পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লবরেখাবিশিস্ট—আর অতিশয় উতজবল। তাহার কটাক্ষ সিথর, অথচ মৰ্ম্মমভেদী। তোমার উপর দস্পিট পড়িলে তুমি তৎক্ষণাৎ অনভূত করা যে, এ সত্ৰীলোক তোমার মন পৰ্য্যন্ত দেখিতেছে। দেখিতে দেখিতে সে মৰ্ম্মভেদী দভিটর ভাবান্তর হয়; চক্ষ সকোমল স্নেহময় রসে গলিয়া যায়। আবার কখনও বা তাহাতে কেবল সখাবেশজনিত ক্লান্তিপ্রকাশ মাত্র, যেন সে নয়ন মন্মথের সর্বপন শয্যা। কখনও বা লালসা বিসফারিত, মদনরসে। টলটিলায়মান। আবার কখনও লোলাপাঙ্গে ক্লাের কটাক্ষী-- যেন মেঘমধ্যে বিদ্যােন্দাম। মািখকান্তিমধ্যে দাইটি অনিবর্বিচনীয় শোভা ; প্রথম সব্বত্ৰিগামিনী বদ্ধির প্রভাব, দিবতীয় আত্মগাঁরমা। তৎকারণে যখন তিনি মরালিগ্রীবা বণ্ডিকম করিয়া দাঁড়াইতেন, তখন সহজেই বোধ হইত, তিনি রমণীকুল রাজ্ঞী। সন্দরীর বয়ঃক্ৰম সপতবিংশ বৎসর—ভাদ্র মাসের ভরা নদী। ভাদ্র মাসের নদীজলের ন্যায়, ইহার রপরাশি টলমল করিতেছিল—উছলিয়া পড়িতেছিল। বণৰ্বাপেক্ষা, নয়নাপেক্ষা, সৰ্ব্বাপেক্ষা সেই সৌন্দয্যের পরিপলব মাগধকর। পর্ণযৌবনভরে সব্বশরীর সতত ঈষচ্চঞ্চল; বিনা বায়তে শরতের নদী যেমন ঈষচ্চ৭৮ল, তেমনি চঞ্চল; সে চাঞ্চল্য মহম্মম হাঃ নািতন নািতন শোভাবিকাশের কারণ। নবকুমার নিমেষশান্যচক্ষে এই নােতন নািতন শোভা দেখিতেছিলেন। সন্দরী, নবকুমারের চক্ষ নিমেষশান্য দেখিয়া, কহিলেন, “আপনি কি দেখিতেছেন, আমার রােপ ? ' * নবকুমার ভদ্রলোক ; অপ্রতিভ হইয়া মাখােবনত করিলেন। নবকুমারকে নিরািত্তর দেখিয়া অপরিচিতা পনেরপি হাসিয়া কহিলেন, “আপনি কখনও কি সস্ত্রীলোক দেখেন নাই, না। আপনি আমাকে বড় সন্দরী মনে করিতেছেন ?” সহজে এ কথা কহিলে, তিরস্কারস্বরপ বোধ হইত, কিন্তু রমণী যে হাসির সহিত বলিলেন, তাহাতে ব্যঙ্গ ব্যতীত আর কিছই বোধ হইল না। নবকুমার দেখিলেন, এ অতি মািখরা; মািখরার কথায় কেন না। উত্তর করিবেন ? কহিলেন, “আমি সত্ৰীলোক দেখিয়াছি; কিন্তু এরােপ সন্দরী দেখি নাই।” রমণী সগৰ্ব্বেবৰ্ণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “একটিও না ?” নবকুমারের হৃদয়ে কপালকুণডলার রােপ জাগিতেছিল; তিনি সাগবে উত্তর করিলেন, “একটিও না, এমত বলিতে পারি না।” উত্তরকারিণী কহিলেন, “তবও ভাল। সেটি কি আপনার গহিণী ?” নব। কেন ? গাঁহিণী কেন মনে ভাবিতেছেন ? সত্ৰী। বাঙগালীরা আপন গহিণীকে সব্বাপেক্ষা সন্দিরী দেখে। ਅ আমি বাঙগালী : আপনিও ত বাঙ্গালীর ন্যায় কথা কহিতেছেন, আপনি তবে কোন দেশীয় ? যাবতী আপন পরিচ্ছদের প্রতি দলিট করিয়া কহিলেন, “অভাগিনী বাঙ্গালী নহে, পশ্চিমপ্ৰদেশৰীয়া মসলমানী ।“ নবকুমার পর্যবেক্ষণ করিয়া দেখিলেন, পরিচ্ছদ পশ্চিমপ্রদেশীয়। মসলমানীর ন্যায় বটে। কিন্তু বাঙগালা ত বাঙ্গালীর মতই বলিতেছে। ক্ষণপরে তরণী বলিতে লাগিলেন, “মহাশয় বাগবৈদগেধ্য আমার পরিচয় লইলেন। —আপন পরিচয় দিয়া চরিতার্থ করান। যে গহে সেই অদ্বিতীয়া রােপসী গহিণী সে গােহ কোথায় ?” নবকুমার কহিলেন, “আমার নিবাস সপতগ্রাম।” বিদেশিনী কোন উত্তর করলেন না। সহসা তিনি মখাবনত করিয়া, প্ৰদীপ উত্তজবল করিতে লাগিলেন। ক্ষণেক পরে মািখ না তুলিয়া বললেন, “দাসীর নাম মতি। মহাশয়ের নাম কি শনিতে পাই না ?” নবকুমার বলিলেন, “নবকুমার শমা।” প্রদীপ নিবিয়া গেল । SC C.