পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ সকন্ধে মাখ রাখিয়া বালকের মত বহ ক্ষণ রোদন করিলেন। উহাতে যন্ত্রণার অনেক উপশম হইল। যে শোকে রোদন নাই, সে যমের দত। নগেন্দ্র কিছর শান্ত হইলে শ্ৰীশচন্দ্ৰ বলিলেন, “এসব কথায় আজ আর আবশ্যক নাই।” নগেন্দ্র বলিলেন, “আর বলিবেই বা কি ? অবশিস্ট যাহা যাহা ঘাঁটিয়াছিল, তাহা ত চক্ষে দেখিতে পাইতেছি। বহি হইতে তিনি একাকিনী পদব্রজে মধ্যপরে আসিয়াছিলেন। পথ হাঁটার পরিশ্রমে, অনাহারে, রৌদ্র-বন্টিতে, নিরাশ্রয়ে আর মনের ক্লেশে সৰ্য্যেমখী রোগগ্ৰস্ত হইয়া মরিবার জন্য পথে পড়িয়াছিলেন।” শ্ৰীশচন্দ্র নীরব হইয়া রহিলেন। পরে কহিলেন, “ভাই, ব্যথা কেন আর সে কথা ভাব ? তোমার দোষ কিছই নাই। তুমি তাঁর অমতে বা অবাধ্য হইয়া কিছই কর নাই। যাহা আত্মদোষে ঘটে নাই, তার জন্য অন্যতাপ বন্ধিমানে করে না।” নগেন্দ্রনাথ বঝিলেন না। তিনি জানিতেন, তাঁরই সকল দোষ; তিনি কেন বিষবক্ষের বীজ হৃদয় হইতে উচ্ছিন্ন করেন নাই ? •চত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ হীরার বিষবক্ষের ফল হীরা মহারাত্ন কপদকের বিনিময়ে বিক্ৰয় করিল। ধৰ্ম্মম চিরকম্পেট রক্ষিত হয়, কিন্তু এক দিনের অসাবধানতায় বিনম্ৰাট হয়। হীরার তাহাই হইল। যে ধনের লোভে হীরা এই মহারাত্ন বিক্ৰয় করিল, সে এক কড়া কাণা কড়ি। কেন না, দেবেন্দ্রের প্রেম বন্যার জলের মত ; যেমন পঙিকল, তেমনি ক্ষণিক। তিন দিনে বন্যার জল সরিয়া গেল, হীরাকে কাদায় বসাইয়া রাখিয়া গেল। যেমন কোন কোন কৃপণ অথচ যশোলিপস ব্যক্তি বহকালাবধি প্ৰাণপণে সঞিতাৰ্থ রক্ষা করিয়া, পত্রোদবাহ বা অন্য উৎসব উপলক্ষে এক দিনের সখের জন্য ব্যয় করিয়া ফেলে, হীরা তেমনি এত দিন যত্নে ধৰ্ম্মম রক্ষা করিয়া, এক দিনের সখের জন্য তাহা নম্ৰাট করিয়া উৎসস্টার্থ কৃপণের ন্যায় চিরান শোচনার পথে দন্ডায়মান হইল। ক্ৰীড়াশীল বালক কর্তৃক আলেপাপভুক্ত অপরূত্ব চতফলের ন্যায়, হীরা দেবেন্দ্রকত্ত্বক পরিত্যক্ত হইলে, প্রথমে হৃদয়ে দারণ ব্যথা পাইল । কিন্তু কেবল পরিত্যক্ত নহে!—সে দেবেন্দ্রের দ্বারা যেরপে অপমানিত ও মৰ্ম্মম পীড়িত হইয়াছিল, তাহা সত্ৰীলোকমধ্যে অতি অধমারও অসহ্য। যখন, দেখা-সাক্ষাতের শেষ দিনে হীরা দেবেন্দ্রের চরণাবিলন্ঠিত হইয়া বলিয়াছিল যে, “দাসীরে পরিত্যাগ করিও না,” তখন দেবেন্দ্র তাহাকে বলিয়াছিলেন যে, “আমি কেবল কুন্দনন্দিনীর লোভে তোমাকে এত দীর সম্মানিত করিয়াছিলাম—যদি কুন্দের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করাইতে পাের, তবেই তোমার সঙ্গে আমার আলাপ থাকিবে—নচেৎ এই পৰ্যন্ত। তুমি যেমন গবিবর্তিতা, তেমনি আমি তোমাকে প্রতিফল দিলাম; এখন তুমি এই কলঙ্কের ডালি মাথায় লইয়া গহে যাও।” হীরা ক্ৰোধে অন্ধকার দেখিতে লাগিল। যখন তাহার মস্তক স্থির হইল, তখন সে দেবেন্দ্রের সম্মখে দাঁড়াইয়া, ভ্ৰকুটী কুটিল করিয়া, চক্ষ, আরক্ত করিয়া, যেন শতমখে দেবেন্দ্রকে তিরস্কার করিল। মািখরা, পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোকেই যেরােপ তিরস্কার করিতে জানে, সেইরােপ তিরস্কার করিল। তাহাতে দেবেন্দ্রের ধৈর্যাচুৰ্গতি হইল। তিনি হীরাকে পদাঘাত করিয়া প্রমোদোদ্যান হইতে বিদায় করিলেন। হীরা পাপিস্রষ্ঠা—দেবেন্দ্ৰ পাপিষ্পাঠ এবং পশ্য। এইরুপ উভয়ের চিরপ্রেমের প্রতিশ্রতি সফল হইয়া পরিণত হইল। হীরা পদাহত হইয়া গহে গেল না। গোবিন্দপরে এক জন চাণ্ডডাল চিকিৎসা ব্যবসায় করিত। সে কেবল চাণ্ডডালাদি ইতর জাতির চিকিৎসা করিত। চিকিৎসা বা ঔষধ কিছই জানিত না—কেবল বিষবড়ির সাহায্যে লোকের প্রাণসংহার করিত। হীরা জানিত যে, সে বিষবড়ি প্রস্তুত করার জন্য উদ্ভিজজ বিষ, খনিজ বিষ, সপ'বিষাদি নানা প্রকার সদ্যঃপ্রাণাপহারী বিষ সংগ্ৰহ করিয়া রাখিত। হীরা সেই রাত্রে তাহার ঘরে গিয়া তাহাকে ডাকিয়া গোপনে বলিল যে, “একটা শিয়ালে রোজ আমার হাঁড়ি খাইয়া যায়। আমি সেই শিয়ালটাকে না মারিলে তিস্ঠিতে পারি না। মনে করিয়াছি, ভাতের সঙ্গে বিষ মিশাইয়া রাখিব—সে আজি হাঁড়ি খাইতে Ꮼ ᏚᎸ