পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী নীলাম্ব অধিকতর নীলোক্তজবল হইয়া প্রভাসিত হইতেছিল। তদনুপরি সম্পন্দনরহিত কুসমশ্রেণী আদাধৰ প্ৰস্ফটিত হইয়া নীল জলে প্রতিবিম্বিত হইয়াছিল; চারি দিকে বক্ষমালা নিঃশব্দে পরস্পরশিলাস্ট হইয়া আকাশের সীমা নিন্দেশ করিতেছিল; কচিৎ দই একটি দীঘ শাখা উদ্ধের্বাথিত হইয়া আকাশপটে চিত্রিত হইয়া রহিয়াছিল। তলস্থ অন্ধকারপঞ্জমধ্য হইতে নবসফটকুসমসৌরভ আসিতেছিল। গিরিজায়া সোপানোপরি উপবেশন করিল। গিরিজায়া প্রথমে ধীরে ধীরে, মদ, মদ, গীত আরম্ভ করিল— যেন নবশিক্ষিতা বিহঙ্গী প্রথমোদ্যমে সপভাট গান করিতে পারিতেছে না। ক্ৰমে তাহার সম্বর সপভটতালাভ করিতে লাগিল—— ক্ৰমে ক্ৰমে উচ্চতর হইতে লাগিল, শেষে সেই সব্বাঙ্গসমাপণ। তানলয়বিশিস্ট কমনীয় কন্ঠধবনি পঙ্করিণী, উপবন, আকাশ বিপ্ৰলত করিয়া সবগচ্যুত স্বরসারিত্তর ওগসর্ববােপ মণিালিনীর কণে প্রবেশ করিতে লাগিল। গিরিজায়া গায়িল :– “ পরাণ না গেলো । যো দিন পেখন সই যম নাকি তীরে, গােয়ত নাচত সন্দের ধীরে ধীরে, ওহি পর পিয়া সই, কাহে কালো নীরে, জীবন না গেলো ? ফিরি ঘর আয়ন, না কহন বোলি, তিতায়ন আখিনীরে আপনা অাঁচোলি, রোই রোই পিয় সই কাহে লো পরাণি, তইখন না গেলো ? শােনন, শ্রবণ-পথে মধাের বাজে, রাধে রাধে রাধে রাধে বিপিন মাঝে, যব শািননা লাগি সই, সো মধ্যর বোলি, জীবন না গেলো ? ধায়ন, পিয়া সই, সোহি উপকলে, লটায়ন কাদি সই শ্যামপদমলে, সোহি পদমলে রাই, কাহে লো হামারি, २ादू० ब्Nा (८ड्z०ा ?' গিরিজায়া গায়িতে গায়িতে দেখিলেন, তাঁহার সম্মখে চন্দ্রের কিরণোপরি মনষ্যের ছায়া পড়িয়াছে। ফিরিয়া দেখিলেন, মণিালিনী দাড়াইয়া আছেন । তাহার মািখপ্ৰতি চাহিয়া দেখিলেন, মণিালিনী কাঁদিতেছেন। গিরিজায়া দেখিয়া হযান্বিত হইলেন,-—তিনি বঝিতে পারলেন যে, যখন মণালিনীর চক্ষতে জল আসিয়াছে—তখন তাঁহার ক্লেশের কিছ, শমতা হইয়াছে । ইহা সকলে বঝে নামনে করে, “কই, ইহার চক্ষতে তা জল দেখিলাম না, তবে ইহার কিসের দঃখ ?” যদি ইহা সকলে বঝিােত, সংসারের কত মমি পীড়াই না জানি নিবারণ হইত। কিয়াৎক্ষণ উভয়েই নীরব হইয়া রহিল। মণিালিনী কিছল বলিতে পারেন না ; গিরিজায়াও কিছ জিজ্ঞাসা করিতে পারে না। পরে মণিালিনী কহিলেন, “গিরিজায়া, আর একবার তোমাকে যাইতে হইবে।” গি । আবার সে পাষণেীডর নিকট যাইব কেন ? ম। পাষণড বলিও না। হেমচন্দ্ৰ ভ্ৰান্ত হইয়া থাকিবেন—এ সংসারে অভ্রান্ত কে ? কিন্তু হেমচন্দ্ৰ পাষণ্ড নহেন। আমি স্বয়ং তাঁহার নিকট এখনই যাইব—তুমি সঙ্গে চল । তুমি আমাকে ভগিনীর অধিক স্নেহ করা--তুমি আমার জন্য না করিয়াছ কি ? তুমি কখনও আমাকে অকারণে মনঃপীড়া দিবে না-কখনও আমার নিকট এ সকল কথা মিথ্যা করিয়া বলিবে না, ইহা আমি নিশ্চিত জানি। কিন্তু তাই বলিয়া, আমার হেমচন্দ্র আমাকে বিনাপরাধে ত্যাগ করিলেন, ইহা তাঁহার মাখে না। শনিয়া কি প্রকারে অন্তঃকরণকে স্থির করিতে পারি? যদি তাঁহার নিজ মাখে শনি যে, তিনি মণিালিনীকে কুলটা ভাবিয়া ত্যাগ করলেন, তবে এ প্রাণ বিসঙ্জন করিতে পারিব। ミ○8