পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী দে। তা কি জান না ? মনে নাই, তারা মাস্টারের বিয়ে হয়েছিল এক দেবকন্যার সঙেগ ? সেই দেবকন্যা এখন বিধবা হয়ে এ গাঁয়ের দত্তবাড়ী রোধে খায় । তাই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। স। কেন, এত দািবত্তিতেও তৃপিত জন্মিল না যে, সে অনাথা বালিকাকে অধঃপাতে দিতে হবে! দেখ দেবেন্দ্ৰ, তুমি এত বড় পাপিষ্পষ্ঠ, এত বড় নশংস, এমন অত্যাচারী যে, বোধ হয়, আর আমরা তোমার সহবাস করিতে পারিব না। সরেন্দ্র এরােপ দাঢ্য সহকারে এইকথা বলিলেন যে, দেবেন্দ্র নিস্তবধ হইলেন। পরে দেবেন্দ্র গাম্ভীৰ্য্যসহকারে কহিলেন, “তুমি আমার উপব রাগ করিও না। আমার চিত্ত আমার বশ নহে। আমি সকল ত্যাগ করিতে পারি, এই সত্ৰীলোকের অাশা ত্যাগ করিতে পারি না। যে দিন প্রথম তাহাকে তারাচরণের গহে দেখিয়াছি, সেই দিন অবধি আমি তাহার সৌন্দয্যে অভিভূত হইয়া আছি। আমার চক্ষে এত সৌন্দয্য আর কোথাও নাই। জবরে যেমন তৃষ্ণা রোগীকে দগধ করে, সেই অবধি উহার জন্য লালসা আমাকে সেইরােপ দগধ করিতেছে। সেই অবধি আমি উহাকে দেখিবার জন্য কত কৌশল করিতেছি, তাহা বলিতে পারি না। এ পয্যন্ত পারি নাই-শেষে এই বৈষ্ণবী-সজজা ধরিয়াছি। তোমার কোন আশঙ্কা নাই--সে। সত্ৰীলোক অত্যন্ত সাধৰী!” স। তবে যাও কেন ? দে। কেবল তাহাকে দেখিবার জন্য। তাহাকে দেখিযা, তাহার সঙেগ কথা কহিয়া, তাহাকে গান শনাইয়া আমার যে কি পৰ্যন্ত তৃপিত হয়, তাহা বলিতে পারি না। স। তোমাকে আমি সত্য বলিতেছি—উপহাস করিতেছি না। তুমি যদি এই দ্যুৎপ্রবত্তি ত্যাগ না করিবে-তুমি যদি সে পথে আর যাইবে-—তবে আমার সঙ্গে তোমার আলাপ এই পৰ্যন্ত বন্ধ। আমিও তোমার শত্ৰ হইব। দে। তুমি আমার একমাত্র সহৃদ। আমি আদ্ধেক বিষয় ছাড়িতে পারি, তব তোমাকে ছাড়িতে পারি না। কিন্তু তোমাকে যদি ছাড়িতে হয়, সেও স্বীকার, তব, আমি কুন্দনন্দিনীকে দেখিবার আশা ছাড়িতে পারিব না। স। তবে তাঁহাই হউক। তোমার সঙ্গে আমার এই পৰ্যন্ত সাক্ষাৎ ৷ এই বলিয়া সরেন্দ্র দঃখিত চিত্তে উঠিয়া গেলেন। দেবেন্দ্র একমাত্র বন্ধবিচ্ছেদে অত্যন্ত ক্ষণ হইয়া কিয়ংকাল বিমৰ্ষভাবে বসিয়া রহিলেন । শেষ, ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, “দর হউক! এ সংসারে কে কার! আমিই আমার!” এই বলিয়া পাত্র পণ করিয়া ব্রাণিড পান করিলেন। তাহার বশে আশা চিত্তপ্রফােল্লতা জন্মিল। তখন দেবেন্দ্র, শ্যইয়া পড়িয়া, চক্ষ মদিয়া গান ধরিলেন, “আমার নাম হীরা মালিনী । আমি থাকি রাধার কুঞ্জে, কুব্জা আমার ননদিনী । রাবণ বলে চন্দ্রাবলি, তুমি আমার কমল কলি, উদ্ধারিল যাজ্ঞসেনী !” তখন পারিষদেরা সকলে উঠিয়া গিয়াছিল, দেবেন্দ্র নৌকাশন্য নদীবক্ষঃস্থিত ভেলার ন্যায় একা বসিয়া রসের তরঙ্গে হাবডুব খাইতেছিলেন। রোগরােপ তিমি মকরাদি এখন জালেব ভিতর লকাইয়াছিল—এখন কেবল মন্দ পােবন আর চাঁদের আলো! এমন সময়ে জানালার দিকে কি একটা খড় খড় শবদ হইল—কে যেন খড়খড়ি তুলিয়া দেখিতেছিল--হঠাৎ ফেলিয়া দিল। দেবেন্দ্র বোধ হয়, মনে মনে কাহারও প্রতীক্ষা করিতেছিলেন—বলিলেন, “কে খড়খাঁড়ি চুরি করে ?” কোন উত্তর না পাইয়া জানেল দিয়া দেখিলেন-দেখিতে পাইলেন, এক জন, সত্ৰীলোক পলায় { সত্ৰীলোক পলায় দেখিয়া দেবেন্দ্র জানেলা খলিয়া লাফাইয়া পড়িয়া, তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ টালিতে টলিতে ছটিলেন। সত্ৰীলোক অনায়াসে পলাইলে পলাইতে পারিত, কিন্তু ইচ্ছাপব্বেক পলাইল না, কি অন্ধকারে ফািলবাগানের মাঝে পথ হারাইল, তাহা বলা যায় না। দেবেন্দ্র তাহাকে ধরিয়া অন্ধকারে তাহার মািখপানে চাহিয়া চিনিতে পারিলেন না। চুপি চুপি মদের ঝোঁকে বলিলেন, “বাবা! কোন গাছ RNO