফিরাইয়া দেখিলেন, সেই মোহিনী-কপালকুণ্ডলা। তাঁহার করে খড়া দৗলতেছে। কপালকুন্ডলা কহিলেন, “চুপ! কথা কহিও না—খড়া আমারই কাছে—চুরি করিয়া রাখিয়াছি।” এই বলিয়া কপালকুণ্ডলা অতি শীঘ্রহস্তে নবকুমারের লতাবন্ধন খড়া দ্বারা ছেদন করিতে লাগিলেন। নিমিষমধ্যে তাঁহাকে মক্ত করিলেন। কহিলেন, “পলায়ন করা; আমার পশ্চাৎ আইস, পথ দেখাইয়া দিতেছি।” এই বলিয়া কপালকুন্ডলা তীরের ন্যায় বেগে পথ দেখাইয়া চলিলেন। নবকুমার লাফ দিয়া তাঁহার অনসরণ করিলেন। সপতম পরিচ্ছেদ ঃ অন্বেষণে "And the great lord of Luna Fell at that deadly stroke; As falls on mount Alvernus A thunder-smitten oak.' Lays of Ancient Rome এদিকে কাপালিক গহমধ্যে তন্ন তন্ন করিয়া অনসন্ধান করিয়া, না খড়গ, না কপালকুন্ডলাকে দেখিতে পাইয়া সন্ধিগধচিত্তে সৈকতে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিল। তথায় আসিয়া দেখিল যে, নবকুমার তথায় নাই। ইহাতে অত্যন্ত বিসময় জন্মিল। কিয়ৎক্ষণ পরেই ছিন্ন লতাবন্ধনের উপর দস্টি পড়িল। তখন স্বরপ অনভূত করিতে পারিয়া কাপালিক নবকুমারের অন্বেষণে ধাবিত হইল। কিন্তু বিজনমধ্যে পলাতকেরা কোন দিকে কোন পথে গিয়াছে তাহা স্থির করা দঃসাধ্য। অন্ধকারবশতঃ কাহাকেও দক্ষিটপাথবত্তীর্ণ করিতে পারিল না। এজন্য বাক্যশব্দ লক্ষ্য করিয়া ক্ষণেক ইতস্ততঃ ভ্ৰমণ করিতে লাগিল। কিন্তু সময়ে সময়ে কণ্ঠধবনিও শনিতে পাওয়া গেল। না। অতএব বিশেষ করিয়া চারিদিক পৰ্য্যবেক্ষণ করিবার অভিপ্ৰায়ে এক উচ্চ বালিয়াড়ির শিখরে উঠিল। কােপালিক এক পাশবি দিয়া উঠিল; তাহার অন্যতর পাশে বা বিষার জলপ্রবাহে সন্তাপমাল ক্ষয়িত হইয়াছিল, তাহা সে জানিত না। শিখরে আরোহণ করিবামাত্র কাপালিকের শরীরভরে সেই পতনোন্মখ সতীপশিখর ভগন হইয়া অতি ঘোর রবে ভূপতিত হইল। পতনকালে পৰ্ব্বতশিখরচু্যত মহিষের ন্যায় কাপালিকও তৎসঙ্গে পড়িয়া গেল। অস্টম পরিচ্ছেদ ঃ আশ্রয়ে "And that very nightShall Romeo bear thee to Mantua.” O Romeo and Juliet সেই অমাবস্যার ঘোরান্ধকার যামিনীতে দই জনে উদ্ধবশবাসে বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বন্য পথ নবকুমারের অপরিজ্ঞাত ; কেবল সহ চারিণী ষোড়শীকে লক্ষ্য করিয়া তদবত্বসম্পবিত্তীর্ণ হওয়া ব্যতীত তাঁহার অন্য উপায় নাই। মনে মনে ভাবিলেন, “এও কপালে ছিল!” নবকুমার জানিতেন না যে, বাঙ্গালী অবস্থার বশীভুত, অবস্থা বাঙগালীর বশীভূত হয় না। জানিলে এ দঃখ করিতেন না। ক্ৰমে তাঁহারা পাদক্ষেপ মন্দ করিয়া চলিতে লাগিলেন। অন্ধকারে কিছই লক্ষ্য হয় না; কেবল কখন কোথাও নক্ষত্ৰলোকে কোন বালকাস্তাপের শত্ৰ শিখর অসপভট দেখা যায়-কোথাও খদ্যোতমালা সংবত ব্যুক্ষের অবয়ব জ্ঞানগোচর হয়। S8Q