পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম "রচনাবলী শ্ৰীশ । আজি আর সে সকল কথায় কাজ কি ? আজ শ্রান্ত আছ, বিশ্রাম কর। নগেন্দ্ৰ ভ্ৰকুটী করিয়া মহাপরিষ কন্ঠে কহিলেন, “বল।” শ্ৰীশচন্দ্র নগেন্দ্রের মািখপ্রতি চাহিয়া দেখিলেন, নগেন্দ্ৰ পাগলের মত হইয়াছেন; বিদ্যুৎগভী মেঘের মত তাঁহার মাখ কালিময় হইয়াছে। ভীত হইয়া শ্ৰীশচন্দ্র বলিলেন, “বলিতেছি।” নগেন্দ্রের মািখ প্ৰসন্ন হইল ; শ্ৰীশচন্দ্র সংক্ষেপে বলিলেন, “গোবিন্দপাের হইতে সৰ্য্যেমখী স্থলপথে অলপ অলপ করিয়া প্রথমে পদব্রজে এই দিকে আসিয়াছিলেন।” নগেন্দ্র। প্রত্যহ কত পথ চলিতেন ? শ্ৰীশ । এক ক্লোশ দেড় ক্লোশ । নগেন্দ্র। তিনি ত একটি পয়সাও লইয়া বাড়ী হইতে যান নাই—দিনপাত হইত কিসে ? শ্ৰীশ। কোন দিন উপবাস—কোন দিন ভিক্ষা—তুমি পাগল! এই বলিয়া শ্ৰীশচন্দ্র নগেন্দ্রকে তাড়না করিলেন। কেন না, নগেন্দ্র আপনার হস্তদ্বারা আপনার কন্ঠরোধ করিতেছেন, দেখিতে পাইলেন। বলিলেন, “মরিলে কি সহেযািমদুখীকে পাইবে ?” এই বলিয়া নগেন্দ্রের হসন্ত লইয়া আপনার হস্তমধ্যে রাখিলেন। নগেন্দ্ৰ বলিলেন, “বলা ৷” শ্ৰীশ। তুমি সিথর হইয়া না। শনিলে আমি আর বলিব না। কিন্তু শ্ৰীশচন্দ্রের কথা আর নগেন্দ্রের কণে প্রবেশ করিল না। তাঁহার চেতনা বিলপতি হইয়াছিল। নগেন্দ্র মাদ্রিতনয়নে সবগারাঢ় সৰ্য্যেমখীর রােপ ধ্যান করিতেছিলেন। দেখিতেছিলেন, তিনি রত্নসিংহাসনে রাজরাণী হইয়া বসিয়া আছেন ; চারি দিক হইতে শীতল সমগন্ধময় পবন তাঁহার আলীকদম দালাইতেছে ; চারি দিকে পােপনিশ্চিমত বিহঙগগণ উড়িয়া বীণারবে গান করিতেছে। দেখিলেন, তাঁহার পদতলে শত শত কেকিনন্দ ফটিয়া রহিয়াছে; তাঁহার সিংহাসনচন্দ্ৰাতপে শত চন্দ্র জীবলিতেছে ; চারি পাশে বা শত শত নক্ষত্র জীবলিতেছে। দেখিলেন, নগেন্দ্র স্বয়ং এক অন্ধকারপণ স্থানে পড়িয়া আছেন; তাঁহার সব্বাঙ্গে বেদনা; আসরে তাঁহাকে বোত্রাঘাত করিতেছে; সােয্যমখী অঙ্গলিসঙেকতে তাহাদিগকে নিষেধ করিতেছেন। অনেক যত্নে শ্ৰীশচন্দ্র নগেন্দ্রের চেতনাবিধান করিলেন। চেতনাপ্রাপিত হইয়া নগেন্দ্ৰ উচ্চৈঃসববে ডাকিলেন, “সৰ্য্যমখি! প্ৰাণাধিকে ! কোথায় তুমি ?” চীৎকার শনিয়া শ্ৰীশচন্দ্র সস্তম্ভিত এবং ভীত হইয়া নীরবে বসিলেন। ক্ৰমে নগেন্দ্র স্বভাবে পািনঃসস্থাপিত হইয়া বলিলেন, “বল।” শ্ৰীশচন্দ্র ভীত হইয়া বলিলেন, “আর কি বলিব ?” নগেন্দ্র। বল, নহলে আমি এখনই প্ৰাণত্যাগ করিব। ভীত শ্ৰীশচন্দ্র পনবার বলিতে লাগিলেন, “সােয্যমখী অধিক দিন। এরপ কািট পান নাই। একজন ধনাঢ্য ব্রাহ্মণ সপরিবারে কাশী যাইতেছিলেন। তিনি কলিকাতা পয্যন্ত নৌকাপথে আসিতেছিলেন, একদিন নদীকালে সহেযািমখী বক্ষমতুলে শয়ন করিয়াছিলেন, ব্রাহ্মণেরা সেইখানে পাক করিতে উঠিয়াছিলেন। গহিণীর সহিত সৰ্য্যেমখনীর আলাপ হয়। সৰ্য্যেমখীর অবস্থা দেখিয়া এবং চরিত্রে প্রীত হইয়া ব্রাহ্মণগহিণী তাঁহাকে নৌকায় তুলিয়া লইলেন। সত্যািমদুখী তাঁহার সাক্ষাতে বলিয়াছিলেন যে, তিনিও কাশী যাইবেন ।” নগেন্দ্ৰ। সে ব্রাহ্মণের নাম কি ? বাটী কোথায় ? নগেন্দ্ৰ মনে মনে কি প্রতিজ্ঞা করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাহার পর ?” শ্ৰীশ। ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাঁহার পরিবারস্থার ন্যায় সংখ্যমখী বাঁহ পৰ্যন্ত গিয়াছিলেন। কলিকাতা পৰ্যন্ত নৌকায়, কলিকাতা হইতে রাণীগঞ্জ পৰ্য্যন্ত রেলে, রাণীগঞ্জ হইতে বালকট্রেণে গিয়াছিলেন ; এ পয্যন্ত হাঁটিয়া ক্লেশ পান নাই। নগেন্দ্ৰ। তার পর ব্রাহ্মণ তাঁহাকে বিদায় দিল ? শ্ৰীশ । না ; সনুষ্যমখেী আপনি বিদায় লইলেন। তিনি আর কাশী গেলেন না। কত দিন তোমাকে না দেখিয়া থাকিবেন ? তোমাকে দেখিবার মানসে বহির্ব হইতে পদব্রজে ফিরিলেন। কথা বলিতে শ্ৰীশচন্দ্রের চক্ষে জল আসিল। তিনি নগেন্দ্রের মািখপানে চাহিয়া দেখিলেন। শ্ৰীশচন্দ্রের চক্ষের জলে নগেন্দ্রের বিশেষ উপকার হইল। তিনি শ্ৰীশচন্দ্রের কন্ঠলাগান হইয়া তাঁহার কাঁধে মাথা রাখিয়া রোদন করিলেন। শ্ৰীশচন্দ্রের বাটী আসিয়া এ পৰ্য্যন্ত নগেন্দ্র রোদন করেন নাই—তাঁহার শোক রোদনের অতীত। এখন রন্ধ শোকপ্রবাহ বেগে বহিল। নগেন্দ্ৰ শ্ৰীশচন্দ্রের Ꮼ Ꮪ←Ꮼ