পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ সােয্যমখনীর আকার কিঞ্চিৎ দীঘ, বাতান্দোলিত লতার ন্যায় সৌন্দৰ্য্যভারে দলিতেছে। স্বপনদন্ডটা সন্ত্রীমত্তি সন্দিরী, কিন্তু সৰ্য্যেমখনী তাহার অপেক্ষা শতগণে সন্দিরী। আর স্বপনদীস্টার বয়স বিংশতির অধিক বোধ হয় নাই—সিােয্যমখনীর বয়স প্রায় ষড়বিংশতি। সােয্যমখনীর সঙ্গে সেই মাত্তির কোন সদশ্য নাই দেখিয়া, কুন্দ সবচ্ছন্দচিত্ত হইল। সােয্যমখী কুন্দকে সাদর সম্পভাষণ করিয়া, তাঁহার পরিচয্যাৰ্থ দাসী দিগকে ডাকিয়া আদেশ করিলেন। এবং তন্মধ্যে যে প্রধানা, তাহাকে কহিলেন যে, “এই কুন্দের সঙ্গে আমি তারাচরণের বিবাহ দিব। অতএব ইহাকে তুমি আমার ভাইজের মত যত্ন করবে।” দাসী স্বীকৃত হইল। কুন্দকে সে সঙ্গে করিয়া কক্ষান্তরে লইয়া চলিল। কুন্দ এতক্ষণে তাহার প্রতি চাহিয়া দেখিল। দেখিয়া, কুন্দের শরীর কণাটকিত এবং আপাদমস্তক স্বেদাক্ত হইল। যে সস্ত্রীমত্তি কুন্দ স্বপেন মাতার অঙগালিনিন্দেশক্ৰমে আকাশপটে দেখিয়াছিল, এই দাসীই সেই পদমপলাশলোচনা শ্যামাণ্ডগৰী ! কুন্দ ভীতিবিহবলা হইয়া, মদ নিক্ষিপত শাবাসে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে গা ?” অস্টিম পরিচ্ছেদ ঃ পাঠক মহাশয়ের বড় রাগের কারণ এইখানে পাঠক মহাশয় বড় বিরক্ত হইবেন। আখ্যায়িকাগ্রন্থের প্রথা আছে যে, বিবাহটা শেষে হয়; আমরা আগেই কুন্দনন্দিনীর বিবাহ দিতে বসিলাম। আরও চিরকালের প্রথা আছে যে, নায়িকার সঙ্গে যাহার পরিণয় হয়, সে পরম সন্দর হইবে, সব্বগণে ভূষিত, বড় বীরপরিষ হইবে, এবং নায়িকার প্রণয়ে ঢল ঢলা করিবে। গরিব তারাচরণের ত এ সকল কিছই নাই--- সৌন্দয্যের মধ্যে তামাটে বর্ণ, আর খাঁদা নাক-বীৰ্য্য কেবল স্কুলের ছেলেমহলে প্রকাশ—আর প্ৰণয়ের বিষয়টা কুন্দনন্দিনীর সঙ্গে তাঁহার কত দর ছিল, বলিতে পারি না, কিন্তু একটা পোষা বানরীর সঙ্গে একটা একটি ছিল। সে যাহা হউক, কুন্দনন্দিনীকে নগেন্দ্ৰ বাটী লইয়া আসিলে তারাচরণের সঙ্গে তাহার বিবাহ হইল। তারাচরণ সন্দরী সত্ৰী ঘরে লইয়া গেলেন। কিন্তু সন্দরী সত্ৰী লইয়া তিনি এক বিপদে পড়িলেন। পাঠক মহাশয়ের সমরণ থাকিবে যে, তারাচরণের সন্ত্রীশিক্ষা ও জেনানা ভাণ্ডগার প্রবন্ধসকল প্রায় দেবেন্দ্র বাবার বৈঠকখানাতেই পড়া হইত। তৎসম্পবন্ধে তকবিতককালে মাস্টার সৰ্ব্বদাই দম্ভ করিয়া বলতেন যে, “কখন যদি আমার সময় হয়, তবে এ বিষয়ে প্রথম রিফরম করার দস্টিান্ত দেখাইব। আমার বিবাহ হইলে আমার স্ত্রীকে সকলের সম্মখে বাহির করিব।” এখন ত বিবাহ হইল—কুন্দনন্দিনীর সৌন্দয্যের খ্যাতি ইয়ার মহলে প্রচারিত হইল। সকলে প্রাচীন গীত কোট করিয়া বলিল, “কোথা রহিল সে পণ্য ? “ দেবেন্দ্ৰ বলিলেন, “কই হে, তুমিও কি ওলন্ড ফািলদের দলে ? সত্ৰীক সহিত আমাদের আলাপ করিয়া দাও না কেন ?” তারাচরণ বড় লজিজত হইলেন। দেবেন্দ্র বাবর অননুরোধ ও বাক্যযন্ত্রণা এড়াইতে পারিলেন না। দেবেন্দ্রের সঙ্গে কুন্দনন্দিনীর সাক্ষাৎ করাইতে সক্ষমত হইলেন। কিন্তু ভয় পাছে সৰ্য্যেমখনী শনিয়া রাগ করে। এইমাত টালমাটাল করিয়া বৎসরাবধি গেল। তাহার পর আর টালমাটাল চলে না দেখিয়া বাড়ী মেরামতের ওজর করিয়া কুন্দকে নগেন্দ্রের গহে পাঠাইয়া দিলেন। বাড়ী মেরামত হইল। আবার আনিতে হইল। তখন দেবেন্দ্ৰ এক দিন স্বয়ং দলবলে তারাচরণের আলিয়ে উপস্থিত হইলেন। এবং তারাচরণকে মিথ্যা দাম্ভিকতার জন্য ব্যঙ্গ করিতে লাগিলেন। তখন অগত্যা তারাচরণ কুন্দনন্দিনীকে সাজাইয়া আনিয়া দেবেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ করিয়া দিলেন। কুন্দনন্দিনী দেবেন্দ্রের সঙেগ কি আলাপ করিলা ? ক্ষণকাল ঘোমটা দিয়া দাঁড়াইয়া থাকিয়া কাঁদিয়া পলাইয়া গেল। কিন্তু দেবেন্দ্র তাঁহার নবযৌবনসঞ্চারের অপৰিব শোভা দেখিয়া মগধ হইলেন। সে শোভা আর ভুলিলেন না। ইহার কিছ দিন পরে দেবেন্দ্রের বাটীতে কোন ব্রুিয়া উপস্থিত। তাঁহার বাটী হইতে একটি বালিকা কুন্দকে নিমন্ত্ৰণ করিতে আসিল। কিন্তু সৰ্য্যেমখনী তাহা শনিতে পাইয়া নিমন্ত্রণে যাওয়া নিষেধ করিলেন। সতরাং যাওয়া হইল না। ইহার পর আর একবার দেবেন্দ্র, তারাচরণের গহে আসিয়া, কুন্দের সঙ্গে পােনরালাপ করিয়া ՀԳ Տ