পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ হৃদয় আর প্রাণাধিকের আদর্শন সহ্য করিতে পারে না। এক দিন দই চারি দন্ড রাত্রি থাকিতে কুন্দ শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিল। হীরা তখন নিদ্রিত। নিঃশব্দে কুন্দ দবারোদঘাটন করিয়া বাটীর বাহির হইল। কৃষ্ণপক্ষাবশেষে ক্ষীণচন্দ্র আকাশপ্রান্তে সাগরে নিক্ষিপতা বালিকা সন্দেরীর ন্যায়। ভাসিতেছিল। বাক্ষান্তরাল মধ্যে রাশি রাশি অন্ধকার লকাইয়াছিল। অতি মন্দ শীতল বায়তে পথিপােশ বাসস্থ সরোবরের পদ্মপত্রশৈবালাদিসমাচ্ছন্ন জলের বীচিবিক্ষেপ হইতেছিল না। অসপস্টলক্ষ্য বাক্ষাগ্রভাগসকলের উপর নিবিড় নীল আকাশ শোভা পাইতেছিল। কুক্করেরা পথিপাশেবা নিদ্রা যাইতেছিল। প্রকৃতি স্নিগধগাম্ভীৰ্য্যময়ী হইয়া শোভা পাইতেছিল। কুন্দ পথ অনমান করিয়া দত্তগহাভিমখে সন্দেহমন্দপদে চলিল। যাইবার আর কিছই অভিপ্রায় নহে!— যদি কোন সংযোগে একবার নগেন্দ্রকে দেখিতে পায়। দত্তগহে ফিরিয়া যাওয়া ত ঘাঁটিতেছে না। —যবে ঘটিবে, তবে ঘটিবে—ইতিমধ্যে এক দিন লাকাইয়া দেখিয়া আসিলে ক্ষতি কি ? কিন্তু লকাইয়া দেখিব কখন ? কি প্রকারে ? কুন্দ ভাবিয়া ভাবিয়া এই স্থির করিয়াছিল যে, রাত্রি থাকিতে দত্তদিগের গহসন্নিধানে গিয়া চারি দিকে বেড়াইব—কোন সংযোগে নগেন্দ্রকে বাতায়নে, কি প্রাসাদে, কি উদ্যানে, কি পথে দেখিতে পাইব । নগেন্দ্ৰ প্ৰভাতে উঠিয়া থাকেন, কুন্দ তাঁহাকে দেখিতে পাইলেও পাইতে পারে। দেখিয়াই অমনি কুন্দ ফিরিয়া আসিবে। মনে মনে এইয়ােপ কলপনা করিয়া কুন্দ শেষরাত্রে নগেন্দ্রের গহাভিমখে চলিল। অট্টালিকাসন্নিধানে উপস্থিত হইয়া দেখিল, তখন রাত্রি প্রভাত হইতে কিছ, বিলম্ব আছে। কুন্দ পথপানে চাহিয়া দেখিল—নগেন্দ্র কোথাও নাই—ছাদপানে চাহিল, সেখানেও নগেন্দ্ৰ নাই—বাতায়নেও নগেন্দ্ৰ নাই। কুন্দ ভাবিল, এখনও তিনি বঝি উঠেন নাই—উঠিবার সময় হয় নাই। প্ৰভাত হউক—আমি ঝাউতলায় বসি। কুন্দ ঝাউতলায় বসিলা। ঝাউতলা বড় অন্ধকার। দই একটি ঝাউয়ের ফল কি পল্লব মািট মািট করিয়া নীরমধ্যে খসিয়া পড়িতেছিল। মাথার উপরে বাক্ষস্থ পক্ষীরা পাখা ঝাড়া দিতেছিল। আটালিকারক্ষক দবারবান দিগের দবারা দবারোদঘাটনের ও অবরোধের শব্দ মধ্যে মধ্যে শনা