পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডলা প্রভাত হইয়াছে—গবাক্ষ মক্ত রহিয়াছে; তন্মধ্য দিয়া বসন্তবায়স্রোতঃ প্রবেশ করিতেছে; মন্দান্দোলিত বাক্ষশাখায় পক্ষিগণ কাজন করিতেছে। সেই গবাক্ষের উপর কতকগলি মনোহর বন্য লতা সবাসিত কুসমসহিত দলিতেছে। কপালকুন্ডলা নারীস্বভাব্যবশতঃ লতাগলি গছাইয়া লইতে লাগিলেন। তাহা সশঙখল করিয়া বাঁধিতে বাঁধিতে তাহার মধ্য হইতে একখানি লিপি বাহির হইল। কপালকুন্ডলা অধিকারীর ছাত্র; পড়িতে পারিতেন। নিম্নোক্ত মত পাঠ করিলেন “অদ্য সন্ধ্যার পর কল্য রাত্রের ব্রাহ্মণকুমারের সহিত সাক্ষাৎ করিবা। তোমার নিজ সম্পকীয় নিতান্ত প্রয়োজনীয় যে কথা শনিতে চাহিয়াছিলে, তাহা শনিবে। অহং ব্রাহ্মণবেশী।” চতুর্থ পরিচ্ছেদ ঃ কৃতসঙেকতে -I will have grounds More relative than this.' Hamlet কপালকুন্ডলা সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অনন্যচিন্ত হইয়া কেবল ইহাই বিবেচনা করিতেছিলেন যে, ব্রাহ্মণবেশীর সহিত সাক্ষাৎ বিধেয় কি না। পতিব্ৰতা যাবতীর পক্ষে রাত্রিকালে নিজনে অপরিচিত পরিষের সহিত সাক্ষাৎ যে অবিধেয়, ইহা ভাবিয়া তাঁহার মনে সঙেকাচ জন্মে নাই; তদিবষয়ে তাঁহার সিথরসিদ্ধান্তই ছিল যে, সাক্ষাতের উদ্দেশ্য দােষ্য না হইলে এমত সাক্ষাতে দোষ নাই—পর্যুষে পরিষে বা সত্ৰীলোকে সত্ৰীলোকে যেরপে সাক্ষাতের অধিকার, সত্ৰী পরিষে সাক্ষাতের উভয়েরই সেইরােপ অধিকার উচিত বলিয়া তাঁহার বোধ ছিল; বিশেষ, ব্রাহ্মণবেশী পরিষ কি না, তাহাতে সন্দেহ । সতরাং সে সঙ্কোচ অনাবশ্যক, কিন্তু এ সাক্ষাতে মঙ্গল, কি অমঙ্গল জন্মিবে, তাহাই অনিশ্চিত বলিয়া কপালকুণডলা এত দীর সঙ্কোচ করিতেছিলেন। প্রথমে ব্রাহ্মণবেশীর কথোপকথন, পরে কােপালিকের দর্শন, তৎপরে স্বপন, এই সকল হেতুতে কপালকুণডলার নিজ অমঙ্গল যে আদরবত্তীর্ণ, এমত সন্দেহ প্রবল হইয়াছিল। সেই অমঙ্গল যে কাপালিকের আগমনসহিত সক্ষবন্ধমিলিত, এমত সন্দেহও আমলক বোধ হইল না। এই ব্রাহ্মণবেশীকে তাহারই সহচর বোধ হইতেছে—অতএব তাহার সহিত সাক্ষাতে এই আশঙ্কার বিষয়ীভূত অমঙ্গলে পতিতও হইতে পারেন। সে ত সপভট বলিয়াছে যে, কপালকুন্ডলা সম্পবন্ধেই পরামর্শ হইতেছিল। কিন্তু এমতও হইতে পারে যে, ইহা হইতে তন্নিরাকরণ-সমুচনা হইবে। ব্রাহ্মণকুমার এক ব্যক্তির সহিত গোপনে পরামর্শ করিতেছিল, সে ব্যক্তিকে এই কাপালিক বলিয়া বোধ হয়। সেই কথাপকথনে কাহারও মাতৃত্যুর সঙ্কলাপ প্রকাশ পাইতেছিল; নিতান্ত পক্ষে চিরনিব্বাসন। সে কাহার ? ব্রাহ্মণবেশী ত সপভট বলিয়াছেন যে, কপালকুন্ডলা সম্পবন্ধেই কুপরামর্শ হইতেছিল। তবে তাঁহারই মাতৃত্যু বা তাহারই চিরনিব্বাসন কল্পনা হইতেছিল। হইলই বা ! তার পর সর্বপন-সে। সাবপেইেনর তাৎপৰ্য্য কি ? সাবপেন ব্রাহ্মণবেশী মহাবিপত্তিকালে আসিয়া তাঁহাকে রক্ষা করিতে চাহিয়াছিলেন, কায্যেও তাঁহাই ফলিতেছে। ব্রাহ্মণবেশী সকল কথা ব্যক্ত করিতে চাহিতেছেন। তিনি স্বপেন বলিয়াছেন, “নিমগন কর।” কায্যেও কি সেইরাপ বলিবেন ? না—না—ভক্তবৎসলা ভবানী অনগ্ৰহ করিয়া স্বপেন তাঁহার 'রক্ষাহেতু উপদেশ দিয়াছেন, ব্রাহ্মণবেশী আসিয়া তাঁহাকে উদ্ধার করিতে চাহিয়াছেন; তাঁহার সাহায্য ত্যাগ করিলে নিমগন হইবেন। অতএব, কপালকুন্ডলা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করাই স্থির করিলেন। বিজ্ঞ ব্যক্তি এইরুপ সিদ্ধান্ত করিতেন। কি না, তাহাতে সন্দেহ; কিন্তু বিজ্ঞ ব্যক্তির সিদ্ধান্তের সহিত আমাদিগের সংশ্রব নাই। কপালকুন্ডলা বিশেষ বিজ্ঞ ছিলেন না—সতরাং বিজ্ঞের ন্যায় সিদ্ধান্ত করিলেন না। কোঁত, হলপরবশ রমণীর ন্যায় সিদ্ধান্ত কবিলেন, ভীমকান্তর পরাশিদর্শনলোলািপ যাবতীর ন্যায় সিদ্ধান্ত করিলেন, নৈশবনভ্রমণবিলাসিনী সন্ন্যাসিপালিতার ন্যায় সিদ্ধান্ত করিলেন, ভবানীভক্তিভাব বিমোহিতার ন্যায় সিন্ধান্ত করিলেন, জব্বলন্ত বহিৰ্নশিখায় পতনোন্মািখ পতঙ্গের ন্যায় সিদ্ধান্ত করিলেন। SCN