পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপতম পরিচ্ছেদ ঃ সপত্নীসক্ষভাষে "Be at peace; it is your sister that addresses you. Requite Lucretia's love." Lucretia কপালকুন্ডলা গহ হইতে বহি গতি হইয়া কাননাভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। প্রথমে ভগনগহমধ্যে গেলেন । তথায় ব্রাহ্মণকে দেখলেন। যদি দিনমান হইত, তবে দেখিতে পাইতেন যে, তাঁহার মািখকান্তি অত্যন্ত মলিন হইয়াছে। ব্ৰাহ্মণবেশী কপালকুণডলাকে কহিলেন যে, “এখানে কাপালিক আসিতে পারে, এখানে কোন কথা অবিধি। সন্থানান্তরে আইসি।” বনমধ্যে একটি অলপ্যােয়ত সন্থান ছিল, তাহার চতুৰ্ভপাশে বা বাক্ষরাজি ; মধ্যে পরিস্কার ; তথা হইতে একটি পথ বাহির হইয়া গিয়াছে। ব্রাহ্মণবেশী কপালকুণডলাকে তথায় লইয়া গেলেন। উভয়ে উপবেশন করিলে ব্রাহ্মণবেশী কহিলেন, “প্রথমতঃ আত্মপরিচয় দিই। কত দ’র আমার কথা বিশ্ববাসযোগ্য, তাহা আপনি বিবেচনা করিয়া লইতে পরিবে। যখন তুমি স্বামীর সঙ্গে হিজলী প্রদেশ হইতে আসিতেছিলে, তখন পথিমধ্যে রজনীযোগে এক যবনকন্যার সহিত সাক্ষাৎ হয়। তোমার কি তাহা মনে পড়ে ?” কপালকুণডলা কহিলেন, “যিনি আমাকে অলঙ্কার দিয়াছিলেন ?” ব্রাহ্মণবেশধারিণী কহিলেন, “আমিই সেই।” কপালকুন্ডলা অত্যন্ত বিস্মিতা হইলেন। লৎফ-উন্নিসা তাঁহার বিস্ময় দেখিয়া কহিলেন, “আরও বিসময়ের বিষয় আছে—আমি তোমার সপত্নী।” কপালকুন্ডলা চমৎকৃত হইয়া কহিলেন, “সে কি ?” লৎফ-উন্নিসা তখন আন পকিবািক আত্মপরিচয় দিতে লাগিলেন। বিবাহ, জাতিভ্ৰংশ, স্বামী কর্তৃক ত্যাগ, ঢাকা, আগ্রা, জাহগিীর, মেহের-উন্নিসা, আগ্রাত্যাগ, সপতগ্রামে বাস, নবকুমারের সহিত সাক্ষাৎ, নবকুমারের ব্যবহার, গত দিবস প্রদোষে ছদ্মবেশে কাননে আগমন, হোমকারীর সহিত সাক্ষাৎ, সকলই বলিলেন। এই সময় কপালকুণডালা জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি অভিপ্ৰায়ে আমাদিগের বাটীতে ছদ্মবেশে আসিতে বাসনা করিয়াছিলে ?” লৎফ-উন্নিসা কহিলেন, “তোমার সহিত স্বামীর চিরবিচ্ছেদ জন্মাইবার অভিপ্ৰায়ে।” কপালকুন্ডলা চিন্তা করিতে লাগিলেন। কহিলেন, “তাহা কি প্রকারে সিদ্ধ করিতে ?” লৎফ-উন্নিসা। আপাততঃ তোমার সতীত্বের প্রতি স্বামীর সংশয় জন্মাইয়া দিতাম। কিন্তু সে কথায় আর কাজ কি, সে পথ ত্যাগ করিয়াছি। এক্ষণে তুমি যদি আমার পরামর্শমতে কাজ কর, তবে তোমা হইতেই আমার কামনা সিদ্ধ হইবে।--অথচ তোমার মঙ্গল সাধন হইবে। কপ। হোমকারীর মখে তুমি কাহার নাম শানিয়াছিলে ? ল। তোমারই নাম । তিনি তোমার মঙ্গল বা অমঙ্গল কামনায় হোম করেন, ইহা জানিবার জন্য প্ৰণাম করিয়া তাঁহার নিকট বসিলাম। যতক্ষণ না তাঁহার ব্রুিয়া সম্পপন্ন হইল, ততক্ষণ তথায় বসিয়া রহিলাম। হেমান্তে তোমার নামসংযন্ত হোমের অভিপ্রায় ছলে জিজ্ঞাসা করিলাম। কিয়ৎক্ষণ তাঁহার সহিত কথোপকথন করিয়া জানিতে পারিলাম যে, তোমার অমঙগলসাধনই হোমের প্রয়োজন। আমারও সেই প্রয়োজন । ইহাও তাঁহাকে জানাইলাম । তৎক্ষণাৎ পরস্পরের সহায়তা করিতে বাধ্য হইলাম। বিশেষ পরামশ জন্য, তিনি আমাকে ভগন গহমধ্যে লইয়া গেলেন। তথায় আপন মনোগত ব্যক্ত করিলেন। তোমার মাতুৰ্য্যই তাঁহার অভীষট। তাহাতে আমার কোন ইন্ট নাই। আমি ইহজন্মে কেবল পাপাই করিয়াছি, কিন্তু পাপের পথে আমার এত দর অধঃপাত হয় নাই যে, আমি নিরপরাধে বালিকার মাতু্যসাধন করি। আমি তাহাতে সম্পমতি দিলাম না। এই সময়ে তুমি তথায় উপস্থিত হইয়াছিলে । বোধ করি, কিছ শনিয়া থাকিবে। কপা। আমি ঐরােপ বিতকাই শনিয়াছিলাম। ল। সে ব্যক্তি আমাকে অবোধ অজ্ঞান বিবেচনা করিয়া কিছ: উপদেশ দিতে চাহিল। শেষটা কি দাঁড়ায়, ইহা জানিয়া তোমায়া উচিত সংবাদ দিব বলিয়া তোমাকে বনমধ্যে অন্তরালে রাখিয়া গেলাম। S b፥ S)