পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ ষোড়শ পরিচ্ছেদ ঃ “না।” সেই দিন প্রদোষকালে উদ্যানমধ্যস্থ বাপীতটে বসিয়া কুন্দনন্দিনী। এই দীঘিকা অতি সবিস্তৃতা ; তাহার জল অতি পরিস্কার এবং সৰ্ব্বদা নীলপ্ৰভ। পাঠকের সমরণ থাকিতে পারে এই পঙ্করিণীর পশ্চাতে পক্ষেপাদ্যান। পক্ষেপাদ্যানমধ্যে এক শেবতপ্রস্তররচিত লতামন্ডপ ছিল। সেই লতামন্ডপের সমখেই পঙ্করিণীতে অবতরণ করিবার সোপান। সোপান প্রস্তরবৎ ইন্ডটিকে নিম্পিমতি, অতি প্রশস্ত এবং পরিৎকার। তাহার দই ধারে দাইটি বহনকালের বড় বকুল গাছ। সেই বকুলের তলায়, সোপানের উপরে কুন্দনন্দিনী, অন্ধকার প্রদোষে একাকিনী বসিয়া সবচ্ছ সরোবরহাদয়ে প্রতিফলিত নক্ষত্ৰাদিসহিত আকাশপ্ৰতিবিম্ব নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। কোথাও কতকগলি লাল ফল অন্ধকারে অসপস্ট হইতেছিল। দীঘি কার অপর তিন পাশেব, আম, কাঁটাল, জাম, লেব, লিচু, নারিকেল, কুল, বেল প্রভৃতি ফলবান ফলের গাছ, ঘনশ্রেণীবদ্ধ হইয়া অন্ধকারে অসমশীর্ষ প্রাচীরবৎ দকিট হইতেছিল। কদাচিৎ তাহার শাখায় বসিয়া মাচাড় পাখী বিকট রব করিয়া নিঃশব্দ সরোবরকে শবিদত করিতেছিল। শীতল বায়, সরোবর পার হইয়া ইন্দবীবরকোরককে ঈর্ষন্মাত্র বিধত করিয়া, আকাশচিত্রকে সবলপমাত্র কম্পিত করিয়া কুন্দনন্দিনীর শিরঃস্থ বকুলপত্রমালায় মৰ্ম্মমরি শব্দ করিতেছিল এবং নিদাঘপ্রস্ফটিত বকুল পক্ষেপর গন্ধ চারি দিকে বিকীর্ণ করিতেছিল। বকুল পাপ সকল নিঃশব্দে কুন্দনন্দিনীর অঙেগ এবং চারি দিকে ঝরিয়া পড়িতেছিল। পশ্চাৎ হইতে অসংখ্য মল্লিকা, যথিকা এবং কামিনীর সগন্ধ আসিতেছিল। চারিদিকে, অন্ধকারে, খাদ্যোতমালা স্বচ্ছ বারির উপর উঠিতেছিল, পড়িতেছিল, ফটিতেছিল, নিবিতেছিল। দই একটা বাদােড় ডাকিতেছে—দই একটা শােগাল অন্য পশ তাড়াইবার তাহাদিগের যে শবদ, সেই শব্দ করিতেছে—দই একখানা মেঘ আকাশে পথ হারাইয়া বেড়াইতেছে—দই একটা তারা মনের দঃখে খসিয়া পড়িতেছে। কুন্দনন্দিনী মনের দঃখে৷ ভাবিতেছেন। কি ভাবনা ভাবিতেছেন ? এইরহপ; –“ভাল, সবাই আগে মলো-মা মলো, দাদা লো, বাবা মলো, আমি মলেম না কেন ? যদি না মলেম ত এখানে এলাম কেন ? ভাল, মানষে কি মরিয়া নক্ষত্র হয় ?” পিতার পরলোকযাত্রার রাত্রে কুন্দ যে স্বপন দেখিয়াছিল, কুন্দের আর তাহা কিছই মনে ছিল না ; কখনও মনে হইত না, এখনও তােহা মনে হইল না। কেবল আভাসমাত্ৰ মনে আসিল ৷ এইমাত্ৰ মনে হইল, যেন সে কবে মাতাকে স্বপেন দেখিয়াছিল, তাহার মা যেন, তাহাকে নক্ষত্র হইতে বলিয়াছেন। কুন্দ ভাবিতে লাগিল, “ভাল, মানষে মরিলে কি নক্ষত্র হয় ? তা হলে ত বাবা, মা সবাই নক্ষত্র হইয়াছেন ? তবে তাঁরা কোন নক্ষত্ৰগলি ? ঐটি ? না। এটি ? কোনটি কে ? কেমন করিয়া জানিব ? তা যেটিই যিনি হউন, আমায় ত দেখতে পেতেছেন ? আমি যে এত কাঁদি—তা দােসর হউক, ও আর ভাবি না-বড় কান্না পায়। কোঁদে কি হবে ? আমার ত কপালে কান্নাই আছে —নহিলে মা—আবার ঐ কথা! দরি হউক।--ভাল, মরিলে হয়। না ? কেমন করিয়া ? জলে ডুবিয়া ? বেশ ত । মরিলে নক্ষত্র হব—তা হলে হব ত? দেখিতে পাব।—রোজ রোজ দেখিতে পাব।—কাকে ? কাকে, ম্যুখে বলিতে পারি। নে কি ? আচ্ছা, নাম মখে আনিতে পারি। নে কেন ? এখন ত কেহ নাই—কেহ শানিতে পাবে না। একবার মাখে। আনিব ? কেহ নাই——মনের সাধে নাম করি। ন-নগ-নগেন্দ্ৰ ! নগেন্দ্ৰ, নগেন্দ্ৰ, নগেন্দ্ৰ, নগেন্দ্ৰ, নগেন্দ্র, নগেন্দ্র! নগেন্দ্র, আমার নগেন্দ্ৰ ! আলো! আমার নগেন্দ্র ? আমি কে ? সােয্যমখীর নগেন্দ্র। কতই নাম করিতেছি।-হলেম কি ? আচ্ছা-সহেযািমদুখীর সঙ্গে বিয়ৈ না হয়ে যদি আমার সঙ্গে হতো—দর হউক।-ডুবেই মারি –আচ্ছা, যেন এখন ডুবিলাম-কাল ভেসে উঠবে।-- তবে সবাই শানবে, শনে নগেন্দ্ৰ—নগেন্দ্র!—নগেন্দ্র!-নগেন্দ্র! আবার বলি—নগেন্দ্র নগেন্দ্র নগেন্দ্র!-নগেন্দ্র শনে কি বলবেন ? ডুবে মরা হবে না।—ফলে পড়িয়া থাকিব-দেখিতে রাক্ষসীর মত হব। যদি তিনি দেখেন ? বিষ খেয়ে তা মরিতে পারি ? কি বিষ খাব ? বিষ কোথা পাব-—কে আমায় এনে দিবে ? দিলে যেন—মরিতে পারিব কি ? পারি—কিন্তু আজি না। —একবার আকাঙক্ষা ভরিয়া মনে করি—তিনি আমায় ভালবাসেন। কমল কি কথাটি বলতে বলতে বলিল না ? সে ঐ কথাই। আচ্ছা, সে কথা কি সত্য ?-কিন্তু কমল জানিবে কিসে? আমি পোড়ারমখী জিজ্ঞাসা করিতে পারিলাম না। ভালবাসেন ? কিসে ভালবাসেন ? কি ՀԵԳ