পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ চিত্ররেখাবৎ ভ্ৰযোেগ, নিটেল ললাট, বাহযোিগলের মণালবৎ গঠন এবং চম্পকদামবৎ বণ, রমণীকুলদল্লভ। কিন্তু সেখানে যদি কেহ সৌন্দয্যের সদিবচারক থাকিত, তবে সে বলিত যে, বৈষ্ণবীর গঠনে কিছ লালিত্যের অভাব। চলন ফেরন এ সকলও পৌরষ। বৈষ্ণবীর নাকে রসিকলি, মাথায় টেরি কাটা, পরণে কালাপেড়ে সিমলার ধতি, হাতে একটি খঞ্জনী। হাতে পিত্তলের বালা, এবং তাহার উপরে জলতরঙ্গ চুড়ি। সত্ৰীলোকদিগের মধ্যে একজন বয়োজ্যোিতষ্ঠা কহিল, “হ্যাঁ গা, তুমি কে গা ?” বৈষ্ণবী কহিল, “আমার নাম হরিদাসী বৈষ্ণবী। মা ঠাকুরাণীবা গান শতুনবে ?” তখন “শ্যনবো গো, শানবো!” এই ধবনি চারিদিকে আবালবন্দধার কন্ঠ হইতে বাহির হইতে লাগিল। তখন খঞ্জনী হাতে বৈষ্ণবী উঠিয়া গিয়া ঠাকুরাণীদিগের কাছে বসিল। সে যেখানে বসিল, সেইখানে কুন্দ ছেলে পড়াইতেছিল। কুন্দ অত্যন্ত গীতপ্রিয়, বৈষ্ণবী গান করিবে: শনিয়া, সে তাহার। আর একটা সন্নিকটে আসিল। তাহার ছাত্র সেই অবকাশে উঠিয়া গিয়া সন্দেশভোজী বালকের হাত হইতে সন্দেশ কাড়িয়া লইয়া। আপনি ভক্ষণ করিল। u বৈষ্ণবী জিজ্ঞাসা করিল, “কি গায়িব ?” তখন শ্রোত্ৰীগণ নানাবিধ ফরমায়েস আরম্ভ করিলেন ; কেহ চাহিলেন “গোবিন্দ অধিকারী”-কেহ “গোপালে উড়ো”। যিনি দাশরথির পাঁচালী পড়িতেছিলেন, তিনি তাঁহাই কামনা করিলেন। দই একজন প্রাচীনা কৃষ্ণবিষয় হকুম করিলেন। তাহারই টীকা করিতে গিয়া মধ্যবয়সীরা “সখীসংবাদ” এবং “বিরহ’ বলিয়া মতভেদ প্রচার করিলেন। কেহ চাহিলেন, “গোস্ঠ”—কোন লজজাহীনা যাবতী বলিল, “নিধরে টপা গাইতে হয় তা গাও—নহিলে শনিব না।” একটি অসফটবাচ্য বালিকা বৈষ্ণবীকে শিক্ষা দিবার অভিপ্ৰায়ে গাইয়া দিল, “তোলা দাসনে দাসনে দীতি।” বৈষ্ণবী সকলের হকুম শনিয়া কুন্দের প্রতি বিদ্যদ্দামতুল্য এক কটাক্ষা করিয়া কহিল, “হ্যাঁ গা—তুমি কিছল ফরমাস করিলে না ?” কুন্দ তখন লড়জাবনতমখী হইয়া অলপ একট, হাসিল, কিছ: উত্তর করিল না। কিন্তু তখনই একজন বয়স্যার কাণে কাণে কহিল, ‘কীৰ্ত্তন গাইতে বল না !” বয়স্যা তখন কহিল, “ওগো কুন্দ কীত্তন করিতে বলিতেছে গো !” তাহা শনিয়া বৈষ্ণবী কীত্তন করিতে আরম্ভ করিল। সকলের কথা টালিয়া বৈষ্ণবী তাহার কথা রাখিল দেখিয়া কুন্দ বড় লজিজত হইল । হরিদাসী বৈষ্ণবী প্রথমে খঞ্জনীতে দই একবার মদ মদ যেন ক্লীড়াচ্ছলো অঙগালি প্রহার করিল। পরে আপনি কণঠমধ্যে অতি মদ মন্দ নববসন্তপ্রেরিতা এক ভ্ৰমরীর গঞ্জনবৎ সরের আলাপ করিতে লাগিল—যেন লজজাশীলা বালিকা স্বামীর নিকট প্রথম প্ৰেমব্যক্তি জন্য মািখ ফটাইতেছে। পরে অকস্মাৎ সেই ক্ষদ্রপ্রাণ খঞ্জনী হইতে বাদ্যবিদ্যা বিশারদের অঙ্গালিজনিত শব্দের ন্যায় মেঘগম্ভীর শব্দ বাহির হইল, এবং তৎসঙ্গে শ্রোত্ৰীদিগের শরীর কণাটকিত করিয়া, অপসরোনিন্দিত কণঠগীতিধযিনি সমথিত হইল। তখন রমণীমণডাল বিস্মিত, বিমোহিতচিত্তে শনিল যে, সেই বৈষ্ণবীর অতুলিত কন্ঠ, অট্টালিকা পরিপণ করিয়া আকাশমাগে উঠিল। মঢ়া পৌরস্ত্ৰীগণ সেই গানের পারিপাট্য কি বঝিবে ? বোদ্ধা থাকিলে বঝিত যে, এই সৰ্ব্বব্যাঙগীণতাললয় স্বরপারিশন্ধ গান কেবল সকন্ঠের কার্য্য নহে। বৈষ্ণবী যেই হউক, সে সঙ্গীতবিদ্যায় অসাধারণ সশিক্ষিতা এবং অলপবয়সে তাহার পারদর্শনী । বৈষ্ণবী গীত সমাপন করিলে, পৌরস্ত্ৰীগণ তাহাকে গায়িবার জন্য পানশাচ অন রোধ করিল। তখন হরিদাসী সতৃষ্ণবিলোলনেত্ৰে কুন্দনন্দিনীর মািখপানে চাহিয়া পানশাচ কীত্তন আরম্ভ করিল, “শ্ৰীমখপঙ্কজ-দেখবো বলে হে, তাই এসেছিলাম। এ গোকুলে। আমায় সন্থান দিও রাই চরণতলে । মানের দায়ে তুই মানিনী, তাই সেজেছি বিদেশিনী, এখন বাঁচাও রাধে কথা কোয়ে, ঘরে যাই হে চরণ ছয়ে। NRA O > bf