পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙ্গ সাহিত্য-সমাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস-গ্রন্থসমােহ সম্পকে স্বতন্ত্র ও সমন্টিগতভাবে এযাবৎ বহৎ আলোচনা হইয়া গিয়াছে। বঁঙ্কিমচন্দ্রের সমসময়ে তাঁহার বন্ধবেগ কর্তৃক লিখিত নানা কথা উপন্যাস-গ্রন্থাদির উপর বিশেষ আলোকপাত করে। ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, গিরিজাপ্রসন্ন রায় চৌধরিী, অক্ষয়কুমার দত্তগপত, পাণচন্দ্র বস, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্ৰ পাল ও ইদানীন্তন কালের শ্ৰীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি সমালোচকগণ এবং বঙ্কিমচন্দ্রের বিভিন্ন জীবনীকারও বিভিন্ন রচনায় উপন্যাসাবলীর আলোচনায় লিপিত হইয়াছিলেন। বিভিন্ন সময়ের এই সকল আলোচনা ও জীবনী-গ্ৰন্থ হইতে উহাদের পটভূমিকার সম্পবন্ধে একটি পদ্ট ধারণা হইতে পারে। বঙগীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-প্রকাশিত বঙিকমচন্দ্রের প্রত্যেকটি উপন্যাসের সঙ্গে যে সম্পাদকীয় ভূমিকা সন্নিবেশিত হইয়াছে এবং কতকগলি উপন্যাসে ঐতিহাসিক আচাৰ্য্য শ্ৰীষদনাথ সরকারের যে-সব মল্যবান মন্তব্য সংযোজিত হইয়াছে তাহাতে এ বিষয় আমাদের নিকট বিশেষ পরিভাকার হইয়া গিয়াছে। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসরাজিকে আমরা মোটামটি তিন ভাগে ভাগ করিতে পারি ; ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস এবং জাতীয়তামােলক উপন্যাস। আচাৰ্য্য যদ্যনাথ প্রদত্ত ঐতিহাসিক উপন্যাসের ব্যাখ্যা বড়ই হৃদয়গ্রাহী ও সময়ানসারী। তিনি এই সম্পকে লন্ডনের বিখ্যাত ‘টাইমস, লিটারারি সাপলিমেণ্ট' (৩০ জন ১৯৪৫, পঃ ৩ o৭) হইতে ঐতিহাসিক উপন্যাসের একটি সারগভা আলোচনার মৰ্ম্মম এইরপ দিয়াছেন : “ইতিহাস এবং উপন্যাস এক বস্তু নহে। ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রকৃত স্থান সাহিত্যের শ্রেণীতে, ইতিহাসের শ্রেণীতে নহে।.আজকাল ইউরোপে যে-সব ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা হইতেছে, তাহার প্রধান দোষ এই যে, তাহার মধ্যে অতীতকালের সত্য ব্যক্তি এবং ঘটনায় ভাগ অতিমাত্রায় বাড়িয়া চলিয়াছে এবং গ্রন্থকারের কলপনায় প্রকৃত চরিত্র কমিয়া যাইতেছে। লেখক যতই বেশী পরিমাণে নিজ কলপনায় সম্ৰাট চরিত্র ও ঘটনা রঙগমঞ্চে নামাইবেন, ততই তাঁহার একখানা সাহিত্যগ্রন্থ, একটি প্রকৃত কথার বস্তু রচনা করিবার সহযোগ বাড়িবে। “রয়াল হিস্টরিকাল সোসাইটির সম্পম খে। জন মাসের শেষ সপতাহে বস্তৃতা করিবার সময়, অধ্যাপক গচ বলিয়াছেন, “যাহা হইলেও হইতে পারিত, তাহা এবং সত্যই সংঘটিত ব্যাপার, এক জিনিস নাহে।” অতএব ঐতিহাসিক উপন্যাস যতই যত্নে লিখিত ও পন্ডিতোচিত তথ্যপণ্য হউক না কেন, তাহা আসল ইতিহাস পাঠের সন্থান কখনই লইতে পারে না। তথাপি, ঐতিহাসিক উপন্যাসের একটা সাৰ্থকতা আছে; তাহার কারণ, সত্য ইতিহাসের মধ্যে কি-যেন একটা অভাব বোধ হয়; অর্থাৎ অতীত যাগের মত নায়ক-নায়িকীগণ তাঁহাদেব প্রায় সব গোপনীয় ব্যাপারগালি সঙ্গে লইয়া তিরোধান করিয়াছেন, এবং আধনিকেরা অতীত যাগকে চিরদিনই শািন্ধ, ভাঙ্গা ভাঙ্গা রকমে চিনিতে পারে। পাঠক-হৃদয়ের এই শান্য স্থান ঐতিহাসিক উপন্যাস পর্ণ করে। অধ্যাপক গচ বহ দান্টান্ত দিয়া দেখাইয়াছেন, ঐতিহাসিক উপন্যাস আমাদের ইতিহাস বঝিতে কত বেশী সাহায্য করিয়াছে। লক্ষ লক্ষ পাঠক ঐতিহাসিক উপন্যাস লইয়া ইতিহাসের যে জ্ঞান লাভ করিয়াছে, তাহা অন্য কোন উপায়ে পাইতে পারিত না। অবশেষে তিনি বলেন, ঐতিহাসিক উপন্যাস সাধারণের হৃদয়ে জাতীয়তাবোধ জাগাইতে এবং সজীব রাখিতে অতি ব্রুিয়াশীল শক্তির কাজ করিয়াছে; আর এই জাতীয়তাবােধই উন্নবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের রােপ বদলাইয়া দিয়াছে।” আচাৰ্য্য যদ্যনাথ বলেন, তাঁহার লিখিত বঙ্কিমচন্দ্রের ঐতিহাসিক উপন্যাসগলির ভূমিকায় তিনি যে সকল সিদ্ধান্তে পৌছিয়াছেন, তাহার আশ্চৰ্য্য সমর্থন উদ্ধতাংশে রহিয়াছে। যদানাথের মতে, "বঙ্কিম নিজেই এই সাহিত্যিক নীতি অনসরণ করিয়াছেন এবং তাঁহার ঐতিহাসিক উপন্যাসগলি বিলাতের অতি আধনিক মনীষীগণের সিদ্ধান্ত অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলিয়া প্রমাণ করিতেছে।” এখানে একটি কথা সমরণীয়। বঙিকমের ‘রাজসিংহ”, “সীতারাম’ প্রভৃতি উপন্যাস উক্ত মতে ঐতিহাসিক হইয়াই সপষ্টতঃ জাতীয়তামােলক। সামাজিক ও জাতীয়তামািলক উপন্যাসসমহের আলোচনাও যথাস্থানে করা হইল। সময় অনসারে উপন্যাসগলির সংক্ষিপত পরিচয় প্রদত্ত হইবে। 之午