পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী গিরিজায়া গায়িতে লাগিল, “মনে করি, কলে ফিরি, বাহি তরণী ধৰ্মীরি ধৰ্মীরি কলেতে কণ্টক-তর বেষ্টিত ভুজঙেগ।“ মণোলিনী কহিলেন, “তবে ডুবিয়া মাির না কেন ?” গিরিজায়া কহিল, “মারি তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু’ বলিয়া আবার গায়িল, “যাহারে কান্ডারী করি, সাজাইয়া দিন, তবী সে কভু না দিল পদ তরণীর অঙ্গে৷” মণোলিনী কহিলেন, “গিরিজায়া, এ কোন অপ্রেমিকের গান - “ গি। কেন ? ম। আমি হইলে তরী ডুবাই । গি। সাধা করিয়া ? ম। সাধ করিয়া। গি। তবে তুমি জলের ভিতর রত্ন দেখিয়াছ। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ ঃ বাতায়নে হেমচন্দ্র কিছ দিন উপবনগহে বাস করিলেন। জনাদনের সহিত প্রত্যহ সাক্ষাৎ হইত; কিন্তু ব্রাহ্মণের বধির তাপ্রযওঁ ইণ্ডিগতে আলাপ হইত। মাত্র। মনোরমার সহিতও সৰ্ব্বদা সাক্ষাৎ হইত, মনোরমা কখন তাঁহার সহিত উপযাচিক হইয়া কথা কহিতেন, কখন বা বাক্যব্যয় না। করিয়া সথানান্তরে চলিয়া যাইতেন । বস্তুতঃ মনোবামার প্রকৃতি তাঁহার পক্ষে অধিকতর বিস্ময়জনক বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। প্রথমতঃ তাঁহার বয়ঃক্রম দািরন মেয়, সহজে তাঁহাকে বালিকা বলিয়া বোধ হইত, কিন্তু কখন কখন মনোরমাকে অতিশয় গাম্ভীৰ্য্যশালিনী দেখিতেন। মনোরমা কি অদ্যাপি কুমারী ? হেমচন্দ্র এক দিন কথোপকথনচ্ছলে মনোরমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মনোরমা, তোমার শবশঙ্কুরবাড়ী কোথা ?” মনোরমা কহিল, ”বলিতে পারি না।” আর এক দিন জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “মনোরমা, তুমি কয় বৎসরের হইয়াছ ?” মনোরমা তাহাতেও উত্তর দিয়াছিলেন, “‘বলিতে পারি না।” মাধবাচায্য হেমচন্দ্রকে উপবনে সস্থাপিত করিয়া দেশপয্যটনে যাত্ৰা করিলেন। তাঁহার অভিপ্ৰায় এই যে, এ সময় গোড়দেশীয় অধীন রাজগণ যাহাতে নবদ্বীপে সসৈন্য সমবেত হইয়া গৌড়েশবিরেব আনকল্য করেন, তদিবষয়ে তাহাদিগকে প্রবত্তি দেন। হেমচন্দ্ৰ নবদ্বীপে তাঁহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। কিন্তু নিম্ভকৰ্ম্মে দিন ধাপন ক্লেশকর হইয়া উঠিল । হেমচন্দ্র বিরক্ত হইলেন। এক একবার মনে হইতে লাগিল যে, দিগ্বিজয়কে গহরক্ষাব্য রাখিয়া অশািব লইয়া একবার গৌড়ে গমন করেন। কিন্তু তথায় মণিালিনীর সাক্ষাৎ লাভ করিলে তাঁহার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইবে, বিনা সাক্ষাতে গৌড়যাত্রায় কি ফলোদয় হইবে ? এই সকল আলোচনায় যদিও গৌড়যাত্রায় হেমচন্দ্র নিরস্ত হইলেন, তথাপি অন্যদিন মণালিনী।চিন্তায় হৃদয় নিযক্ত থাকিত। একদা প্রদোষকালে তিনি শয়নকক্ষে, পৰ্যাণ্ডেকাপরি শয়ন করিয়া মণিালিনীর চিন্তা কবিতেছিলেন। চিন্তাতেও হৃদয় সংখলাভ করিতেছিল। মন্ত বাতায়নপথে হেমচন্দ্ৰ প্ৰকৃতিব শোভা নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। নুবীন শরদ দেয়। রজনী চন্দ্রিকাশালিনী, আকাশ নিমািল, বিস্তৃত৷ নক্ষত্রখচিত, কচিৎ সতরপরমপরাবিন্যস্ত শোবতাম-বদমালায় বিভূষিত। বাতায়নপথে আদরবত্তিানী ভাগীরথীও দেখা যাইতেছিল ; ভাগীরথী বিশালে।ারসী, বহকেদর বিসপিণী, চন্দ্রকর-প্রতিঘাতে উ^জবলতরঙ্গিণী, দারপ্রান্তে ধর্মময়ী, নববারি-সমাগম-প্ৰহাদিনী । নবব্যারি-সমাগমজনিত কল্লোল হেমচন্দ্ৰ শনিতে পাইতেছিলেন। বাতায়নপথে বায়, প্রবেশ করিতেছিল। বায়, গঙ্গাতরঙ্গে নিক্ষিপত জলকণা-সংস্পশে শীতল, নিশা সমাগমে প্রফতুল্ল বন্যকুসমসংস্পর্শে সগন্ধি; চন্দ্রকারপ্রতিঘাতী-শ্যামোক্তিজবল বােক্ষপত্র বিধতা করিয়া, নদীতীর বিরাজিত কাশকুসম আন্দোলিত করিয়া, বায় বাতায়নপথে প্রবেশ করিতেছিল। হেমচন্দ্র বিশেষ প্রীতিলাভ কবিলেন। অকস্মাৎ বাতায়নপথ অন্ধকার হইল-চন্দ্রালোকের গতি রোধ হইল। হেমচন্দ্র বাতায়নসন্নিধি একটি মনীষামন্ড দেখিতে পাইলেন। বাতায়ন ভূমি হইতে কিছ: উচ্চ—এজন্য কাহারও NR NO O