পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মণোলিনী তোমাকে অন্য এক কায্য সাধন করিতে হইবে। যবন-সেনাপতির ইচ্ছা, আদ্য রাত্ৰিতে তিনি মগধরাজপত্রের ছিন্ন মস্তক দশন করেন। তাহা এখনই সংগ্ৰহ করিবে।” শান্ত। কায্য নিতান্ত সহজ নহে। রাজপত্র পিপড়ে মাছি ন'ন । পশতু। আমি তোমাকে এক যন্ধে যাইতে বলিতেছি না। কতকগলি লোক লইয়া তাঁহার বাড়ী আক্ৰমণ করিবে । শান্ত । লোকে কি বলিবে ? পাশ। লোকে বলিবো, দস্যতে তাঁহাকে মারিয়া গিয়াছে। শান্ত । যে আজ্ঞা, আমি চলিলাম। পশপতি শান্তশীলকে পরস্কার দিয়া বিদায্য কবিলেন। পরে গহ্যাভ্যন্তরে যথা বিচিত্র সক্ষম কারকোৰ্য্য-খচিত মন্দিরে অস্টভূজা মাত্তি স্থাপিত আছে, তথায় গমন করিয়া প্রতিমাগ্রে সাম্রােটাণ্ডেগ প্ৰণাম করিলেন। গাত্ৰোখান করিয়া যক্ত করে ভক্তিভাবে ইন্সটদেবীর সন্তুতি করিয়া কহিলেন, “জননি । বিশ্বব্যপালিনি!! আমি অকল সাগরে ঝাঁপ দিলাম—দেখিও মা ! আমায় উদ্ধার করিও । আমি জননীস্বরাপা জন্মভূমি কখন দেবদেবষী যবনকে বিক্রয় করিব না। কেবলমাত্র এই আমার পাপভিসন্ধি যে, অক্ষম প্রাচীন রাজার স্থানে আমি রাজা হইব। যেমন কণ্টকের দবারা কণাটক উদ্ধার করিয়া পরে উভয় কণাটককে দরে ফেলিযা দেয়, তেমনি যবন-সহায়তায় রাজা লাভ করিয়া রাজ্য-সহায়তায় যবনকে নিপাত করিব । ইহাতে পাপ কি মা ? যদি ইহাতে পাপ হয়, যােবজজীবন প্রজার সখান আঠান করিয়া সে পাপের প্রায়শিচত্ত করিব । জগৎপ্ৰসবিনি! প্ৰসন্ন হইয়া আমার কামনা সিদ্ধ কর।” এই বলিয়া পশপতি পনেরপি সাংস্টাঙ্গে প্ৰণাম করিলেন। প্ৰণাম করিয়া গাত্ৰোথান করিলেন—শয্যাগহে যাইবার জন্য ফিরিয়া দেখিলেন—অপব্ব দশন— সম্মখে দাবারদেশ ব্যাপাত করিয়া, জীবনময়ী প্রতিমারপিণী তৰণী দাঁডিাইয়া রহিয়াছে। পশপতি প্রথমে চমকিত হইলেন ।--শিহবিয়া উঠিলেন। পরীক্ষণেই উচ্ছৰাসোন্মখ সমদ্রবারিবৎ আনন্দে সাফীত হইলেন । তরণী বীণানিন্দিত স্বরে কহিলেন, “পশপতি ।” পশপতি দেখিলেন---মনোরম। অভটম পরিচ্ছেদ ঃ মোহিনী সেই রত্নপ্রদীপদীপত দেবীমন্দিরে, চন্দ্ৰলোকবিভাসিত দাবারদেশে, মনোরমাকে দেখিয়। পশপতির হৃদয় উচ্ছৰাসোন্মখ সমদ্রের ন্যায় স্ফীত হইয়া উঠিল। মনোরমা নিতান্ত খবাকৃতি নহে, তবে তাঁহাকে বালিকা বলিয়া বোধ হইত, তাহার হেতু এই যে, মািখকান্তি অনিব্বচনীয় কোমল, অনিববচনীয় মধর, নিতান্ত বালিকা বয়সের ঔদােয্যবিশিস্ট: সতরাং হেমচন্দ্ৰ যে তাঁহােব পঞ্চদশ বৎসর বয়ঃক্ৰম অনানুভব করিয়াছিলেন, তাহা অন্যায় হয় নাই। মনোরমার বয়ঃক্রম যথার্থ পঞ্চদশ, কি ষোড়শ, কি তদাধিক, কি তন্নান, তাহা ইতিহাসে লেখে না, পাঠক মহাশয় স্বয়ং সিদ্ধান্ত করবেন। মনোবামার বয়স যতই হউক না কেন, তাঁহার রােপরাশি অতুল—চক্ষতে ধরে না। বাল্যে কৈশোরে, যৌবনে, সর্ববর্তীকালে সে রােপরাশি দলভ। একে বর্ণ সোণার চাঁপা, তাহাতে ভুজঙ্গশিশশ্রেণীর ন্যায় কুণ্ডিত অলকশ্রেণী মখখানি বেড়িয়া থাকে ; এক্ষণে ব্যাপীজলসিঞ্চনে সে কেশ ঋজ হইয়াছে; আব্দধচন্দ্রাকৃত নিৰ্ম্মমল ললাট, ভ্রমর-ভর-সপন্দিত নীলপশুপতুিল্য। কৃষ্ণতার, চঞ্চল, লোচনষগল; মহম্মম হাঃ আকুণ্ডন-বিস্ফারণ-প্রবত্ত রন্ধ্রুযক্ত সংগঠন নােসা; অধরেীsঠ যেন প্রাতঃশিশরে সিক্ত প্ৰাতঃসংয্যের কিরণে প্রোন্দিভন্ন রক্তকুসমাবলীর সতরফগল তুল্য; কপোল যেন চন্দ্রকরোক্তজবল, নিতান্ত সিথর, গঙ্গামাব বিস্তারবৎ প্রসন্ন ; শাবকহিংসাশঙ্কায় উত্তেজিত৷ হংসীর ন্যায় গ্রীবা--বেণী বাঁধিলেও সে গ্রীবােব উপরে অবদধ ক্ষমূদ্র কুণ্ডিত কেশসকল আসিয়া কেলি করে। দিবরাদ-রদ যদি কুসমকোমল হাইত, কিমবা, চম্পক যদি গঠনোপযোগী কাঠিন্য পাইত, কিমবা, চন্দ্রকিবণ যদি শরীববিশিস্ট হইত, তবে তাহাতে সে বাহযোিগল গড়িতে পারা যাইত,- সে হৃদয় কেবল সেই হৃদয়েই গড়া যাইতে পারিত। এ সকলই অন্য সন্দেরীর আছে । ২১৭