পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী হেমচন্দ্র যখন ব্রাহ্মণমখে শনিলেন যে, মনোরমা পশপতির পত্নী।পরিচয়ে তাঁহার অনমতা হইতেছেন তখন তিনি কিছই বঝিতে পারিলেন না। দরগাদাসের সমভিব্যাহারে গঙ্গাতীরে আসিলেন। তথায় মনোরমার অতি মলিনা, উন্মাদিনী মাত্তি, তাঁহার সিথরগম্ভীর, এখনও অনিন্দ্যসািন্দর মািখকান্তি দেখিয়া তাঁহার চক্ষর জল আপনি বাহিতে লাগিল। তিনি বলিলেন, “মনোরমা ! ভগিনী ! এ কি এ ?” তখন মনোরমা, জ্যোৎসনাপ্রদীপত সরোবরতুল্য স্থির মাত্তিতে মদগম্ভীর সববে কহিলেন, “ভাই, যে জন্য আমার জীবন, তাহা আজি চরম সীমা প্ৰাপত হইয়াছে। আজ আমি আমার সবামীর সঙেগ গমন করিব।” সংক্ষেপে অন্যের শ্রবণাতীত সবরে হেমচন্দ্রের নিকট পািব্বকথার পরিচয় দিয়া “আমার স্বামী অপরিমিত ধন সঞ্চয় করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন। আমি এক্ষণে সে ধনের অধিকারিণী। আমি তাহা তোমাকে দান করিতেছি। তুমি তাহা গ্রহণ করিও । নচেৎ পাপিঠ যবনে তাহা ভোগ করিবে। তাহার অলপভাগ ব্যয় করিয়া জনাদন শম্পমাকে কাশীধামে সস্থাপন করিবে। জনাদনকে অধিক ধন দিও না। তাহা হইলে যবন কাড়িয়া লইবে । আমার দাহের পর, তুমি আমার স্বামীর গহে গিয়া অর্থের সন্ধান করিও । আমি যে সস্থান বলিয়া দিতেছি, সেই সােথান খাঁড়িলেই তাহা পাইবে। আমি ভিন্ন সে সন্থান আর কেহই জানে না।” এই বলিয়া মনোরমা যথা অৰ্থ আছে, তাহা বলিয়া দিলেন। তখন মনোরমা আবার হেমচন্দ্রের নিকট বিদায় লইলেন । জনাদনকে ও তাঁহার পত্নীকে উদ্দেশে প্ৰণাম করিয়া হেমচন্দ্রের দ্বারা তাঁহাদিগের নিকট কত স্নেহসচক কথা বলিয়া পাঠাইলেন। পরে ব্রাহ্মণের মনোরমাকে যথাশাস্ত্র এই ভীষণ ব্ৰতে ব্ৰতী করাইলেন । এবং শাস্ত্রীয় আচারান্তে, মনোরমা ব্রাহ্মণের আনীত নািতন বস্ত্র পরিধান করিলেন। নব বস্ত্র পরিধান করিয়া, দিব্য পশুপমালা কণ্ঠে পরিয়া, পশতুপতির প্রজবলিত চিতা প্ৰদক্ষিণপাকবািক, তদনুপরি আরোহণ করিলেন। এবং সহাস্য আননে সেই প্রজবলিত হতাশনরাশির মধ্যে উপবেশন করিয়া, নিদাঘসন্তপাত কুসমেকলিকার ন্যায় অনলতাপে প্রাণত্যাগ করিলেন। পরি১িাম্পঢ় হেমচন্দ্ৰ মনোরমার দত্ত ধন উদ্ধার করিয়া তাহার কিয়দংশ জনাদনকে দিয়া তহিকে কাশী প্রেরণ করিলেন। অবশিস্ট ধন গ্রহণ করা কত্তব্য কি না, তাহা মাধবাচাৰ্য্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন । মাধবাচায্য বলিলেন, “এই ধনের বলে পাশপাতিব বিনাশকারী বখতিয়ার খিলিজিকে প্রতিফল দেওয়া কত্তব্য; এবং তদভিপ্ৰায়ে ইহা গ্রহণও উচিত। দক্ষিণে, সমদ্রের উপকলে অনেক প্রদেশ জনহীন হইয়া পড়িয়া আছে। আমার পরামর্শ যে, তুমি এই ধনের দ্বারা তথায় নািতন রাজা সংস্থাপন কর, এবং তথায় যবনদমনোপযোগী সেনা সািজন কর। তৎসাহায্যে পশপতির শত্রর নিপাত সিন্দধ করিও । ” এই পরামর্শ করিয়া মাধবাচায্য সেই রাত্ৰিতেই হেমচন্দ্রকে নবদ্বীপ হইতে দক্ষিণাভিমখে যাত্রা করাইলেন। পাশাপতির ধনরাশি তিনি গোপনে সঙ্গে লইলেন। মণিালিনী, গিরিজায়া এবং দিগিবজয় তাঁহার সঙ্গে গেলেন। মাধবাচায্যও হেমচন্দ্রকে নািতন রাজ্যে সন্থাপিত করিবার জন্য তাঁহার সঙেগ গেলেন। রাজ্যসংস্থাপন অতি সহজ কাজ হইয়া উঠিল; কেন না, যবনটি। গের ধম্মদেবষিতায় পীড়িত এবং তাঁহাদিগের ভয়ে ভীত হইয়া অনেকেই তাঁহাদিগের অধিকৃত রাজ্য ত্যাগ করিয়া হেমচন্দ্রের নবস্থাপিত রাজ্যে বাস করিতে লাগিল। মাধবাচায্যের পরামশেও অনেক প্রধান ধনী ব্যক্তি তথায় আশ্রয় লইল। এই রাপে অতি শীঘ্ৰ ক্ষদ্র রাজ্যটি সৌষ্ঠবান্বিত হইয়া উঠিল। ক্ৰমে ক্ৰমে সেনা সংগ্ৰহ হইতে লাগিল। অচিরাৎ রমণীয় রাজপরেী নিশ্চিমত হইল। মণিালিনী তন্মধ্যে মহিষী হইয়া সে পরেী আলো করিলেন । গিরিজায়ার সহিত দিগ্বিজয়ের পরিণয় হইল। গিরিজায়া মণিালিনীর পরিচয্যায় নিযক্তা রহিলেন, দিগিবজয় হেমচন্দ্রের কায্য পৰ্ব্বব্যাবৎ নিৰ্ব্ববাহ করিতে লাগিলেন। কথিত আছে যে, বিবাহ অবধি এমন দিনই ছিল না, যে দিন গিরিজায়া এক আধা ঘা ঝাঁটার আঘাতে দিগিবিজয়ের ミ○ げ