যাইতেছিল। শেষে উষাসমাগমসচক শীতল বায় বহিল। তখন পাপিয়া সবরলহরীতে আকাশ ভাসাইয়া মাথার উপর দিয়া ডাকিয়া গেল। কিছ, পরে ঝাউগাছে কোকিল ডাকিল। শেষে সকল পক্ষী মিলিয়া গণন্ডগোল করিতে লাগিল। তখন কুন্দের ভরসা নিবিতে লাগিল---আর ত ঝাউতলায় বসিয়া থাকিতে পারে না, প্রভাত হইলকেহ দেখিতে পাইবে। তখন প্রত্যাবত্ত নাথে কুন্দ গাত্রে থান করিল। এক আশা মনে বড় প্রবলা হইল। আন্তঃপারসংলগন যে পক্ষেপাদ্যান আছে—নগেন্দ্র প্রাতে উঠিয়া কোন কোন দিন সেইখানে বায়সেবন করিয়া থাকেন। হয়ত নগেন্দ্র এতক্ষণ সেইখানে পদচারণ করিতেছেন। একবার সে সথান না দেখিয়া কুন্দ ফিরিতে পারিল না। কিন্তু সে উদ্যান প্রাচীরবেষ্টিত। খিড়কীর দাবার মক্ত না হইলে তাহার মধ্যে প্রবেশের পথ নাই। বাহির হইতেও তােহা দেখা যায় না। খিড়কীর দবার মন্ত কি রােদ্ধ, ইহা দেখিবার জন্য কুন্দ সেই দিকে গেল। দেখিল, দবার মক্ত। কুন্দ সাহসে ভর করিয়া তন্মধ্যে প্রবেশ করিল। এবং উদ্যানপ্রান্তে ধীরে ধীরে আসিয়া এক বকুলবক্ষের অন্তরালে দাঁড়াইল। উদ্যানটি ঘন বাক্ষলতাগলমরাজিপরিবােত। বাক্ষশ্রেণীমধ্যে প্রস্তররচিত সন্দের পথ, সন্থানে সথানে শেবত, রক্ত, নীল, পীতবর্ণ বহন কুস মরাশিতে বাক্ষাদি মন্ডিত হইয়া রহিয়াছে—তদাপরি প্রভাতমধলািবধ মক্ষিকসকল দলে দলে ভ্ৰমিতেছে, বসিতেছে, উড়িতেছে—গান গান শব্দ করিতেছে। এবং মনষ্যের চরিত্রের অন্যাকরণ করিয়া একটা একটা বিশেষ মধ্যযন্ত ফলের উপর পালে পালে ঝাঁকিতেছে। বিচিত্ৰবৰ্ণ অতি ক্ষদ্র পক্ষিগণ প্রস্ফটিত পক্ষপগচ্ছোপরি বাক্ষফলবৎ আরোহণ করিয়া পশুপরসপান করিতেছে, কাহারও কন্ঠ হইতে সম্প্ৰতিস্বর-সম্মিলিত ধৰনি নিগতি হইতেছে। প্রভাতবায়ার মন্দ হিল্লোলে পাপভারাবনত ক্ষদ্র শাখা দলিতেছে— পাপহীন শাখাসকল দলিতেছে না; কেন না, তাহারা নাম নহে। কোকিল মহাশয় বকুলের ঝোপের মধ্যে কালবণ লাকাইয়া গলা-বাজিতে সকলকে জিতিতেছেন। উদ্যানমধ্যস্থলে একটি শেবতপ্রস্তরনিমিত লতামন্ডপ । তাহা অবলম্বন করিয়া নানাবিধ লতা পশুপধারণ করিয়া রহিয়াছে এবং তাহার ধারে মাত্তিকাধারে রোপিত সপক্ষেপ গলমসকল শ্রেণীবদ্ধ হইয়া রহিয়াছে। কুন্দনন্দিনী বকুলান্তরাল হইতে উদ্যানমধ্যে দল্টিপাত করিয়া নগেন্দ্রের দীর্ঘািয়ত দেবমাত্তি Ꮼ Ꭴ S