পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী সস্থলতা প্ৰাপত হইয়া প্রকটিত হইল। কমলও সকল শানিলেন। কুন্দকে সযমেখী ডাকাইলেন। সে আসিলে পরে বলিলেন, “কুন্দ! হরিদাসী বৈষ্ণবী কে, আমরা চিনিয়াছি। আমরা জানিয়াছি যে, সে তোর কে। তুই যা তা জানিলাম!! আমরা এমন সত্ৰীলোককে বাড়ীতে সস্থান দিই না। তুই বাড়ী হইতে এখনই দর হা। নহিলে হীরা তোকে ঝাঁটা মারিয়া তাড়াইবে।” কুন্দের গা কাঁপিতে লাগিল। কমল দেখিলেন যে, সে পড়িয়া যায়। কমল তাহাকে ধরিয়া শয়নগহে লইয়া গেলেন। শয়নগহে থাকিয়া আদর করিয়া সান্ত্বিনা করিলেন এবং বলিলেন, “ও মাগনী যাহা বলে বলকে ; আমি উহার একটি কথাও বিশ্ববাস করি না।” অন্টাদশ পরিচ্ছেদ ঃ অনাথিনী গভীর রাত্রে গহস্থ সকলে নিদ্রিত হইলে কুন্দনন্দিনী শয়নাগারের দাবার খালিয়া বাহির হইল। এক বসনে সাহায্যমখীর গহি ত্যাগ করিয়া গেল। সেই গভীর রাত্রে এক বসনে সপতদশবিষীয়া অনাথিনী সংসার সমদে একাকিনী ঝাঁপ দিল। রাত্রি অত্যন্ত অন্ধকার । অলপ অলপ মেঘ করিয়াছে, কোথায় পথ ? কে বলিয়া দিবে, কোথায় পথ ? কুন্দনন্দিনী কখন দত্তাদিগের বাটীর বাহির হয় নাই। কোন দিকে কোথায় যাইবার পথ, তাহা জানে না। আর কোথাই বা যাইবে ? অট্টালিকার বহৎ অন্ধকারময় কায়া, আকাশের গায়ে লাগিয়া রহিয়াছে—সেই অন্ধকার বেস্টন করিয়া কুন্দনন্দিনী বেড়াইতে লাগিল। মানস, একবার নগেন্দ্রনাথের শয়নকক্ষের বাতায়নপথে আলো দেখিয়া যায়। একবার সেই আলো দেখিয়া চক্ষ জড়াইয়া যাইবে। তাঁহার শয়নাগার চিনিত—ফিরিতে ফিরিতে তাহা দেখিতে পাইল—বাতায়নপথে আলো দেখা যাইতেছে। কিবাট খোলা-স্যাসী বন্ধ—অন্ধকারমধ্যে তিনটি জানেলা জীবলিতেছে। তাহার উপর পাতওগজাতি উড়িয়া উড়িয়া পড়িতেছে। আলো দেখিয়া উড়িয়া পড়িতেছে, কিন্তু রন্ধপথে প্রবেশ করিতে না পারিয়া কাচে ঠেকিয়া ফিরিয়া যাইতেছে। কুন্দনন্দিনী এই ক্ষদ্র পতঙগদিগের জন্য হৃদয়মধ্যে পীড়িত হইল। কুন্দনন্দিনী মগধলোচনে সেই গবাক্ষপথ-প্রেরিত আলোক দেখিতে লাগিল—সে আলো ছাড়িয়া যাইতে পারিল না। শয়নাগারের সম্মখে কতকগালি ঝাউগাছ ছিল--কুন্দনন্দিনী তাহার তলায় গবাক্ষ প্রতি সম্মমাখ করিয়া বসিল। রাত্রি অন্ধকার, চারি দিক অন্ধকার, গাছে গাছে খাদ্যোতের চাকচিক্য সহস্ৰে সহস্ৰে ফটিতেছে, মাদিতেছে ; মদিতেছে, ফটিতেছে। আকাশে কালো মেঘের পশ্চাতে কালে মেঘ। ছটিতেছে—তাহার পশ্চাতে আরও কালো মেঘ। ছটিতেছে — তৎপশ্চাতে আরো কালো। আকাশে দই একটি নক্ষত্র মাত্র, কখনও মেঘে ডুবিতেছে, কখনও ভাসিতেছে। বাড়ীর চারি দিকে ঝাউগাছের শ্রেণী, সেই মেঘময় আকাশে মাথা তুলিয়া নিশাচর। পিশাচের মত দাঁড়াইয়া আছে। বায়ার সপশোঁ সেই করালবদনা নিশীথিনী-অঙ্কে থাকিয়া, তাহারা আপন আপন পৈশাচী ভাষায় কুন্দনন্দিনীর মাথার উপর কথা কহিতেছে। পিশাচেরাও করাল রাত্রির ভয়ে, অলপ শব্দে কথা কহিতেছে। কদাচিৎ বােয়র সঞ্চালনে গবাক্ষের মন্ত কবাট প্রাচীরে বারেক মাত্র আঘাত করিয়া শবদ করিতেছে। কালপেচা সৌধোপরি বসিয়া ডাকিতেছে। কদাচিৎ একটা কুক্কর অন্য পশ, দেখিয়া সম্মমখ দিয়া অতি দ্রুতবেগে ছটিতেছে। কদাচিৎ ঝাউয়ের পল্লব অথবা ফল খসিয়া পড়িতেছে। দরে নারিকেল বক্ষের অন্ধকার শিরোভাগ অন্ধকারে মন্দ মন্দ হেলিতেছে; দরি হইতে তালব, ক্ষের পত্রের তর। তাঁর মৰ্ম্মমরি শব্দ কণে আসিতেছে ; সবেবাপরি সেই বাতায়নশ্রেণীর উত্তজবল আলো জীবলিতেছে-—আর পতঙ্গদল ফিরিয়া ফিরিয়া আসিতেছে। কুন্দনন্দিনী সেই দিকে চাহিয়া বহিল। ধীরে ধীরে একটি গবাক্ষের সাসী। খলিল। এক মনষ্যমাত্তি আলোকপটে চিত্রিত হইল। হরি! হরি! সে নগেন্দ্রের মাত্তি। নগেন্দ্ৰ—নগেন্দ্ৰ ! যদি ঐ ঝাউতলার অন্ধকারের মধ্যে ক্ষদ্র কুন্দ কুসমটি দেখিতে পাইতো! যদি তোমাকে গবাক্ষপথে দেখিয়া তাহার হৃদয়াঘাতের শব্দদপ! দপ! শবদ—যদি সে শবদ শনিতে পাইতে ! যদি জানিতে পারিতে যে, তুমি আবার এখনই সরিয়া আদশ্য হইবে, এই ভয়ে তাহার দেখার সখ হইতেছে না! নগেন্দ্র! দীপের দিকে পশ্চাৎ করিয়া দাঁড়াইয়াছ—একবার দীপ সম্মখে করিয়া দাঁড়াও ! তুমি দাঁড়াও, সরিও না-কুন্দ বড় ૨ જે રે