পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডলা নিম্প্রয়োজনে, প্রয়োজন কলপনা করিয়া কপালকুন্ডলার কাছে আসিতেন, তাহাতে প্রকাশ পাইত; য্যেরপ বিনাপ্রসঙ্গে কপালকুন্ডলার কাছে আসিতেন, তাহাতে প্রকাশ পাইত; যেরপ বিনাপ্রসঙ্গে কপালকুন্ডলার প্রসঙ্গ উত্থাপনের চেস্টা পাইতেন, তাহাতে প্রকাশ পাইত; যেরপ দিবানিশি কপালকুণডলার সখস্বচ্ছন্দতার অন্বেষণ করিতেন, তাহাতে প্ৰকাশ পাইত; সব্বদা অন্যমনস্কতাসচক পদবিক্ষেপেও প্রকাশ পাইত। তাঁহার প্রকৃতি পৰ্যন্ত পরিবত্তিত হইতে লাগিল। যেখানে চাপল্য ছিল, সেখানে গাম্ভীৰ্য্য জন্মিল ; যেখানে অপ্রসাদ ছিল, সেখানে প্ৰসন্নতা জন্মিল; নবকুমারের মািখ সব্বদাই প্রফতুল্ল। হৃদয় সেনহের আধার হওয়াতে অপর সকলের প্রতি স্নেহের আধিক্য জন্মিল; বিরক্তিজনকের প্রতি বিরাগের লাঘব হইল ; মনষ্যেমাত্র প্রেমের পাত্ৰ হইল ; পথিবী সৎকমের জন্য মাত্র সম্প্রটা বোধ হইতে লাগিল; সকল সংসার সন্দর বোধ হইতে লাগিল। প্রণয় এইরনুপ! প্রণয় ককাশকে মধর করে, অসৎকে সৎ করে, আপণ্যকে পণ্যবান করে, অন্ধকারকে আলোকময় করে! আর কপালকুন্ডলা ? তাহার কি ভাবা! চল পাঠক, তাহাকে দশন করি। ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ অবরোধে “কি মিত্যপাস্যাভরণানি যৌবনে ধতিং ত্বয়া বাদধকশোভি বলকলম। বদ প্রদোষে সফটচন্দ্রতারকা বিভােবরী যদ্যারণায় কলপাতে৷” কুমারসম্ভব সকলেই অবগত আছেন যে, পৰ্ব্বকালে সপতগ্রাম মহাসমদ্ধিশালী নগর ছিল। এককালে যবাদবীপ হইতে রোমক পয্যন্ত সকবদেশের বণিকেরা বাণিজ্যাথ এই মহানগরে মিলিত হইত । কিন্তু বঙ্গীয় দশম একাদশ শতাব্দীতে সপতগ্রামের প্রাচীন সমদ্ধির লাঘব জন্মিয়াছিল। ইহার প্রধান কারণ এই যে, তন্নগরের প্রান্তভাগ প্রক্ষালিত করিয়া যে স্রোতসাবতী বাহিত হইত, এক্ষণে তাহা সঙ্কীণী শরীরা হইয়া আসিতেছিল; সতরাং বহদাকার জলযান সকল আর নগর পর্য্যন্ত আসিতে পারিত না। এ কারণ বাণিজ্যবাহদুল্য ক্ৰমে লপিত হইতে লাগিল। বাণিজ্যগৌরব নগরের বাণিজ্যনাশ হইলে সকলই যায়। সপতগ্রামের সকলই গেল। বঙগীয় একাদশ শতাব্দীতে হাগলি নািতন সৌষ্ঠবে তাহার প্রতিযোগী হইয়া উঠিতেছিল। তথায় পত্তাগীসেরা বাণিজ্য আরম্ভ করিয়া সপতগ্রামের ধনলক্ষয়ীকে আকষিতা করিতেছিলেন। কিন্তু তখনও সপতগ্রাম একেবারে হতশ্ৰী হয় নাই। তথায় এ। পৰ্যন্ত ফৌজদার প্রভৃতি প্রধান রাজপরিষদিগের বাস ছিল; কিন্তু তখনও অনেকাংশ শ্ৰীভ্রন্ট এবং বসতিহীন হইয়া পল্লীগ্রামের আকার ধারণ করিয়াছিল। সপতগ্রামের এক নিজজন ঔপনগরিক ভাগে নবকুমারের বাস। এক্ষণে সপতগ্রামের ভগনদশায় তথায় প্রায় মনষ্যেসমাগম ছিল না; রাজপথ সকল লতাগালমাদিতে পরিপরিত হইয়াছিল। নবকুমারের বাটীর পশ্চাদভাগেই এক বিস্তৃত নিবিড় বন । বাটীর সম্মখে প্রায় ক্রোশাদধী দরে একটি ক্ষদ্র খাল বাহিত; সেই খাল একটা ক্ষদ্র প্রান্তর বেস্টন করিয়া গাহের পশ্চাদভাগস্থ বনমধ্যে প্রবেশ কািরয়াছিল। গাহটি ইন্টকরচিত; দেশকাল বিবেচনা করিলে তাহাকে নিতান্ত সামান্য গহ বলা যাইতে পারিত না। দোতলা বটে, কিন্তু ভয়ানক উচ্চ নহে; এখন একতলায় সেরপি উচ্চতা অনেক দেখা যায়। এই গাহের ছাদের উপরে দাইটি নবীনবয়সী সত্ৰীলোক দাঁড়াইয়া চতুদিকে অবলোকন করিতেছিলেন। সন্ধ্যাকাল উপস্থিত। চতুদিকে যাহা দেখা যাইতেছিল, তাহা লোচনারঞ্জন বটে। নিকটে, একদিকে নিবিড় বন; তন্মধ্যে অসংখ্য পক্ষী কলরব করিতেছে। অন্যদিকে ক্ষদ্র খাল, রপার সাতার ন্যায় পড়িয়া রহিয়াছে। দরে মহানগরের অসংখ্য সৌধমালা, নববসন্তপবনসপশলোলপি নাগরিকগণে পরিপরিত হইয়া শোভা করিতেছে। অন্যদিকে, অনেক দারে নৌকাভরণা ভাগীরথীর বিশাল বক্ষে সন্ধ্যাতিমির ক্ষণে ক্ষণে গাঢ়তর হইতেছে। Nd (kad