পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী পরিচিত ছিলেন। মেহের-উন্নিসার সহিত তাঁহার বিশেষ প্ৰণয় ছিল। পরে উভয়েই দিল্লীর সাম্রাজ্যলাভের জন্য প্ৰতিযোগিনী হইয়াছিলেন। এক্ষণে একত্র হওয়ায় মেহের-উন্নিসা মনে ভাবিতেছেন, “ভারতবষের কর্তৃত্ব কাহার অদলেট বিধাতা লিখিয়াছেন ? বিধাতাই জানেন, আর সেলিম জানেন, আর কেহ যদি জানে ত সে এই লৎফ-উন্নিসা ; দেখি, লৎফ-উন্নিসা কি কিছ: প্রকাশ করিবে না ?” মতিবিবির ও মেহের-উন্নিসার মন জানিবার চেষটা । মেহের-উন্নিসা তৎকালে ভারতবর্ষের মধ্যে প্রধানা রপবতী এবং গণবতী বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন। বস্তুতঃ তােদশি রমণী ভূমন্ডলে অতি অলপই জন্মগ্রহণ করিয়াছে। সৌন্দয্যে ইতিহাসক নীত্তিতা সত্ৰীলোকদিগের মধ্যে তাঁহার প্রাধান্য ঐতিহাসিকমাত্ৰেই সস্বীকার করিয়া থাকেন। কোন প্রকার বিদ্যায় তাৎকালিক পরষদিগের মধ্যে বড় অনেকে তাঁহার অপেক্ষা শ্রেষ্পাঠ ছিলেন না। নিত্য-গীতে মেহের-উন্নিসা আদিবতীয়া ; কবিতা-রচনায় বা চিত্রলিখনেও তিনি সকলের মন মগধ করিতেন। তাঁহার সরস কথা তাঁহার সৌন্দৰ্য্য অপেক্ষাও মোহময়ী ছিল। মতিও এ সকল গণে হীনা ছিলেন না। আদ্য এই দলই চমৎকারিণী পরস্পরের মন জানিতে উৎসক হইলেন। মেহের-উন্নিসা খাস কামরায় বসিয়া তসবীর লিখিতেছিলেন। মীত মেহের-উন্নিসাব পঠের নিকট বসিয়া চিত্রলিখন দেখিতেছিলেন, এবং তাম্বল চক্ৰবাণ করিতেছিলেন। মেহেরউন্নিসা জিজ্ঞাসা করিলেন, “চিত্র কেমন হইতেছে ?’ মতিবিবি উত্তর করিলেন, “তোমার চিত্র য্যেরপ হইয়া থাকে, তাহাই হইতেছে। অন্য কেহ যে তোমার ন্যায় চিত্রনিপণ নহে, ইহাই দঃখের বিষয়।” মেহে। তাই যদি সত্য হয় ত দঃখের বিষয় কেন ? ম। অন্যের তোমার মত চিত্র-নৈপণ্য থাকিলে তোমার এ মাখের আদশ রাখিতে পারিত। মেহে। কবরের মাটিতে মাখের আদশ থাকিবে। মেহের-উন্নিসা। এই কথা কিছ গাম্ভীয্যের সহিত কহিলেন। ম। ভগিনি ! আজি মনের সাফত্তির এত অলপতা কেন ? মেহে। সফিত্তির অলপতা কই ? তবে যে তুমি আমাকে কাল প্রাতে ত্যাগ করিয়া যাইবে, তাহাঁই বা কি প্রকারে ভুলিব ? আর দই দিন থাকিয়া তুমি কেনই বা চরিতাৰ্থ না করিবে ? ম। সমুখে কার অসাধা ? সাধ্য হইলে আমি কেন। যাইব ? কিন্তু আমি পরের অধীন : কি প্রকারে থাকিব ? মেহে। আমার প্রতি তোমার তা ভালবাসা আর নাই, থাকিলে তুমি কোন মতে রহিয়। যাইতে । আসিয়াছ ত রহিতে পার না কেন ? ম। আমি ত সকল কথাই বলিয়াছি। আমার সহোদর মোগলসৈন্যে মনসবদার-তিনি উড়িষ্যার পাঠানদিগের সহিত যন্ধে আহত হইয়া সঙ্কটাপন্ন হইয়াছিলেন। আমি তাঁহারই বিপদসংবাদ পাইয়া বেগমের অনমতি লইয়া তাঁহাকে দেখিতে আসিয়াছিলাম। উড়িষ্যায় অনেক বিলম্ব করিয়াছি, এক্ষণে আর বিলম্পব করা উচিত নহে। তোমার সহিত অনেক দিন দেখা হয় নাই, এই জন্য দই দিন রহিয়া গেলাম। মেহে। বেগমের নিকট কোন দিন পৌছিবার কথা স্বীকার করিয়া আসিয়াছ ? মতি বঝিলেন, মেহের-উন্নিসা ব্যওগ করিতেছেন। মাডিজত অথচ মৰ্ম্মভেদী ব্যঙেগ মেহের-উন্নিসা যেরপে নিপণ, মতি সেরাপ নহেন। কিন্তু অপ্ৰতিভ হইবার লো : ও নহেন। তিনি উত্তর করিলেন, “দিন নিশিচত করিয়া তিন মাসের পথ যাতায়াত করা কি সম্পভব ? কিন্তু অনেক কাল বিলম্ব করিয়াছি; আরও বিলম্বে অসন্তোষের কারণ জন্মিতে পারে।” মেহের-উন্নিসা নিজ ভুবনমোহন হাসি হাসিয়া কহিলেন, “কাহার অসন্তোষের আশঙ্কা করিতেছ? যদুবরাজের, না। তাঁহার মহিষীর ?” حسم মতি কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া কহিলেন, “এ লজজাহীনাকে কেন লতাজা দিতে চাও ? উভয়েরই অসন্তোষ হইতে পারে।” মে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি,-তুমি স্বয়ং বেগম নাম ধারণ করিতেছি না কেন ? শনিয়াছিলাম, কুমার সেলিম তোমাকে বিবাহ করিয়া খাসবেগম করিবেন; তাহার কত দাির ? ম। আমি ত সহজেই পরাধীনা। যে কিছ স্বাধীনতা আছে, তাহা কেন নম্ৰাট করিব ? UU