পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Iবষবক্ষ নগেন্দ্র সংঘ মােথাঁকে যে পত্র লিখিয়াছিলেন, কিন্তু, দিন পরে তাহার উত্তর আসল। উত্তর এহরােপ—— “দাসী শ্ৰীচরণে কি অপরাধ করিয়াছে, তাহা বঝিতে পারিলাম না। কলিকাতায় যদি তোমার এত দিন থাকিতে হইবে, তবে আমি কেনই বা নিকটে গিয়া পদসেবা না করি ? এ বিষয়ে আমার বিশেষ মিনতি ; হাকুম পাইলেই ছটিব। “একটি বালিকা কুড়াইয়া পাইয়া কি আমাকে ভুলিলে ? অনেক জিনিষের কাঁচারই আদর। নারিকেলের ডাবই শীতল। এ অধম সত্ৰীজাতিও বঝি কেবল কাঁচামিঠে ? নাহিলে বালিকাটি পাইয়া আমায় ভুলিবে কেন ? ‘তামাসা যাউক, তুমি কি মেয়েটি একেবারে সর্বত্ব ত্যাগ করিয়া বিলাইয়া দিয়াছ ? নাহিলে আমি সেটি তোমার কাছে ভিক্ষা করিয়া লইতাম। মেয়েটিতে আমার কাজ আছে। তুমি কোন সামগ্রী পাইলে তাহাতে আমার অধিকার হওয়াই উচিত, কিন্তু আজি কালি দেখিতেছি, তোমার ভগিনীরই পরা অধিকার। “মেয়েটিতে কি কাজ ? আমি তারাচরণের সঙ্গে তাহার বিবাহ দিব। তারাচরণের জন্য একটি ভাল মেয়ে আমি কত খাজিতেছি তা ত জান। যদি একটি ভাল মেয়ে বিধাতা মিলাইয়াছেন, তবে আমাকে নিরাশ করিও না। কমল যদি ছাড়িয়া দেয়, তবে কুন্দনন্দিনীকে আসিবার সময়ে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসিও । আমি কমলকেও অন্যুরোধ করিয়া লিখিলাম। আমি গহনা গড়াইতে ও বিবাহের আর আর উদ্যোগ করিতে প্রবত্ত হইলাম। কলিকাতায় বিলম্ব করিও না, কলিকাতায় না কি ছয় মাস থাকিলে মনষ্যে ভেড়া হয়। আর যদি কুন্দকে স্বয়ং বিবাহ করিবার অভিপ্ৰায় করিয়া থােক, তবে বল, আমি বরণডালা সাজাইতে বসি।” তারাচরণ কে, তাহা পরে প্রকাশ করিব। কিন্তু সে যাই হউক, সৰ্য্যেমখীর প্রস্তাবে নগেন্দ্র এবং কমলমণি উভয়ে সম্মত হইলেন। সতরাং স্থির হইল যে, নগেন্দ্র যখন বাড়ী যাইবেন, তখন কুন্দকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইবেন। সকলে আহাদপািব্বক সম্মত হইয়াছিলেন, কমলও কন্দের জন্য কিছ গহনা গড়াইতে দিলেন। কিন্তু মনষ্যে ত চিরান্ধা! কয়েক বৎসর পরে এমত এক দিন আসিল, যখন কমলমণি ও নগেন্দ্ৰ ধল্যবলণিষ্ঠত হইয়া কপালে করাঘাত করিয়া ভাবিলেন যে, কি কুক্ষণে কুন্দনন্দিনীকে পাইয়াছিলাম! কি কুক্ষণে সৰ্য্যেমখীর পত্রে সম্মত হইয়াছিলাম! এখন কমলমণি, সৰ্য্যেমখী, নগেন্দ্র, তিন জনে মিলিত হইয়া বিষবীজ রোপণ করিলেন। পরে তিন জনেই হাহাকার করবেন। এখন বজরা সাজাইয়া, নগেন্দ্র কুন্দকে লইয়া গোবিন্দপরে যাত্ৰা করিলেন। কুন্দ সর্বপন প্রায় ভুলিয়া গিয়াছিল। নগেন্দ্রের সঙ্গে যাত্রাকালে একবার তাহা স্মরণপথে আসিল। কিন্তু নগেন্দ্রের কারণ্যেপণে মািখকান্তি এবং লোকবৎসল চরিত্র মনে করিয়া কুন্দ কিছতেই বিশ্ববাস করিল না যে, ইহাতে তাহার অনিষট হইবে। অথবা কেহ কেহ এমন পতঙগবত্ত যে, জব্বলন্ত বহিরাশি দেখিয়াও তন্মধ্যে প্রবিল্ট হয়। ষািঠ পরিচ্ছেদ ঃ তারাচরণ কবি কালিদাসের এক মালিনী ছিল, ফলে যোগাইত। কালিদাস দরিদ্র ব্রাহ্মণ, ফলের দাম দিতে পারিতেন না-তৎপরিবত্তে স্বরচিত কাব্যগলিন মালিনীকে পড়িয়া শনাইতেন। একদিন মালিনীর পকুরে একটি অপৰ্ব্ব পদ্ম ফটিয়াছিল, মালিনী তাহা আনিয়া কালিদাসকে উপহার দিল। কবি তাহার পরস্কারস্বরপ মেঘদত পড়িয়া শনাইতে লাগিলেন। মেঘদত কাব্য রসের সাগর, কিন্তু সকলেই জানেন যে, তাহার প্রথম কবিতা কয়টি কিছ. নীরস। মালিনীর ভাল লাগিল না- সে বিরক্ত হইয়া উঠিয়া চলিল। কবি জিজ্ঞাসা করিলেন, “মালিনী সখি ! চলিলে যে !" মালিনী বলিল, “তোমার কবিতায় সই কই ?” কবি। মালিনী! তুমি কখন সবগে যাইতে পরিবে না। মালিনী । কেন ? 之心9