পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডলা নবকুমার মতিবিবিকে সঙ্গে করিয়া লইয়া চলিলেন। যে দাসী শিবিকারোহণে আসিয়াছিল, সেও সঙ্গে চলিল। ইহার নাম পেষমন। কপালকুন্ডলা দোকানঘরের আদ্র মাত্তিকায় একাকিনী বসিয়া ছিলেন। একটি ক্ষীণালোক প্ৰদীপ জীবলিতেছে মাত্র-আবদ্ধ নিবিড় কেশরাশি পশ্চাদভাগ অন্ধকার করিয়া রহিয়াছিল। মতিবিবি প্রথম যখন তাঁহাকে দেখিলেন, তখন অধরপাশেব ও নয়নপ্রান্তে ঈষৎ হাসি ব্যক্ত হইল। ভাল করিয়া দেখিবার জন্য প্রদীপটি তুলিয়া কপালকুণডলার মাখের নিকট আনিলেন। তখন সে হাসি-হাসি ভাব দরি হইল ; মতির মােখ। গম্ভীর হইল। —অনিমেষলোচনে দেখিতে লাগিলেন। কেহ কোন কথা কহেন না :-মতি মগধা, কপালকুন্ডলা কিছ বিস্মিতা। ক্ষণেক পরে মতি আপন অঙগ হইতে অলঙকাররাশি মোচন করিতে লাগিলেন। মতি আত্মশরীর হইতে অলঙ্কাররাশি মক্ত করিয়া একে একে কপালকুন্ডলাকে পরাইতে লাগিলেন। কপালকুন্ডলা কিছ: বলিলেন না। নবকুমার কহিতে লাগিলেন, “ও কি হইতেছে ?” মতি তাহার কোন উত্তর করিলেন না। অলঙ্কারসমাবেশ সমাপত হইলে, মতি নবকুমারকে কহিলেন, “আপনি সত্যই বলিয়াছিলেন। এ ফল রাজোদ্যানেও ফটে না। পরিতাপ এই যে, রাজধানীতে এ রািপরাশি দেখাইতে পারিলাম না। এ সকল ‘অলঙ্কার এই অঙ্গেরই উপযক্তি—এই জন্য পরাইলাম। আপনিও কখন কখন পরাইয়া মািখরা বিদেশিনীকে মনে করিবেন।” নবকুমার চমৎকৃত হইয়া কহিলেন, “সে কি ! এ যে বহমাল্য অলঙ্কার। আমি এ সব লাইব কেন ?” মতি কহিলেন, “ঈশবরপ্রসাদাৎ আমার আর আছে। আমি নিরাভরণা হইব না। ইহাকে পরাইয়া আমার যদি সখিবোধ হয়, আপনি কেন ব্যাঘাত করেন ?” মতিবিবি। ইহা কহিয়া দাসীসঙ্গে চলিয়া গেলেন। বিরলে আসিলে পেষমন মতিবিবিকে জিজ্ঞাসা করিল, “ीदर्ताद७ान् ! ७q दार्गकु 6क ?' চতুথ পরিচ্ছেদ ঃ শিবিকারোহণে -খলিন সত্ববে, কঙ্কণ, বলয়, হার, সৰীসৃথি, কণীঠমালা, কুন্ডল, নাপাের, কাঞি ।” মেঘনাদবধ গহনার দশা কি হইল, বলি শািন। মতিবিবি গহনা রাখিবার জন্য একটি রৌপ্যজড়িত হস্তিদন্তের কৌটা পাঠাইয়া দিলেন। দস্যরা তাঁহার অলপ সামগ্রীই লইয়াছিল—নিকটে যাহা ছিল, তদব্যতীত কিছই পায় নাই। নবকুমার দই একখানি গহনা কপালকুণডলার অঙ্গে রাখিয়া অধিকাংশ কৌটায় তুলিয়া রাখিলেন। পরদিন প্রভাতে মতিবিবি বদ্ধমানাভিমখে, নবকুমার সপত্নীক সপতগ্রামাভিমখে যাত্রা করিলেন। নবকুমার কপালকুন্ডলাকে শিবিকাতে তুলিয়া দিয়া তাঁহার সঙ্গে গহনার কৌটা। দিলেন। বাহকেরা সহজেই নবকুমারকে পশ্চাৎ করিয়া চলিল। কপালকুন্ডলা শিবিকাদ্বার খালিয়া চারিদিক দেখিতে দেখিতে যাইতেছিলেন। একজন ভিক্ষক তাঁহাকে দেখিতে পাইয়া ভিক্ষা চাইতে চাইতে পালকীর সঙ্গে সঙ্গে চলিল । কপালকুন্ডলা কহিলেন, “আমার ত কিছ নাই, তোমাকে কি দিব ?” ভিক্ষক কপালকুণডলার অঙ্গে যে দই একখানা অলঙ্কার ছিল, তৎপ্রতি অঙ্গালিনিন্দেশ করিয়া কহিল, “সে কি মা! তোমার গায়ে হীরা মক্তা——তোমার কিছই নাই ?” কপালকুন্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “গহনা পাইলে তুমি সন্তুস্ট হও?” SG CA