পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, মণিালিনী আকারেঙিগত দেখিয়া নবদ্বীপবাসীরা ধন্যবাদ করিতে লাগিল। তাহাদিগের শরীর আয়ত, দীঘ অথচ পল্ট; তাহাদিগের বর্ণ তপতকাণ8নসন্নিভ; তাহাদিগের মখমন্ডল বিস্তৃত, ঘনকৃষ্ণশমিশ্ররাজিবিভূষিত; নয়ন প্রশস্ত, জবালাবিশিস্ট। তাহাদিগের পরিচ্ছদ অনৰ্থক চাকচিক্যবিবভিজাত ; তাহাদিগের যোদ্ধ বেশ ; সব্বাঙ্গ প্রহরণজালমন্ডিত, লোচনে দািঢ় প্রতিজ্ঞা। আর যে সকল সিন্ধ্যাপার-জাত অশবপঠে তাহারা আরোহণ করিয়া যাইতেছিল, তাহারাই বা কি মনোহর ! পৰ্ব্বব্যািতশিলাখন্ডের ন্যায় বহিদাকার, বিমাজিজািতদেহ, বক্রগ্রীব, বলগা-রোধ-অসহিষ্ণ, তেজোগাব্বে নিত্যশীল! আরোহীরা কিবা তচ্চালন-কৌশলী—অবলীলাক্কমে সেই রদ্ধবায়তুল্য তেজঃপ্রখর আশবসকল দমিত করিতেছে। দেখিয়া গৌড়বাসীরা বহতর প্রশংসা করিল। সপতদশ অশবারোহী দঢ় প্রতিজ্ঞায় অধরৌদ্ঠ সংশিলাস্ট করিয়া নীরবে রাজপরাভিমখে চলিল। কৌতহলবশতঃ কোন নগরবাসী কিছ, জিজ্ঞাসা করিলে, সমভিব্যাহারী একজন ভাষাজ্ঞ ব্যক্তি বলিয়া দিতে লাগিল, “ইহারা যবন রাজার দত।” এই বলিয়া ইহারা প্রান্তপাল ও কোঠ্যপালাদিগের নিকট পরিচয় দিয়াছিল—এবং পশতুপতির আজ্ঞাক্ৰমে সেই পরিচয়ে নিৰ্ব্বিবাঘের নগর মধ্যে প্রবেশ লাভ করিল। সপ্তদশ আশীবারোহী রাজদরবারে উপনীত হইল। বদ্ধ রাজার শৈথিল্যে আর পাশাপতির কৌশলে রাজপরেী প্রায় রক্ষকহীন। রাজসভা ভঙ্গ হইয়াছিল—পরীমধ্যে কেবল পৌরজন ছিল মাত্ৰ-অলপসংখ্যক দৌবারিক দাবার রক্ষা করিতেছিল। একজন দৌবারিক জিজ্ঞাসা করিল, “তোমরা কি জন্য আসিয়াছ ?” যবনের উত্তর করিল, “আমরা যবন-রাজপ্রতিনিধির দতে ; গৌড়রাজের সহিত সাক্ষাৎ করিব।” দৌবারিক কহিল, “মহারাজাধিরাজ গৌড়েশবর এক্ষণে অন্তঃপরে গমন করিয়াছেন—এখন সাক্ষাৎ হইবে না।” যবনেরা নিষেধ না শনিয়া মন্ত দবার পথে প্রবেশ করিতে উদ্যত হইল। সববাগ্রে একজন খৰ্ব্ববর্তকায়, দীঘবাহ, কুরােপ যবন। দভাগ্যবশতঃ দৌবারিক তাহার গতিরোধজন্য শালহন্সেত তাহার সম্মখে দাঁড়াইল। কহিল, “ফের - নচেৎ এখনই মারিব।” “আপনিই তবে মর!” এই বলিযা ক্ষদ্রাকার যবন দৌবারিককে নিজকরস্থিত তরবারে ছিন্ন করিল। দৌবারিক প্রাণত্যাগ করিল। তখন আপনি সওগীদিগের মািখাবলোকন করিয়া ক্ষদ্রকায় যবন কহিল, “এক্ষণে আপনি আপনি কায্য কর।“ অমানি বাক্যহীন ষোড়শ অশবারোহীদিগের মধ্য হইতে ভীষণ জয়ধনি সমথিত হইল। তখন সেই ষোড়শ যবনের কটিবন্ধ হইতে ষোড়শ আসিফলক নিন্ডেকাষিত হইল এবং অশনিসম্প্রপাতসদািশ তাহারা দৌবারিকদিগের আক্ৰমণ করিল। দৌবারিকের রণসজজায় ছিল ন!—অকস্মাৎ নিরদ্যোগে আক্ৰান্ত হইয়া আত্মরক্ষার কোন চেন্টা করিতে পারিল না-মহত্তমধ্যে সকলেই নিহত হইল। ক্ষদ্রকায় যবন কহিল, “যেখানে সাহাকে পাও, বধ করা। পদবী অরক্ষিতা—বন্ধ রাজাকে বধ কর।” তখন যবনেরা পারমধ্যে তাড়িতের ন্যায় প্রবেশ করিয়া বালবদ্ধবনিতা পৌরজন যেখানে যাহাকে দেখিল, তাহাকে আসি নবাব ছিন্নমস্তক, অথবা শলাগ্রে বিদ্ধ করিল। পৌরজন তুমলে আত্তি নাদ করিয়া ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিল। সেই ঘোর আত্তনাদ, অন্তঃপরে যথা বন্ধ রাজা ভোজন করিতেছিলেন, তথা প্রবেশ করিল। তাঁহার মািখ শঙ্কাইল । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ঘটিয়াছে——যবন আসিয়াছে ?” পলায়নতৎপর পৌরজনেরা কহিল, ‘যবন সকলকে বধ করিয়া আপনাকে বধ করিতে আসিতেছে।” কবলিত অন্নগ্রাস রাজার মািখ হইতে পড়িয়া গেল। তাঁহার শম্ভক শরীর জলস্রোতঃপ্রহিত বেতসের ন্যায় কাঁপিতে লাগিল। নিকটে রাজমহিষী ছিলেন-রাজা ভোজনপাত্রের উপর পাড়িয়া যান দেখিয়া, মহিষী তাঁহার হস্ত ধরিলেন; কহিলেন, “চিন্তা নাই--আপনি উঠােন।” এই বলিয়া তাঁহার হস্ত ধরিয়া তুলিলেন। রাজা কলের পত্তলিকার ন্যায় উঠিয়া দাঁড়াইলেন। মহিষী কহিলেন, “চিন্তা কি ? নৌকায় সকল দ্রব্য গিয়াছে; চলন, আমরা খিড়িকীদ্বার দিয়া সোণারগাঁ যাত্ৰা করি।” Ꮈ8Ꮼ