পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ঃ বিনা সীতার হার পশপতি উচ্চ অট্টালিকায় বহ ভূত্য সমভিব্যাহারে বাস করিতেন বটে, কিন্তু তাঁহার পরী কানন হইতেও অন্ধকার। গহ যাহাতে আলো হয়, সত্ৰী পত্র পরিবার—এ সকলই তাঁহার গাহে ছিল না। আদ্য শান্তশীলের সহিত কথোপকথনের পর, পশপতির সেই সকল কথা মনে পড়িল । মনে ভাবিলেন, “এত কালের পর বঝি। এ অন্ধকার পরেী আলো হইল—যদি জগদম্বা অন্যকলা হয়েন, তবে মনোরম। এ অন্ধকার ঘচাইবে ।” এই রােপ ভাবিতে ভাবিতে পাশপাতি, শয়নের পাবে অস্টভূজাকে নিয়মিত প্ৰণাম-বন্দনাদির জন্য দেবীমন্দিরে প্রবেশ করিলেন। প্রবেশ করিয়া দেখিলেন যে, তথায় মনোরমা বসিয়া আছে। পশপতি কহিলেন, “মনোরমা, কখন আসিলে ?” মনোরমা পজাবিশিস্ট পক্ষপগলি লইয়া বিনাস ত্রে মালা গাঁথিতেছিল। কথার কোন উত্তর দিল না। পাশপতি কহিলেন, “আমার সঙ্গে কথা কও । যতক্ষণ তুমি থােক, ততক্ষণ সকল যন্ত্রণা বিস্মত হই।” মনোরমা মািখ তুলিয়া চাহিযা দেখিল। পাশপাতির মািখপ্রতি চাহিয়া রহিল, ক্ষণেক পরে কহিল, “আমি তোমাকে কি বলিতে আসিয়াছিলাম, কিন্তু তাহা আমার মনে হইতেছে না।” পশপতি কহিলেন, “তুমি মনে কর। আমি অপেক্ষা করিতেছি।” পশতুপতি বসিয়া রহিলেন, মনোরমা মালা গাঁথিতে লাগিল । অনেকক্ষণ পরে পাশপাতি কহিলেন, “আমারও কিহু বলিবার আছে, মনোযোগ দিযা শান । আমি এ বয়স পৰ্য্যন্ত কেবল বিদ্যা উপাত্তজনা করিয়াছি—বিষয়ালোচনা করিয়াছি, অথোেপাজুজন করিয়াছি। সংসারধৰ্ম্মম করি নাই। যাহাতে অন্যরাগ, তাহাই করিয়াছি, দারপরিগ্রহে অন্যরাগ নাই, এজন্য তাহা করি নাই। কিন্তু যে পয্যন্ত তুমি আমার নয়নপথে আসিয়াছ, সেই পয্যন্ত মনোরমালাভ আমার একমাত্র ধ্যান হইয়াছে। সেই লাভের জন্য এই নিদারণ ব্লতে প্রবত্ত হইয়াছি। যদি জগদীশবরী অননুগ্রহ করেন, তবে দই চারি দিনের মধ্যে রাজ্যলাভ করিব এবং তোমাকে বিবাহ করিব। ইহাতে তুমি বিধবা বলিয়া যে বিঘর, শাস্ত্রীয় প্রমাণের দ্বারা আমি তাহার খণডন করিতে পারিব। কিন্তু তাহাতে দিবতীয় বিঘা। এই যে, তুমি কুলীনকন্যা, জনান্দন শৰ্ম্মমা কুলীনশ্রেশ্ৰষ্ঠ, আমি শ্রোত্ৰিয ।” মনোরমা। এ সকল কথায় কর্ণপাত করিতেছিল কি না সন্দেহ। পশপতি দেখিলেন যে, মনোরমা চিত্ত হারাইয়াছে। পাশপাতি, সরলা অবিকৃত বালিকা মনোরমাকে ভালবাসিতেন,-- প্রৌঢ়া তীক্ষািববুদ্ধিশালিনী মনোরমাকে ভয় করিতেন। কিন্তু অদ্য ভাবান্তরে সন্তুস্ট হইলেন না। তথাপি পনের দাম করিয়া পশতুপতি কহিলেন, “কিন্তু কুলারীতি ত শাস্ত্ৰমািলক নহে, কুলনাশে ধৰ্ম্ম নাশ বা জাতিভ্ৰংশ হয় না। তাহার অজ্ঞাতে যদি তোমাকে বিবাহ করিতে পারি, তবে ক্ষতি কি ? তুমি সম্মত হইলেই, তাহা পাবি। পরে তোমার পিতামহ জানিতে পারিলে বিবাহ ত ফিরিবে না।” মনোরম কোন উত্তর করিল না। সে সকল শ্রবণ করিয়াছিল কি না সন্দেহ। একটি কৃষ্ণবর্ণ মাজাের তাহার নিকটে আসিয়া বসিয়াছিল, সে সেই বিনাস ত্রের মালা তাহার গলদেশে পরাইতেছিল। পরাইতে মালা খলিয়া গেল। মনোরম তখন আপন মস্তক হইতে কেশগচ্ছ ছিন্ন করিয়া, তৎসত্রে আবার মালা গাঁথিতে লাগিল। পশপতি উত্তর না পাইয়া নিঃশব্দে মালাকুসমমধ্যে মনোরমার অন্যপম অঙ্গলির গতি মগধলোচনে দেখিতে লাগিলেন। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ বিহঙগী পিঞ্জরে পশপতি মনোরমার বন্ধিপ্ৰদীপ জবালিবার অনেক যত্ন করিতে লাগিলেন, কিন্তু ফলোং - পত্তি কঠিন হইল। পরিশেষে বলিলেন, “মনোরমা, রাত্রি অধিক হইয়াছে। আমি শয়নে যাই।” S8O