পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शंभाव्नी হেমচন্দ্ৰ গিরিজায়ার সম্মখে উপস্থিত হইলেন। ব্যস্ত সত্বরে কহিলেন, “গিরিজায়া! এ কি, গিরিজায়া! তুমি এখানে ? তুমি এখানে কেন ? তুমি এ দেশে কবে আসিলে ?” গিরিজায়া কহিল, “আমি এখানে অনেক দিন আসিয়াছি।” এই বলিয়া আবার গায়িতে লাগিল, “কিবা কাননীবল্লারী, গল বেঢ়ি বাঁধই, নবীন তামালে দিব ফাঁস।” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তুমি এ দেশে কেন এলে ?” গিরিজায়া কহিল, “ভিক্ষা আমার উপজীবিকা। রাজধানীতে অধিক ভিক্ষা পাইব বলিয়া ऊानिशाछि—- কিবা কাননীবল্লারী, গল বেঢ়ি বাঁধই নবীন তামালে দিব ফাঁস।” হেমচন্দ্র গীতে কৰ্ণপাত না করিয়া কহিলেন, “মণিালিনী কেমন আছে; দেখিয়া আসিয়াছ ?” গিরিজায়া গায়িতে লাগিল, “নহে-—শ্যাম শ্যাম শ্যাম শ্যাম, শ্যাম নাম জপায়, ছার তন করব বিনাশ ।” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তোমার গীত রাখা। আমার কথার উত্তর দাও । মণিালিনী কেমন আছে, দেখিয়া আসিয়াছ ?” গিরিজায়া কহিল, “মণিালিনীকে আমি দেখিয়া আসি নাই। এ গীত আপনার ভাল না। লাগে, অন্য গীত গায়িতেছি— “এ জনমের সঙেগ কি সই জনমের সাধ ফরাইবে। কিবা জন্ম জন্মান্তরে, এ সাধ মোর পরাইবে৷” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “গিরিজায়া, তোমাকে মিনতি করিতেছি—গান রােখ, মণিালিনীর সংবাদ বলা ৷” গি । কি বলিব ? হে। মণিালিনীকে কেন দেখিয়া আইস নাই ? গি। গৌড়নগরে তিনি নাই। হে । কেন ? কোথায় গিয়াছেন ? গি। মাথারায় । হে। মাথারায় ? মথ রায় কাহার সঙ্গে গেলেন ? কি প্রকারে গেলেন ? কেন গেলেন ? গি। তাঁহার পিতা কি প্রকারে সন্ধান পাইয়া লোক পাঠাইয়া লইয়া গিয়াছেন। বঝি তাঁহার বিবাহ উপস্থিত। বঝি বিবাহ দিতে লইয়া গিয়াছেন। হে। কি ? কি করিতে ? গি। মণিালিনীর বিবাহ দিতে তাঁহার পিতা তাঁহাকে লইয়া গিয়াছেন। হেমচন্দ্র মািখ ফিরাইলেন। গিরিজায়া সে মািখ দেখিতে পাইল না ; আর যে হেমচন্দ্রের স্কন্ধস্থ ক্ষতিমখ ছটিয়া বন্ধনবস্ত্র রক্তে পলাবিত হইতেছিল, তাহাও দেখিতে পাইল না। সে পৰ্ব্ববর্তমত গায়িল, “বিধি তোরে সাধি শািন, জন্ম। যদি দিবে পািন, • আমারে আবার যেন, রমণী জনম দিবে। লাজ ভয় তেয়াগিব, এ সাধ মোর পরাইব সাগর ছোচে রতন নিব, কণ্ঠে রাখবে নিশি দিবে।” হেমচন্দ্র মািখ ফিরাইলেন। বলিলেন, “গিরিজায়া, তোমার সংবাদ শােভ। উত্তম হইয়াছে।” এই বলিয়া হেমচন্দ্ৰ গহমধ্যে পািনঃ প্রবেশ করিলেন। গিরিজায়ার মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। গিরিজায়া মনে করিয়াছিল, মিছা করিয়া মণিালিনীর বিবাহের কথা বলিয়া সে হেমচন্দ্রের পরীক্ষা করিয়া দেখিবো। মনে করিয়াছিল যে, মণিালিনীর বিবাহ উপস্থিত শনিয়া হেমচন্দ্র বড় কাতর হইবে, বড় রাগ করিবে। কৈ, তা ত কিছই হইল না। তখন গিরিজায়া কপালে করাঘাত করিয়া ভাবিল, “হায় কি করিলাম! কেন অনৰ্থক এ মিথ্যা রটনা করিলাম! ՀՀԳ