পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ নগেন্দ্র উত্তর লিখিলেন, “আমার উপর রাগ করিও না-আমি অধঃপাতে যাইতেছি।” হরদেব বড় বিজ্ঞ। পত্ৰ পড়িয়া মনে করিলেন, “কি এ ? অর্থ চিন্তা ? বন্ধবিচ্ছেদ ? দেবেন্দ্র দত্ত ? না, এ প্ৰেম ?” কমলমণি সৰ্য্যম খাঁর আর একখানি পত্ৰ পাইলেন। তাহার শেষ এই “একবার এসো! কমলমণি! ভগিনি! তুমি বই আর আমার সহৃদ কেহ নাই। একবার এসো। ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ ঃ মহাসমর কমলমণির আসন টলিল। আর তিনি থাকিতে পারিলেন না। কমলমণি রমণীরত্ন। আমনি স্বামীর কাছে গেলেন। শ্ৰীশচন্দ্ৰ অন্তঃপরে বসিয়া, আপিসের আয়ব্যয়ের হিসােব কিতাব দেখিতেছিলেন। তাঁহার পাশে, বিছানায় বসিয়া, এক বৎসরের পত্র সতীশচন্দ্র ইংরেজি সংবাদপত্ৰখানি অধিকার করিয়াছিল। সতীশচন্দ্র সংবাদপত্ৰখানি প্রথমে ভোজনের চেস্টা দেখিয়াছিল, কিন্তু তাহাতে কৃতকাৰ্য্য হইতে না পারিয়া এক্ষণে পাতিয়া বসিয়াছিল। কমলমণি স্বামীর নিকটে গিয়া গললগনীকৃতবাসা হইয়া, ভূমিঠা হইয়া প্ৰণাম করিলেন। এবং করযোড় করিয়া কহিলেন, “সেলাম পৌছে মহারাজ !” (ইতিপকেবা বাড়ীতে গোবিন্দ অধিকারীর যাত্রা হইয়া গিয়াছিল। ) শ্ৰীশচন্দ্ৰ হাসিয়া বলিলেন, “আবার শশা চুরি নাকি ?” কা। শশা, কাঁকুড় নয়। এবার বড় ভারি জিনিস চুরি গিয়াছে। শ্ৰী। কোথায় কি চুরি হলো ? ক। গোবিন্দপরে চুরি হয়েছে। দাদাবাবর একটি সোণার কৌটায় এক কড়া কাণা কড়ি ছিল, তাই কে নিয়া গিয়াছে। শ্ৰীশ বঝিতে না পারিয়া বলিলেন, “তোমার দাদাবাবর সোণার কৌটা ত সহেযািন্তমখনী— কাণা কড়িটি কি ?” ক। সােয্যমখীর বন্ধিখানি। শ্ৰীশচন্দ্ৰ বলিলেন, “তাই লোকে বলে যে, যে খেলে, সে কাণা কড়িতে খেলে। সােয্যমখী ঐ কাণা কড়িতেই তোমার ভাইকে কিনে রেখেছে—আর তোমার এতটা বদ্ধি থাকিতেও ভাই—“ কমলমণি শ্ৰীশচন্দ্রের মােখ। টিপিয়া ধরিলেন। ছাড়িয়া দিলে শ্ৰীশ বলিলেন, “তা কাণা কড়িটি চুরি করলে কে ?” ক। তা ত জানি না—কিন্তু তার পত্ৰ পড়িয়া বঝিলাম যে, সে কাণা কড়িটি খোওয়া গিয়াছে —নহিলে মাগনী এমন পত্র লিখিবে কেন ? শ্ৰী। পত্ৰখানি দেখিতে পাই ? কমলমণি শ্ৰীশচন্দ্রের হাতে সােয্যমখনীর পত্ৰ দিয়া কহিলেন, “এই পড়ি। সােয্যমখী তোমাকে এ সকল কথা বলিতে মানা করিয়াছে—কিন্তু যতক্ষণ তোমাকে সব না বলিতেছি, ততক্ষণ আমার প্রাণ খাবি খেতেছে। তোমাকে পত্র না পড়াইলে আহার নিদ্রা হইবে না—ঘরণী রোগই বা উপসিথত হয়।” শ্ৰীশচন্দ্ৰ পত্র হস্তে লইয়া চিন্তা করিয়া বলিলেন, “যখন তোমাকে নিষেধ করিয়াছে, তখন আমি এ পত্ৰ দেখিব না। কথাটা কি, তা শনিতেও চাহিব না। এখন করিতে হইবৈ কি, তাই বল।” ক। করতে হবে এই—সিযেমখীর বন্ধিটকু গিয়াছে, তার একটা বন্ধি চাই। বন্ধি দেয়, এমন লোক আর কে আছে– বন্ধি যা কিছ আছে, তা সতীশ বাবার। তাই সতীশ বাবকে একবার গোবিন্দপাের যেতে তার মামী লিখে পাঠিয়েছে। সতীশ বাব, ততক্ষণে একটা ফলদানি ফলসমেত উলটাইয়া ফেলিয়াছিলেন, এবং তৎপরে দোয়াতের উপর নজর করিতেছিলেন। দেখিয়া শ্ৰীশচন্দ্ৰ কহিলেন, “উপযক্ত বন্ধিদাতা বটে। তা যাহা হোক, এতক্ষণে বঝিলাম—ভাজের বাড়ী মশায়ের নিমন্ত্রণ। সতীশকে যেতে হলেই সতরাং কমলমণিও যাবে। তা সৰ্য্যেমখীর কাণা কড়িটি না হারালে আর এমন কথা লিখিবে কেন ?” ক। শােধ কি তাই ? সতীশের নিমন্ত্রণ ; আমার নিমন্ত্রণ আর তোমার নিমন্ত্রণ। SR b' S