পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकब झष्नाबव्ी নবকুমার ইহা দেখিয়া গাত্ৰোত্থান করিলেন ; লৎফ-উন্নিসা তাঁহার বস্ত্রাগ্র ধােত করিলেন। নবকুমার ঈষৎ বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “কি, বল না ?” লৎফ-উন্নিসা কহিলেন, “তুমি কি চাও? পথিবীতে কিছ কি প্রার্থনীয় নাই ? ধন, সম্পদ, মান, প্রণয়, রঙ্গ, রহস্য পথিবীতে যাহাকে যাহাকে সখি বলে, সকলই দিব; কিছই তাহার প্রতিদান চাহি না ; কেবল তোমার দাসী হইতে চাহি। তোমার যে পত্নী হইব, এ গৌরব চাহি না, কেবল দাসী!” নবকুমার কহিলেন, “আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, ইহজন্মে। দরিদ্র ব্রাহ্মণই থাকিব। তোমার দত্ত ধনসম্পদ লইয়া যবনৰীজার হইতে পারিব না।” যবনীজার! নবকুমার এ পয্যন্ত জানিতে পারেন নাই যে, এই রমণী তাঁহার পত্নী। লৎফউন্নিসা অধোবদনে রহিলেন। নবকুমার তাঁহার হস্ত হইতে বস্ত্রাগ্রভাগ মক্ত করিলেন। লৎফ-উন্নিসা আবার তাঁহার বস্ত্রাগ্র ধরিয়া কহিলেন, “ভাল, সে যাউক। বিধাতার যদি সেই ইচ্ছা, তবে চিত্তব্বত্তিসকল অতল জলে ডুবাইব । আর কিছর চাহি না, এক একবার তুমি এই পথে যাইও ; দাসী ভাবিয়া এক একবার দেখা দিও, কেবল চক্ষঃপরিতৃপিত করিব।” নবী। তুমি যবনী—-পরস্ত্রী।--তোমার সহিত। এরােপ আলাপেও দোষ। তোমার সহিত আর আমার সাক্ষাৎ হইবে না। ক্ষণেক নীরব। লৎফ-উন্নিসার হৃদয়ে ঝটিকা বহিতেছিল। প্রস্তরময়ী মাত্তি বৎ নিসপন্দ রহিলেন । নবকুমারের বস্ত্রাগ্রভাগ ত্যাগ করিলেন। কহিলেন, “যাও ।” নবকুমার চলিলেন। দই চারি পদ চলিয়াছেন মাত্র, সহসা লৎফ-উন্নিসা বাতোন্মলিত পাদপের ন্যায় তাহার পদতলে পড়িলেন। বাহ সুলতায় চরণযগল বদ্ধ করিয়া কাতরস্বরে কহিলেন, “নিন্দয়া! আমি তোমার জন্য আগ্রার সিংহাসন ত্যাগ করিয়া আসিয়াছি। তুমি আমায় ত্যাগ করিও না।” নবকুমার কহিলেন, “তুমি আবার আগ্রাতে ফিরিয়া যাও, আমার আশা ত্যাগ কর।” “এ জন্মে নহে।” লৎফ-উন্নিসা তীরবৎ দাঁড়াইয়া উঠিয়া সদপে কহিলেন, “এ জন্মে তোমার আশা ছাড়িব না।” মস্তক উন্নত করিয়া, ঈষৎ বঙ্কিম গ্রীবাভঙ্গি করিয়া, নবকুমারের মািখপ্রতি আনিমিষ আয়ত চক্ষ স্থাপিত করিয়া, রাজরাজমোহিনী দাঁড়াইলেন। যে অনবনমনীয় গকিব হৃদয়গিনিতে গলিয়া গিয়াছিল, আবার তাহার জ্যোতিঃ সাফারিল ; যে অজেয় মানসিক শা ভারতরাজ্য-শাসনকলপনায় ভীত হয় নাই, সেই শক্তি আবার প্রণয়দকবল দেহে সঞ্চারিত হইল । ললাটদেশে ধমনী সকল সফীত হইয়া বামণীয় রেখা দেখা দিল ; জ্যোতিৰ্ম্মময় চক্ষঃ রবিকরামখরিত সমদ্রবারিবৎ ঝলসিতে লাগিল; নাসারন্ধু কাঁপিতে লাগিল। স্রোতোবিহারিণী রাজহংসী যেমন গতিবিরোধীর প্রতি গ্রীবাভাণ্ডিগ করিয়া দাঁড়ায়, দলিতফণা ফাণিনী যেমন ফণা তুলিয়া দাঁড়ায়, তেমনি উন্মাদিনী যবনী মস্তক তুলিয়া দাঁড়াইলেন। কহিলেন, “এ জন্মে না। তুমি আমারই হইবে।” সেই কুপিতফণিনীমত্তি প্রতি নিরীক্ষণ করিতে করিতে নবকুমার ভীত হইলেন। লৎফউন্নিসার অনিৰ্ব্বচনীয় দেহমহিমা এখন যেরপে দেখিতে পাইলেন, সেরাপ আর কখনও দেখেন নাই। কিন্তু সে শ্ৰী বজসচক বিদ্যুতের ন্যায় মনোমোহিনী; দেখিয়া ভয় হইল। নবকুমার চলিয়া যান, তখন সহসা তাঁহার আর এক তেজোময়ী মাত্তি মনে পড়িল ৷ এক পিন নবকুমার তাঁহার প্রথমা পত্নী পদ্মাবতীর প্রতি বিরক্ত হইয়া তাঁহাকে শয়নাগার হইতে বহি শুকৃতা করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। দাবাদশবৰ্ষণীয়া বালিকা তখন সদপে তাঁহার দিকে ফিরিয়া দাঁড়াইয়াছিল; এমনই তাহার চক্ষঃ প্ৰদীপত হইয়াছিল; এমনই ললাটে রেখাবিকাশ হইয়াছিল ; এমনই নাসারন্ধ্ৰু কাঁপিয়াছিল; এমনই মস্তক হেলিয়াছিল। বহকাল সে মাত্তি মনে পড়ে নাই, এখন মনে পড়িল। অমনই সাদশ্যে অনভূত হইল। সংশয়াধীন হইয়া নবকুমার সঙ্কুচিত সবরে, ধীরে ধীরে কহিলেন, “তুমি কে ?” যবনীর নয়নতারা আরও বিসফারিত হইল। কহিলেন, “আমি পদ্মাবতী।” উত্তর প্রতীক্ষা না করিয়া লৎফ-উন্নিসা সস্থানান্তরে চলিয়া গেলেন। নবকুমারও অন্যমনে কিছ শওকান্বিত হইয়া, আপনি আলয়ে গেলেন। NO CA NR