পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ অভাগিনী কি আর আছে ? আমি মরিলাম না কেন ? এখন মারি না কেন ?” আবার ভাবিত, “এখন মরিব না। তিনি আসন—তাঁকে আর একবার দেখি—তিনি কি আর আসিবেন না ?” কুন্দ সােয্যমখীর মাতৃত্যুসংবাদ পায় নাই। তাই মনে মনে বলিত, “এখন শােধ শােধ মরিয়া কি হইবে ? যদি সােয্যমখী ফিরিয়া আসে, তবে মরিব। আর তার সখের পথে কাঁটা হব না।” abङ्गा द्धि Karge পরিচ্ছেদ 8 21@ाीeन्म কলিকাতার আবশ্যকীয় কায্য সমাপত হইল। দানপত্র লিখিত হইল। তাহাতে ব্ৰহ্মচারীর এবং অজ্ঞাতনামা ব্ৰাহ্মণের পরিস্কারের বিশেষ বিধি রহিল। তাহা হরিপরে রেজেন্ডট্ৰী হইবে, এই কারণে দানপত্র সঙ্গে করিয়া নগেন্দ্ৰ গোবিন্দপরে গেলেন। শ্ৰীশচন্দ্রকে যথোচিত যানে অনসরণ করিতে উপদেশ দিয়া গেলেন। শ্ৰীশচন্দ্র তাঁহাকে দানপত্রাদির ব্যবস্থা, এবং পদব্রজে গমন ইত্যাদি কায্য হইতে বিরত করিবার জন্য অনেক যত্ন করিলেন, কিন্তু, সে যত্ন নিস্ফল হইল। অগত্যা তিনি নদীপন্থায় তাঁহার অনগামী হইলেন। মন্ত্রীছাড়া হইলে কমলমণির চলে না, সুতরাং তিনিও বিনা জিজ্ঞাসাবাদে সতীশকে লইয়া শ্ৰীশচন্দ্রের নৌকায় গিয়া উঠিলেন । কমলমণি আগে গোবিন্দপারে আসিলেন, দেখিয়া কুন্দনন্দিনীর বোধ হইল, আবার আকাশে একটি তারা উঠিল। যে অবধি সহেযািমদুখী গািহত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন, সেই অবধি কুন্দনন্দিনীর উপর কমলমণির দািড়জায় ক্ৰোধ । মািখ দেখিতেন না। কিন্তু এবার আসিয়া কুন্দনন্দিনীর শভিক মাত্তি দেখিয়া কমলমণির রাগ দপ্তর হইল-দঃখ হইল। তিনি কুন্দনন্দিনীকে প্ৰফল্লিত করিবার জন্য যত্ন করিতে লাগিলেন, নগেন্দ্ৰ আসিতেছেন, সংবাদ দিয়া কুন্দের মখে হাসি দেখিলেন। সােয্যমখীর মাতৃত্যুসংবাদ দিতে কাজে কাজেই হইল। শনিয়া কুন্দ কাঁদিল। এ কথা শনিয়া, এ গ্রন্থের অনেক সন্দরী পাঠকারিণী মনে মনে হাসিবেন : আর বলিবেন, “মাছ মরেছে, বেরাল কাঁদে।” কিন্তু কুন্দ বড় নিকেবােধ। সতিন মরিলে যে হাসিতে হয়, সেটা তার মোটা বদ্ধিতে আসে নাই। বোকা মেয়ে, সতিনের জন্যই একটা কাঁদিল। আর তুমি ঠাকুরাণি! তুমি যে হেসে হেসে বলিতেছ, “মাছ মরেছে, বেরাল কাঁদে”—তোমার সতিন মরিলে তুমি যদি একটা কাঁদ, তা হইলে আমি বড় তোমার উপর খাসী হব। কমলমণি কুন্দকে শান্ত করিলেন। কমলমণি নিজে শান্ত হইয়াছিলেন। প্রথম প্রথম কমল অনেক কাঁদিয়াছিলেন—তার পরে ভাবিলেন, “কাঁদিয়া কি করিব ? আমি কাঁদিলে শ্ৰীশচন্দ্র অসখী হন—আমি কাঁদিলে সতীশ কাঁদে—কাঁদিলে ত সৰ্য্যেমখনী ফিরিবে না; তবে কেন এদের কাঁদাই ? আমি কখন সত্যািমখীকে ভুলিব না; কিন্তু আমি হাসিলে যদি সতীশ হাসে, তবে কেন হাসব না ?” এই ভাবিয়া কমলমণি রোদিন ত্যাগ করিয়া আবার সেই কমলমণি হইলেন । কমলমণি শ্ৰীশচন্দ্রকে বলিলেন, “এ বৈকুন্ঠের লক্ষয়ী ত বৈকুণ্ঠ ত্যাগ করিয়া গিয়াছে। তাই বোলে দাদা বৈকুণ্ঠে এসে কি বটপত্রে শোবেন ?” শ্ৰীশচন্দ্ৰ বলিলেন, “এসো, আমরা সব পরিস্কার করি।” অমনি শ্ৰীশচন্দ্র, রাজ, মজার, ফরাস, মালী, যেখানে যাহার প্রয়োজন, সেখানে তাহাকে নিযক্ত করিলেন। এদিকে কমলমণির দৌরাত্ম্যে ছ’চা, বাদােড়, চামচিকে মহলে বড় কিচিমিচ পড়িয়া গেল; পায়রাগােলা “বকম বকম” করিয়া এ কাণিশি ও কাণিশি করিয়া বেড়াইতে লাগিল, চড়াইগলা পলাইতে বাকুল—যেখানে সাসী বন্ধ, সেখানে দাবার খোলা মনে করিয়া ঠোঁটে কাচ লাগিয়া ঘরিয়া পড়িতে লাগিল; পরিচারিকারা ঝাঁটা হাতে জনে জনে দিকে দিকে দিগিবিজয়ে ছটিল। অচিরাৎ অট্টালিকা আবার প্রসন্ন হইয়া হাসিতে লাগিল। পরিশেষে নগেন্দ্ৰ আসিয়া পাহছিলেন। তখন সন্ধ্যাকাল। যেমন নদী, প্রথম জলোচ্ছবাসকালে অত্যন্ত বেগবতী, কিন্তু জোয়ার পরিলে গভীর জল শান্তভােব ধারণ করে, তেমনি নগেন্দ্রের সম্পপণ্য-শোক-প্রবাহ এক্ষণে গম্ভীর শান্তিরীপে পরিণত হইয়াছিল। যে দঃখ, তাহা কিছই কমে নাই; কিন্তু অধৈয্যের হ্রাস হইয়া আসিয়াছিল। তিনি স্থিরভাবে পৌরবগের সঙ্গে কথাবাত্তা কহিলেন, সকলকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন। কাহারও সাক্ষাতে তিনি সৰ্য্যেমখীর প্রসঙ্গ করিলেন না-কিন্তু তাঁহার ধীরভাব দেখিয়া সকলেই তাঁহার দঃখে দঃখিত হইল। G) OS