পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

वर्ग७कब ब्रष्न्बव्ी দ্বিচ্যুত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ অন্ধকার পরী—অন্ধকার জীবন গোবিন্দপারে দত্তদিগের বহৎ অট্টালিকা, ছয় মহল বাড়ী-নগেন্দ্র সােয্যমখী বিনা সব অন্ধকার। কাছারি বাড়ীতে আমলারা বসে, অন্তঃপরে কেবল কুন্দনন্দিনী, নিত্য প্রতিপাল্য কুটাম্বিনীদিগের সহিত বাস করে। কিন্তু চন্দ্র বিনা রোহিণীতে আকাশের কি অন্ধকার যায় ? কোণে কোণে মাকড়সার জাল—ঘরে ঘরে ধলোর রাশি, কাণি সে কাণি সে পায়রার বাসা, কড়িতে কড়িতে চড়াই। বাগানে শকােনা পাতার রাশি, পাকুরেতে পানা। উঠানেতে শিয়াল, ফলবাগানে জঙ্গল ভান্ডার ঘরে ইন্দর। জিনিসপত্র ঘেরাটোপে ঢাকা। অনেকেতেই ছাতা ধরেছে। অনেক ইন্দরে কেটেছে। ছ'চা, বিছা, বাদােড়, চামচিকে অন্ধকারে অন্ধকারে দিবারাত্র বেড়াইতেছে। সংযমখীর পোষা পাখীগােলাকে প্রায় বিড়ালে ভক্ষণ করিয়াছে। কোথাও কোথাও ভোজনাবশিষ্ট পাখাগলি পড়িয়া আছে। হাঁসগলা শােগালে মারিয়াছে। ময়রাগােলা বনো হইয়া গিয়াছে। গোরগলার হাড় উঠিয়াছে।--আর দািধ দেয় না। নগেন্দ্রের কুক্করগলার সাফত্তি নাই—খেলা নাই, ডাক নাই-বাঁধাই থাকে। কোনটা মরিয়া গিয়াছে—কোনটা ক্ষেপিয়া গিয়াছে, কোনটা পলাইয়া গিয়াছে। ঘোড়াগলার নানা রোগ—অথবা নীরোগেই রোগ। আস্তাবলে যেখানে সেখানে খড় কুটা, শকােনা পাতা, ঘাস, ধলা আর পায়রার পালক। ঘোড়া সকল ঘাস-দানা কখনও পায়, কখনও পায় না। সহিসেরা প্রায় আস্তাবলমখ হয় না; সহিসানীমহলেই থাকে। আটালিকার কোথাও আলিশা ভাঙিগয়াছে, কোথাও জমাট খসিয়াছে; কোথাও সাসাঁনী, কোথাও খড়খড়ি, কোথাও রেলিং টাটিয়াছে। মেটিঙেগর উপর বান্টির জল, দেয়ালের পেন্টের উপর বসাধারা, বক কেশের উপর কুমীরপোকার বাসা, ঝাড়ের ফানসের উপর চড়াইয়ের বাসার খড়কুটা। গহে লক্ষয়ী নাই। লক্ষয়ী বিনা বৈকুণ্ঠও লক্ষীছাড়া হয়। যে উদ্যানে মালী নাই, ঘাসে পরিপািণ হইয়া গিয়াছে, সেখানে যেমন কখনও একটি গোলাপ কি একটি স্থলপদ্ম ফটে, এই গহমধ্যে তেমনি একা কুন্দনন্দিনী বাস করিতেছিল। যেমন আর পাঁচজনে খাইত পরিত, কুন্দও তাই। যদি কেহ তাকে গহিণী ভাবিয়া কোন কথা কহিত, কুন্দ ভাবিত, আমায় তামাসা করিতেছে। দেওয়ানজি যদি কোন কথা জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইতেন, ভয়ে কুন্দের বািক দাঁড় দাঁড় করিত। বাসতবিক কুন্দ দেওয়ানজিকে বড় ভয় করিত। ইহার একটি কারণও ছিল। নগেন্দ্র কুন্দকে পত্র লিখিতেন না; সতরাং নগেন্দ্র দেওয়ানজিকে যে পত্ৰগলি লিখিতেন, কুন্দ তাঁহাই চাহিয়া আনিয়া পড়িত। পড়িয়া, আর ফিরাইয়া দিত না।--সেইগলি পাঠ তাহার সন্ধ্যাগায়ত্ৰী হইয়াছিল। সব্বদা ভয়, পাছে দেওয়ান পত্রগলি ফিরাইয়া চায়। এই ভয়ে দেওয়ানের নােম শনিলেই কুন্দের মািখ শকাইত। দেওয়ান হীরার কাছে। এ কথা জানিয়াছিলেন। পত্ৰগলি আর চাহিতেন না। আপনি তাহার নকল রাখিয়া কুন্দকে পড়িতে দিতেন। বাসতবিক, সােয্যমখী যন্ত্রণা পাইয়াছিলেন—কুন্দ কি পাইতেছে না ? সােয্যমখেী স্বামীকে ভালবাসিতেন-কুন্দ কি বাসে না ? সেই ক্ষদ্র হৃদয়খানির মধ্যে অপরিমিত প্ৰেম ! প্রকাশের শক্তি নাই বলিয়া, তাহা বিরদ্ধে বায়র ন্যায় সতত কুন্দের সে হৃদয়ে আঘাত করিত। বিবাহের আগ্নে, বাল্যকালাবধি কুন্দ নগেন্দ্রকে ভালবাসিনাছিল—কাহাকে বলে নাই, কেহ জানিতে পারে নাই। নগেন্দ্রকে পাইবার কোন বাসনা করে নাই—আশাও করে নাই, আপনার নৈরাশ্য আপনি সহ্য করিত। তাকে আকাশের চাঁদ ধরিয়া হাতে দিল। তার পর—এখন কোথায় সে চাঁদ ? কি দোষে তাকে নগেন্দ্ৰ পায়ে ঠেলিয়াছেন ? কুন্দ এই কথা রাত্রিদিন ভাবে, রাত্ৰিদিন কাঁদে । ভাল, নগেন্দ্ৰ নাই ভালবাসনে—তাকে ভালবাসিবেন, কুন্দের এমন কি ভাগ্য—একবার কুন্দ তাঁকে দেখিতে পায় না কেন ? শােধ, তাই কি ? তিনি ভাবেন, কুন্দই এই বিপত্তির মািল, সকলেই ভাবে, কুন্দই অনাথের মলে। কুন্দ ভাবে, কি দোষে আমি সকল অনাথের মািল ? ? কুক্ষণে নগেন্দ্ৰ কুন্দকে বিবাহ করিয়াছিলেন। যেমন উপাস বক্ষের তলায় যে বসে, সেই মরে, তেমনি এই বিবাহের ছায়া যাহাকে সপশ করিয়াছে, সেই মরিয়াছে। আবার কুন্দ ভাবিত, “সৰ্য্যমখীর এই দশা আমা হতে হইল। সােয্যমখী আমাকে রক্ষা করিয়াছিল—আমাকে ভগিনীর ন্যায়। ভালবাসিত—তাহাকে পথের কাঙ্গালী করিলাম ; আমার মত V) O O