পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী লোকের কত বড় বড় দঃখ মাথার উপর দিয়া গেল—আর তুমি একটি দেখা করার বিলম্পবজন্য কাঁদিতেছ ?” “বড় বড় দঃখ” আবার কি প্রকার, কুন্দ তাহা কিছই বঝিতে পারিল না। হীরা তখন বলিতে লাগিল, “আমার মত যদি তোমাকে সহিতে হইত—তবে এত দিনে তুমি আত্মহত্যা করিতে। ” “আত্মহত্যা,” এই মহা অমঙ্গলজনক শব্দ কুন্দনন্দিনীর কাণে দারণ বাজিল। সে শিহরিয়া উঠিয়া বসিল। রাত্রিকালে অনেক বার সে আত্মহত্যার কথা ভাবিয়াছিল। হীরার মাখে। সেই কথা শনিয়া নরাশুিকতের ন্যান্য বোধ হইল। হীরা বলিতে লাগিল, ”তবে আমার দঃখের কথা বলি শািন। আমিও একজনকে আপনার প্রাণ অপেক্ষা ভালবাসিতাম। সে আমার স্বামী নহে।--কিন্তু যে পাপ করিয়াছি, তাহা মানিবের কাছে লাকাইলেই বা কি হইবে-সপস্ট স্বীকার করাই ভাল।” এই লজজাহীন কথা কুন্দের কণে প্রবেশও করিল না। তাহার কাণে সেই “আত্মহত্যা” শব্দ বাজিতেছিল। যেন ভূতে তাহার কাণে কাণে বলিতেছিল, “তুমি আত্মঘাতিনী হইতে পারিবে: এ যন্ত্রণা সহ ভাল, না মারা ভাল ?” হীরা বলিতে লাগিল, “সে আমার স্বামী নহে; কিন্তু আমি তাহাকে লক্ষ স্বামীর অপেক্ষা ভালবাসিতাম। সে আমাকে ভালবাসিত না ; আমি জানিতাম যে, সে আমাকে ভালবাসিত না। এবং আমার অপেক্ষা শতগণে নিগণ আর এক পাপিস্ঠাকে ভালবাসিত।” ইহা বলিয়া হীরা নতনয়না। কুন্দের প্রতি একবার অতি তীব্র কোপকটাক্ষা করিল, পরে বলিতে লাগিল, “আমি ইহা জানিয়া তাহার দিকে ঘেসিলাম না, কিন্তু একদিন আমাদের উভয়েরই দািববুদ্ধি হইল।” এইরপে আরম্ভ করিয়া, হীরা সংক্ষেপে কুন্দের নিকট আপনার দারণ ব্যথার পরিচয় দিল। কাহারও নাম ব্যক্ত করিল না; দেবেন্দ্রের নাম, কুন্দের নাম উভয়ই অব্যক্ত রহিল। এমত কোন কথা বলিল না। যে, তদ্দ্বারা, কে হীরার প্রণয়ী, কে বা সেই প্রণয়ীর প্রণয়িনী, তাহা অনভূত হইতে পারে। আর সকল কথা সংক্ষেপে প্রকাশ করিয়া বলিল। শেষে পদাঘাতের কথা বলিয়া কহিল, “বল দেখি, তাহাতে আমি কি করিলাম ?” কুন্দ জিজ্ঞাসা করিল, “কি করিলে?” হীরা হাত মািখ নাড়িয়া বলিতে লাগিল, “আমি তখনই চাঁড়াল কবিরাজের বাড়ীতে গেলাম। তাহার নিকট এমন সব বিষ আছে যে, খাইবামাত্র মানষে মরিয়া যায়।” কুন্দ ধীরতার সহিত, মদ, তার সহিত, কহিল, “তার পর ?” হীরা কহিল, “আমি বিষ খাইয়া মরিব বলিষ্যা বিষ কিনিয়াছিলাম, কিন্তু শেষে ভাবিলাম যে, পরের জন্য আমি মরিব কেন ? ইহা ভাবিয়া বিষ কোঁটায় পরিয়া বাক্সতে তুলিয়া রাখিয়াছি।” এই বলিয়া হীরা কক্ষান্তর হইতে তাহার বাক্স আনিল। সে বাক্সটি হীরা মনিববাড়ীর প্রসাদ, পরিস্কার এবং অপহরণের দ্রব্য ল্যুকাইবার জন্য সেইখানে রাখিত। হীরা সেই বাক্সতে নিজক্লীত বিষের মোড়ক রাখিয়াছিল। বাক্স খালিয়া হীরা কৌটার মধ্যে বিষের মোড়ক কুন্দকে দেখাইল। আমিষলোলািপ মাউজারবৎ কুন্দ তাহার প্রতি দণ্ডিট করিতে লাগিল। হীরা তখন যেন অন্যমনবশতঃ বাক্স বন্ধ করিতে ভুলিয়া গিয়া, কুন্দকে প্রবোধ দিতে লাগিল। এমত সময় অকস্মাৎ সেই প্রাতঃকালে নগেন্দ্রের পরীমধ্যে মঙ্গলজনক শঙ্খ এবং হলধবনি উঠিল। বিস্মিত হইয়া হীরা ছটিয়া দেখিতে গেল। মন্দভাগিনী কুন্দনন্দিনী সেই অবকাশে কৌটা হইতে বিষের মোড়ক চুরি করিল। অল্টচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ কুন্দের কায্যতৎপরতা হীরা আসিয়া শঙ্খধর্মনির যে কারণ দেখিল, প্রথম তাহার কিছই বঝিতে পারিল না। দেখিল, একটা বহৎ ঘরের ভিতর গহস্থ যাবতীয় সত্ৰীলোক, বালক এবং বালিকা সকলে মিলিয়া কাহাকে মন্ডলাকারে বেড়িয়া মহাকলরব করিতেছে। যাহাকে বেড়িয়া তাহারা কোলাহল করিতেছে—সে সত্ৰীলোক—হীরা কেবল তাহার কেশরাশি দেখিতে পাইল। হীরা দেখিল, সেই W)C)br