পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী দৌড়িলেন। পশ্চাতে যে আসিতেছিল, সেও যেন দৌড়িল, এমত শবদ বোধ হইল। গািহ দশুিটপাথবত্তীর্ণ হইবার পকেবই প্রচন্ড ঝটিকাবিলিট কপালকুন্ডলার মস্তকের উপর দিয়া প্ৰধাবিত হইল। ঘন ঘন গম্ভীর মেঘশবদ এবং অশনিসম্পপাতশবদ হইতে লাগিল। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকিতে লাগিল। মনুষলধারে বিভিন্ট পড়িতে লাগিল। কপালকুণডলা কোন ক্ৰমে আত্মরক্ষা করিয়া গহে আসিলেন। প্রাণ্ডগণভূমি পার হইয়া প্রকোঠমধ্যে উঠিলেন। দবার তাঁহার জন্য খোলা ছিল। দবার রদ্ধ করিবার জন্য প্রাঙ্গণের দিকে সম্মখে ফিরিলেন। বোধ হইল, যেন প্রাঙ্গণভূমিতে এক দীঘাকার পরষ দাঁড়াইয়া আছে। এই সময়ে একবার বিদ্যুৎ চমকিল। একবার বিদ্যুতেই তাহাকে চিনিতে পারিলেন। সে সাগরতীর প্রবাসী সেই কাপালিক। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ স্বপেন "I had a dream, which was not all a dream." Вутон কপালকুণডলা ধীরে ধীরে দাবার রদ্ধ করিলেন, ধীরে ধীরে শয়নাগারে আসিলেন, ধীরে ধীরে পালঙ্কে শয়ন করিলেন । মনানুষ্যহাদয় অনন্ত সমদ্র, যখন তদনুপরি ক্ষিপত বায়গণ সমর করিতে থাকে, কে তাহার তরঙ্গমালা গণিতে পারে ? কপালকুণডলাব হৃদয়সমতুন্দ্রে যে তরঙ্গমালা উৎক্ষিপত হইতেছিল, কে তাহা গণিবে ? সে রাত্রে নবকুমার হৃদয়বেদনায় অন্তঃপরে আইসেন নাই। শয়নাগারে একাকিনী কপালকুন্ডলা শয়ন করিলেন, কিন্তু নিদ্ৰা আসিল না। প্রবলবায়তাড়িত বারিধারা পরিসঞ্চিত জটাজটবোল্টিত সেই মখমন্ডল অন্ধকার মধ্যেও চতুদিকে দেখিতে লাগিলেন। কপালকুন্ডলা পাকবািবত্তান্ত সকল আলোচনা করিয়া দেখিতে লাগিলেন। কাপালিকের সহিত যেরােপ আচরণ করিয়া তিনি চলিয়া আসিয়াছিলেন, তাহা সমরণ হইতে লাগিল; কাপালিক নিবিড় বনমধ্যে যে সকল পৈশাচিক কাৰ্য্য করিতেন, তাহা স্মরণ হইতে লাগিল; তৎকৃত ভৈরবীপজা, নবকুমারের বন্ধন, এ সকল মনে পড়িতে লাগিল। কপালকুণডলা শিহরিয়া উঠিলেন । আদাকার রাত্রের সকল ঘটনাও মনোমধ্যে আসিতে লাগিল। শ্যামার ওষধি-কামনা, নবকুমারের নিষেধ, তাঁহার প্রতি কপালকুণডলার তিরস্কার, তৎপরে অরণ্যের জ্যোৎস্যনাময়ী শোভা, কাননতলে অন্ধকার, সেই অরণ্যমধ্যে যে সহচর পাইয়াছিলেন, তাহার। ভীমকান্তগণময় রােপ ; সকলই মনে পড়িতে লাগিল। পািব্ব দিকে উষার মকুটজ্যোতিঃ প্রকটিত হইল ; তখন কপালকুণডলার অলপ তন্দ্ৰা আসিল । সেই অপ্রগাঢ় নিদ্রায় কপালকুন্ডলা স্বপন দেখিতে লাগিলেন। তিনি যেন সেই পৰ্ব্ববাদ ভট সাগরহািদয়ে তরণী আরোহণ করিয়া যাইতেছিলেন। তরণী সশোভিতা; তাহাতে বসন্ত রঙেগর পতাকা উড়িতেছে; নাবিকেরা ফলের মালা গলায় দিযা বাহিতেছে। রাধা-শ্যামের অনন্ত প্রণয়গীত করিতেছে। পশ্চিমগগন হইতে সৰ্য্যে সবণ ধারা বশিষ্ট কবিতেছে। সবণ ধারা পাইয়া সমদ্র হাসিতেছে ; আকাশমন্ডলে মেঘগণ সেই সবর্ণবন্টিতে ছাটাছটি করিয়া স্নান করিতেছে। অকস্মাৎ রাত্ৰি হইল, সায্য কোথায় গেল। সাবণ মেঘসকল কোথায় গেল। নিবিড়নীল কাদম্বিনী আসিয়া আকাশ ব্যাপিয়া ফেলিল। আর সমন্দ্রে দিক নিরাপণ হয় না। নাবিকেরা তাঁর ফিরাইল। কোন দিকে বাহিবে, স্থিরতা পায় না। তাহারা গীত বন্ধ করিল, “লার মালা সকল ছিড়িয়া ফেলিল; বসন্ত রঙ্গের পতাকা। আপনি খসিয়া জলে পড়িয়া গেল। বাতাস উঠিল ; বক্ষেপ্ৰমাণ তরঙ্গ উঠিতে লাগিল ; তরঙ্গমধ্য হইতে একজন জটাজটধারী প্রকান্ডকায় পরিষ আসিয়া কপালকুন্ডলার নৌকা বাম হস্তে তুলিয়া সমদ্রমধ্যে প্রেরণ করিতে উদ্যত হইল। এমত সময়ে সেই ভীমকান্তশ্ৰীময় ব্রাহ্মণবেশধারী আসিয়া তাঁর ধরিয়া রহিল। সে কপালকুন্ডলাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমায় রাখি, কি নিমগন করি ? " অকস্মাৎ কপালকুন্ডলার মািখ হইতে বাহির হইল, “নিমগন কর।” ব্ৰাহ্মণবেশী নৌকা ছাড়িয়া দিল। তখন নৌকাও শবদময়ী হইল, কথা কহিয়া উঠিল। নৌকা কহিল, “আমি আর এ ভার বাহিতে পারি না, আমি পাতালে। প্রবেশ করি।” ইহা কহিয়া নৌকা তাহাকে জলে নিক্ষিপত করিয়া পাতালে প্রবেশ করিল। ঘৰ্ম্মমাক্তকলেবরা হইয়া কপালকুন্ডলা সাবপেনাথিত হইলে চক্ষরন্মেীলন করিলেন; দেখিলেন, Տ Գ Ե`