পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भभाब्जिनौं হেমচন্দ্ৰ আশ্রম হইতে নিগৰ্ভত হইলেন। ঘাটে আসিয়া ক্ষদ্র তরণী আরোহণ করিলেন। যে দিবতীয় ব্যক্তি নৌকায় ছিল, তাহাকে বলিলেন, “দিগিবজয়! নৌকা ছাড়িয়া দাও।” দিগিবজয় বলিল, “কোথায় যাইব ?" হেমচন্দ্ৰ বলিলেন, “যেখানে ইচ্ছ—যমালয় ।” দিগিবজয় প্রভুর সর্বভাব বঝিত। অসফটস্বরে কহিল, “সেটা অলপ পথ।” এই বলিয়া সে তরণী ছাড়িয়া দিয়া স্রোতের প্রতিকালে বাহিতে লাগিল। হেমচন্দ্র অনেকক্ষণ নীরবে থাকিয়া শেষে কহিলেন, “দর হউক! ফিরিয়া চল ।” দিগিবজয় নৌকা ফিরাইয়া পনেরপি প্ৰয়াগের ঘাটে উপনীত হইল। হেমচন্দ্ৰ লম্পেফ তীরে অবতরণ করিয়া পানববার মাধবাচায্যের আশ্রমে গেলেন। তাঁহাকে দেখিয়া মাধবাচায্য কহিলেন, “পােনকবার কেন আসিয়াছ ?” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “আপনি যাহা বলিবেন, তাহাই স্বীকার করিব। মণিালিনী কোথায় আছে আজ্ঞা করবেন।” মা। তুমি সত্যবাদী—আমার আজ্ঞােপালন করিতে স্বীকার করিলে, ইহাতেই আমি সন্তুষ্ট হইলাম। গৌড়নগরে এক শিষ্যের বাটীতে মণিালিনীকে রাখিয়াছি। তোমাকেও সেই প্রদেশে যাইতে হইবে। কিন্তু তুমি তাহার সাক্ষাৎ পাইবে না। শিষ্যের প্রতি আমার বিশেষ আজ্ঞা আছে যে, যত দিন মণালিনী তাঁহার গহে থাকিবে, তত দিন সে পরিষান্তরের সাক্ষাৎ না পায়। হে। সাক্ষাৎ না পাই, যাহা বলিলেন, ইহাতেই আমি চরিতাৰ্থ হইলাম। এক্ষণে কি কায্য করিতে হইবে অনািমতি করন। মা। তুমি দিল্লী গিয়া যবনের মন্ত্রণা কি জানিয়া আসিয়াছ ? হে। যবনেরা বঙ্গবিজয়ের উদ্যোগ করিতেছে। অতি ত্বরায় বখতিয়ার খিলিজি সেনা লেইষা, গৌড়ে যাত্ৰা করিবে । মাধবাচায্যের মািখ হৰ্ষ প্রফতুল্ল হইল। তিনি কহিলেন, “এত দিনে বিধাতা বঝি। এ দেশের প্রতি সদয় হইলেন।” হেমচন্দ্ৰ একতানমনে মাধবাচায্যের প্রতি চাহিয়া তাঁহার কথার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। মাধবাচায্য বলিতে লাগিলেন, “কিয় মাস পর্য্যন্ত আমি কেবল গণনায় নিযক্ত আছি, গণনায় যাহা ভবিষ্যৎ বলিয়া প্ৰতিপন্ন হইয়াছে, তাহা ফালিবার উপক্ৰম হইয়াছে।” হে । কি প্রকার ? মা। গণিয়া দেখিলাম যে, যবনসাম্রাজ্য-ধরংস বঙগরাজ্য হইতে আরম্ভ হইবে। হে। তাহা হইতে পারে। কিন্তু কতকালেই বা তাহা হইবে ? আর কাহা কৰ্ত্তক ? মা। তাহাও গণিয়া স্থির করিয়াছি। যখন পশ্চিমদেশীয় বণিক বঙ্গরাজ্যে অস্ত্ৰধারণ করিবে, তখন যাবনরাজ্য উৎসন্ন হইবেক । হে। তবে আমার জয়লাভের কোথা সম্পভাবনা ? আমি ত বণিক নহি । মা। তুমিই বণিক।। মথ রায় যখন তুমি মণিালিনীর প্রয়াসে দীঘকাল বাস করিয়াছিলে, তখন তুমি কি ছলনা করিয়া তথায় বাস করিতে ? হে। আমি তখন বণিক বলিয়া মথরায় পরিচিত ছিলাম বটে। মা। সতরাং তুমিই পশ্চিমদেশীয় বণিক। গৌড়রাজ্যে গিয়া তুমি অস্ত্ৰধারণ করিলেই যবিননিপাত হইবে। তুমি আমার নিকট প্রতিশ্রত হও যে, কাল প্রাতেই গৌড়ে যাত্রা করিবে। যে পয্যন্ত সেখানে না, যবনের সহিত যাদ্ধ করা, সে পৰ্য্যন্ত মণিালিনীর সহিত, সাক্ষাৎ কবিবে না। হেমচন্দ্ৰ দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “তাঁহাই স্বীকার করিলাম। কিন্তু একা যাদ্ধ করিয়া কি করিব ?” মা। গৌড়েশ্ববরের সেনা আছে। হে। থাকিতে পারে-—সে বিষয়েও কতক সন্দেহ; কিন্তু যদি থাকে, তবে তাহারা আমার অধীন হইবে কেন ? মা। তুমি আগে যাও। নবদ্বীপে আমার সহিত সাক্ষাৎ হইবে। সেইখানেই গিয়া ইহার বিহিত উদ্যোগ করা যাইবে। গৌড়েশবিরের নিকট আমি পরিচিত আছি। “যে আজ্ঞা” বলিয়া হেমচন্দ্ৰ প্ৰণাম করিয়া বিদায় হইলেন। যতক্ষণ তাঁহার বীরমাত্তি নয়নগোচর হইতে লাগিল, আচাৰ্য্য ততক্ষণ তৎপ্রতি আনিমেষলোচনে চাহিয়া রহিলেন। আর ܠ ܬܠ