পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মণিালিনী পারে ? একটি একটি যবন মারিয়া কি করিব ? যবন যাদ্ধ করিতেছে না—যবনবধেই বা কি সখি ? বরং গহীদের রক্ষার সাহায্যে মন দেওয়া ভাল।” হেমচন্দ্র তাহাই করিতে লাগিলেন, কিন্তু বিশেষ কৃতকাৰ্য্য হইতে পারিলেন না। দইজনী যবন তাঁহার সহিত যাদ্ধ করে, অপর যবনে সেই অবসরে গহস্থাদিগের সব্বসবান্ত করিয়া চলিয়া যায়। যাহাই হউক, হেমচন্দ্র যথাসাধ্য পীড়িতের উপকার করিতে লাগিল। পথপাশেব এক কুটনীরমধ্য হইতে হেমচন্দ্ৰ আৰ্ত্তনাদ শ্রবণ করিলেন। যবনিকর্তৃক আক্ৰান্ত ব্যক্তির আত্তনাদ বিবেচনা করিয়া হেমচন্দ্ৰ গহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন গহমধ্যে যবন নাই। কিন্তু গহমধ্যে যবন দৌরাত্ম্যের চিহ্নসকল বিদ্যমান রহিযাছে। দ্রব্যাদি প্রায় কিছই নাই, যাহা আছে তাহার ভাগনাবস্থা; আর, এক ব্রাহ্মণ আহত অবস্থায়ী ভূমে পড়িয়া আৰ্ত্তনাদ করিতেছে। সে এ প্রকার গারতের আঘাত প্ৰাপত হইয়াছে যে, মতু্য আসন্ন। হেমচন্দ্রকে দেখিয়া সে যবন ভ্ৰমে কহিতে লাগিল, “আইস-প্রহার কর—শীঘ্র মরিব—মার---আমার মাথা লইয়া সেই রাক্ষসীকে দিও— আঃ প্ৰাণ যায়—জলা! জল ! কে জল দিবে ।” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তোমার ঘরে জল আছে ?” ব্ৰাহ্মণ কাতরোক্তিতে কহিতে লাগিল, “জানি না-মনে হয় না।--জলি । জল । পিশাচী !-- সেই পিশাচীর জন্য প্রাণ গেল !" হেমচন্দ্ৰ কুটনীরমধ্যে অন্বেষণ করিয়া দেখিলেন, এক কলসে জল আছে। পাত্রাভাবে পত্রপটে তাহাকে জলদান করিলেন। ব্রাহ্মণ কাঁহল, “না!—না! জল খাইব না! যবনের জল খাইব না। “ হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “আমি যবন নহি, আমি হিন্দ, আমার হাতের জল পান করিতে পার। আমার কথায় বঝিতে পারিতেছি না ?” ব্রাহ্মণ জল পান করিল। হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তোমার আর কি উপকার করিব ?” ব্ৰাহ্মণ কহিল, ‘আর কি করিবে ? আর কি ? আমি মারি ! মারি । যে মরে তাহার কি করিবে ?” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তোমার কেহ আছে ? তাহাকে তোমার নিকট রাখিয়া যাইব ?” ব্রাহ্মণ কহিলে, “আর কে-কে আছে ? ঢ়ের অাছে। তার মধ্যে সেই রাক্ষসী ! সেই রাক্ষসী – তাহাকে-বলিও—বলিও আমার অপ—অপরাধেব প্রতিশোধ হইয়াছে।” হেমচন্দ্ৰ। কে সে ? কাহাকে বলিব ? ব্রাহ্মণ কহিতে লাগিল, “কে সে পিশাচী । পিশাচী চেন না ? পিশাচী মণালিনীমণালিনী! মণিালিনী-পিশাচী!” ব্ৰাহ্মণ অধিকতর আত্তনাদ করিতে লাগিল। হেমচন্দ্র মণিালিনীর নাম শানিয়া চমকিত হইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “মণালিনী তোমার কে হয় ?” ব্রাহ্মণ কহিলেন, “মণিালিনী কে হয় ? কেহ না—আমার যাম।” হেমচন্দ্র। মণিালিনী তোমার কি করিয়াছে ? ব্রাহ্মণ। কি করিয়াছে ?—কিছ না।--আমি—আমি তার দদশা করিয়াছি, তাহার প্রতিশোধ হইল— হেমচন্দ্র। কি দন্দীশা করিয়াছ ? ব্ৰাহ্মণ। আর কথা কহিতে পারি না, জল দাও । হেমচন্দ্র পনেকবার তাহাকে জলপান করাইলেন। ব্রাহ্মণ জলপান করিয়া সিথর হইলে হেমচন্দ্ৰ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কি ?” ব্ৰা । ব্যোমকেশ । হেমচন্দ্রের চক্ষ হইতে অগিনসফিলিঙ্গ নিগতি হইল। দন্তে অধর দংশন করিলেন। করস্থ শািল দঢ়তর মন্টিবদ্ধ করিয়া ধরিলেন। আবার তখনই শান্ত হইয়া কহিলেন, “তোমার নিবাস কোথা ?” ব্রা । গৌড়-গৌড় জানি না ? মণালিনী আমাদের বাড়ীতে থাকিত । হে । তার পর ? ব্রা। তার পর-—তার পর আর কি ? তার পর আমার এই দশা-মণিালিনী পাপিষ্পাঠা; বড় নিন্দদায়—আমার প্রতি ফিরিয়াও চাহিল না। রাগ করিয়া আমার পিতার নিকট আমি তাহার 总8Q