পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী গেলেন। লোকমখে সহেযািমখী তাহাও শনিলেন। শনিয়া তারাচরণকে এমত ভৎসিনা করিলেন যে, সেই পৰ্যন্ত কুন্দনন্দিনীর সঙ্গে দেবেন্দ্রের আলাপ বন্ধ হইল। বিবাহের পর এইরপে তিন বৎসর কাল কাটিল। তাহার পর-কুন্দনন্দিনী বিধবা হইলেন। জবরবিকারে তারাচরণের মাতৃত্যু হইল। সৰ্য্যমখী কুন্দকে আপনি বাড়ীতে আনিয়া রাখিলেন। তারাচরণকে যে বাড়ী করিয়া দিয়াছিলেন, তাহা বেচিয়া কুন্দকে কাগজ করিয়া দিলেন। পাঠক মহাশয় বড় বিরক্ত হইলেন সত্য, কিন্তু এত দরে আখ্যায়িকা আরম্ভ হইল। এত দরে বিষবক্ষের বীজ বপন হইল। নবম পরিচ্ছেদ ঃ হরিদাসী বৈষ্ণবী বিধবা কুন্দনন্দিনী নগেন্দ্রের গহে কিছ দিন কালান্তিপাত করিল। একদিন মধ্যাহ্নের পর পৌরস্ত্রীরা সকলে মিলিত হইয়া পরাতন অন্তঃপারে বসিয়াছিল। ঈশবরাকৃপায় তাহারা অনেকগলি, সকলে সব সব মনোমত গ্রাম্যস্ত্ৰীসলভ কায্যে ব্যাপােতা ছিল। তাহদের মধ্যে অন্যতীতবাল্যা কুমারী হইতে পালিতকেশা বাষীয়সী পৰ্য্যন্ত সকলেই ছিল। কেহ চুল বাঁধাইতেছিল, কেহ চুল বাঁধিয়া দিতেছিল, কেহ মাথা দেখাইতেছিল, কেহ মাথা দেখিতেছিল, এবং “উ- উ* করিয়া উকুন মারিতেছিল, কেহ পাকা চুল তুলাইতেছিল, কেহ ধান্যহসেত তাহা তুলিতেছিল। কোন সন্দরী সর্বীয় বালকের জন্য বিচিত্ৰ কাঁথা শিয়াইতেছিলেন ; কেহ বালককে স্তন্যপান করাইতেছিলেন। কোন সন্দরী চুলের দড়ি বিনাইতেছিলেন, কেহ ছেলে ঠেঙগাইতেছিলেন, ছেলে মািখব্যাদান করিয়া তিনগ্রামে সপ্তসরে রোদন করিতেছিল। কোন রােপসী কাপেট বানিতেছিলেন ; কেহ থাবা পাতিয়া তাহা দেখিতেছিলেন। কোন চিত্ৰকুশলা কাহারও বিবাহের কথা মনে করিয়া পিাড়িতে আলেপনা দিতেছিলেন, কোন সদ্যগ্রন্থর সংগ্রাহিণী বিদ্যাবতী দাশরায়ের পাঁচালী পড়িতেছিলেন। কোন বর্ষীয়সী পত্রের নিন্দা করিয়া শ্রোতৃদ্বগের কণা পরিতৃপ্ত করিতেছিলেন, কোন রসিকা যাবতী অদ্ধাির্সফটস্বরে স্বামীর রসিকতার বিবরণ সখীদের কাণে কাণে বলিয়া বিরাহিণীর মনোবেদনা বাড়াইতেছিলেন। কেহ গহিণীর নিন্দা, কেহ কত্তার নিন্দা, কেহ প্ৰতিবাসীদিগের নিন্দা করিতেছিলেন ; অনেকেই আত্মপ্রশংসা করিতেছিলেন। যিনি সৰ্য্যেমখী কর্তৃক প্রাতে নিজবদ্ধিহীনতার জন্য মন্দভৎসিত হইয়াছিলেন, তিনি আপনার বদ্ধির অসাধারণ প্রাখয্যের অনেক উদাহরণ প্রয়োগ করিতেছিলেন ; যাঁহার রন্ধনে প্রায় লবণ সমান হয় না, তিনি আপনার পাকনৈপণ্যসম্পবন্ধে সন্দীঘ বস্তৃতা করিতেছিলেন। যাঁহার স্বামী গ্রামের মধ্যে গন্ডমখ, তিনি সেই সবামীর অলৌকিক পাণিডত্য কীৰ্ত্তন করিয়া সঙিগনীকে বিস্মিতা করিতেছিলেন। যাঁহার পত্রিকন্যাগলি এক একটি কৃষ্ণবণ মাংসপিণ্ডড, তিনি রত্নগভর্তা বলিয়া আস্ফালন করিতেছিলেন। সােয্যমখী এ সভায় ছিলেন না। তিনি কিছ গব্বিত, এ সকল সম্প্রদায়ে বড় বসিতেন না এবং তিনি থাকিলে অন্য সকলের আমোদের বিঘা হইত। সকলেই তাঁহাকে ভয় করিত; তাঁহার নিকট মন খালিয়া সকল কথা বলিত না। কিন্তু কুন্দনন্দিনী এক্ষণে এই সম্প্রদায়েই থাকিত; এখনও ছিল। সে একটি বালককে তাহার মাতার অননুরোধে ক, খ, শিখাইতেছিল। কুন্দ বলিয়া দিতেছিল, তাহার ছাত্র অন্য বালকের করস্থ সন্দেশের প্রতি হাঁ করিয়া চাহিয়াছিল; সতরাং তাহার বিশেষ বিদ্যালাভ হইতেছিল। এমত সময়ে সেই নারীসভামন্ডলে। “জয় রাধে!” বলিয়া এক বৈষ্ণবী আসিয়া দাঁড়াইল । নগেন্দ্রের ঠাকুরবাড়ীতে নিত্য অতিথিসেবা হইত, এবং তদ্ব্যতীত সেইখানেই প্রতি রবিবারে তন্ডুলাদি বিতরণ হইত, ইহা ভিন্ন ভিক্ষাৰ্থ বৈষ্ণবী কি কেহ অন্তঃপরে আসিতে পাইত না। এই জন্য অন্তঃপারমধ্যে “জয় রাধে’ শনিয়া এক জন পরিবাসিনী বলিতেছিল, “কে রে মাগী বাড়ীর ভিতর ? ঠাকুরবাড়ী যা।” কিন্তু এই কথা বলিতে বলিতে সে । মািখ ফিরাইয়া বৈষ্ণবীকে দেখিয়া কথা আর সমাপত করিল না। তৎপরিবত্তে বলিল, “ও মা ! এ আবার কোন বৈষ্ণবী গো !” সকলেই বিস্মিত হইয়া দেখিল যে, বৈষ্ণবী যাবতী, তাহার শরীরে আর রােপ ধরে না। সেই বহসেন্দেরী শোভিত রমণীমণ্ডলেও, কুন্দনন্দিনী ব্যতীত তাহা হইতে সমধিক রিপাবতী কেহই নহে। তাহার সাফারিত বিশ্বব্যাধর, সংগঠিত নাসা, বিস্ফারিত ফাল্লেন্দীবরতুল্য চক্ষ, ܓ dܘ ܔ