পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, भाभाविनी হেমচন্দ্রের শরীর কণ্টকিত হইল। এই মণিালিনীকে কুলটা বলিয়া অবমানিত করিয়াছেন ? তিনি পনেরপি গিরিজায়াকে কহিলেন, “মাণালিনী কোথায় আছেন ?” গি। তিনি আপনার নিকট জন্মের শোধ বিদায় লইতে আসিয়াছেন। সরোবরতীরে দাঁড়াইয়া আছেন। আপনি আসন। এই বলিয়া গিরিজায়া চলিয়া গেল। হেমচন্দ্ৰ তােহর পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন । গিরিজায়া বাপনীতীরে, যথায় মণিালিনী সোপানোপরি বসিয়া ছিলেন, তথায় উপনীত হইল। হেমচন্দ্রও তথায় আসিলেন। গিরিজায়া কহিল, “ঠাকুরাণী ! উঠ। রাজপত্র আসিয়াছেন।” মণিালিনী উঠিয়া দাঁড়াইলেন। উভয়ে উভয়ের মািখ নিরীক্ষণ করিলেন। মণিালিনীব দস্টিলোপ হইল ; অশ্রািজলে চক্ষ পরিয়া গেল। অবলম্বনশাখা ছিন্ন হইলে যেমন শাখাবিলম্বিনী লতা ভূতলে পড়িয়া যায়, মণিালিনী সেইরােপ হেমচন্দ্রের পদমলে পতিত হইলেন। গিরিজায়া অন্তরে গেল । দশম পরিচ্ছেদ ঃ এত দিনের পর ! হেমচন্দ্র মণালিনীকে হস্তে ধরিযা তুলিলেন। উভয়ে উভয়ের সম্পমখীন হইয়া দাঁড়াইলেন। এত কাল পরে দই জনের সাক্ষাৎ হইল। যে দিন প্রদোষকালে, যমনার উপকলে নৈদাঘানিলসন্তাড়িত বকুলমলে দাঁড়াইয়া, নীলামবময়ীর চঞ্চল-তরঙ্গ-শিরে নক্ষত্ররাশিমার প্রতিবিম্ব নিরীক্ষণ করিতে করিতে উভয়ে উভয়ের নিকট সজলনয়নে বিদায় গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহার পর এই সাক্ষাৎ হইল। নিদাঘের পর বর্ষা গিয়াছে, বর্ষার পর শরৎ যায়, কিন্তু ইহাদিগের হৃদয়মধ্যে যে কত দিন গিয়াছে, তাহা কি ঋতুগণনায় গণিত হইতে পারে ? সেই নিশীথ সময়ে স্বচ্ছসলিলা বাপবীতীরে, দই জনে পরস্পর সম্পমখীন হইয়া দাঁড়াইলেন। চারি দিকে সেই নিবিড় বন, ঘনবিন্যস্ত লতাম্রগ বিশোভী বিশাল বিটপীসকল দভিটপথ রদ্ধ করিয়া দাঁড়াইয়াছিল; সম্মখে নীলনীরদখন্ডবৎ দীঘিকা শৈবাল-কুমদ-কহয়ার সহিত বিস্তৃত রহিয়াছিল। মাথার উপরে চন্দ্রনক্ষত্ৰজলদ সহিত আকাশ আলোকে হাসিতেছিল। চন্দ্রালোক আকাশে, বক্ষশিরে, লতাপল্লবে, বাপীসোপানে, নীলজলে—সব্বত্ৰ হাসিতেছিল। প্রকৃতি সপন্দহীনা, ধৈর্য্যমযী । সেই ধৈর্য্যময়ী প্রকৃতির প্রাসাদমধ্যে মণালিনী হেমচন্দ্র ম্যুখে মখে দাঁড়াইলেন । ভাষায় কি শব্দ ছিল না ? তাঁহাদিগের মনে কি বলিবার কথা ছিল না ? যদি মনে বলিবার কথা ছিল, ভাষায় শবদ ছিল, তবে কেন ইহারা কথা কহে না ? তখন চক্ষর দেখাতেই মন উন্মত্ত —কথা কহিবে কি প্রকারে? এ সময়ে কেবলমাত্র প্রণয়ীর নিকটে অবস্থিতিতে এত সখি যে, হৃদয়মধ্যে অন্য সখের স্থান থাকে না। যে সে সখভোগ করিতে থাকে, সে আর কথার সখ <*aNI <f>CK NI | সে সময়ে এত কথা বলিবার থাকে যে, কোন কথা আগে বলিব, তাহা কেহ স্থির করিতে পারে না । মন:ষ্যভাষায় এমন কোন শব্দ আছে যে, সে সময়ে প্রযক্ত হইতে পারে ? তাঁহারা পরস্পরের মািখ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। হেমচন্দ্র মণিালিনীর সেই প্ৰেমময় মািখ। আবার দেখিলেন-হৃষীকেশবাক্যে প্রত্যয় দরি হইতে লাগিল। সে গ্রন্থের ছত্ৰে ছত্রে ত পবিত্রতা লেখা আছে। হেমচন্দ্র তাঁহার লোচনাপ্রতি চাহিয়া রহিলেন ; সেই অপব্ব আয়তনশালী, ইন্দীবর-নিন্দী, অন্তঃকরণের দাপািণরােপ চক্ষপ্ৰতি চাহিয়া রহিলেন-- তাহা হইতে কেবল প্রেমাশ্র বাহিতেছে -- সে চক্ষ যাহার, সে কি অবিশবাসিনী ! হেমচন্দ্র প্রথমে কথা কহিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাণালিনি ! কেমন আছ ?” মণিালিনী উত্তর করিতে পারিলেন না। এখনও তাঁহার চিত্ত শান্ত হয় নাই; উত্তরের উপক্ৰম করিলেন, কিন্তু আবার চক্ষ জলে ভাসিয়া গেল। কন্ঠ রন্ধ হইল, কথা সরিল না। হেমচন্দ্র আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কেন আসিয়াছ ?” মণিালিনী তথাপি উত্তর করিতে পারিলেন না। হেমচন্দ্র তাঁহার হসন্ত ধারণ করিয়া সোপানোপরি বসাইলেন, স্বয়ং নিকটে বসিলেন, মণিালিনীর যে কিছ, চিত্তের স্থিরতা ছিল, R\OQ