পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ কেশরাশি কৌশল্যাদি গণ সস্নিগধ তৈলনিষিক্ত করিষা, কেশরঞ্জিনীর দ্বারা রঞ্জিত করিতেছে। যাহারা তাহাকে মন্ডলাকারে বেড়িয়া আছে, তাহারা কেহ হাসিতেছে, কেহ। কাঁদিতেছে, কেহ বকিতেছে, কেহ আশীব্বাচন করিতেছে। বালক-ব গায়িতেছে, এবং করতালি দিতেছে। সকলকে বেড়িয়া বেড়িয়া কমলমণি শাঁকি বাজাইতেছেন। ও হল দিতেছেন, এবং কাঁদিতে কাঁদিতে হাসিতেছেন——এবং কখন কখন এদিক ওদিক চাহিয়া, এক একবার নিত্য করিতেছেন। দেখিয়া হীরা বিসিন্মত হইল। হীরা মন্ডলমধ্যে গলা বাড়াইয়া উকি মারিয়া দেখিল। দেখিয়া বিস্ময়বিহবল হইল। দেখিল যে, সােয্যমখী হমািতলে বসিয়া, সন্ধাময় সস্নেহ হাসি হাসিতেছেন। কৌশল্যাদি তাঁহার রক্ষে কেশভার কুস্যাম-সবাসিত তৈলসিক্ত করিতেছে। কেহ বা তাহা রঞ্জিত করিতেছে ; কেহ বা আদ্ৰ গাত্রমক্ষণীর দবারা তাঁহার গাত্র পরিমাজিজাত করিতেছে। কেহ বা তাঁহার পািকব পরিত্যক্ত অলঙকার্যসকল পরাইতেছে। সােয্যমখনী সকলের সঙ্গে মধ্যর কথা কহিতেছেন—কিন্তু লজিজতা, একটা একটি অপরাধিনী হইয়া মধর হাসি হাসিতেছেন। তাঁহার গন্ডে স্নেহমযুক্ত আশ্রম পড়িতেছে। সােয্যমখী মারিয়াছিলেন, তিনি আসিয়া আবার গহমধ্যে বিরাজ করিতেছেন, মধর হাসি হাসিতেছেন, ইহা দেখিয়াও হীরার হঠাৎ বিশ্ববাস হইল না। হীরা অসফটস্বরে একজন পৌরাসন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিল, “হাঁ গা, কে গা ?” কথা কৌশল্যার কাণে গেল। কৌশল্যা কহিল, “চেন না, নেকি ? আমাদের ঘরের লক্ষী আর তোমার যাম।” কৌশল্যা এত দিন। হীরার ভয়ে চোরের মত ছিল, আজি দিন পাইয়া ভালমতে চোখ ঘরাইয়া লইল । কেশবিন্যাস সমাপত হইলে এবং সকলের সঙ্গে আলাপ কুশল শেষ হইলে, সােয্যমখী কমলের কাণে কাণে বলিলেন, “তোমায় আমায় একবার কুন্দকে দেখিয়া আসি। সে আমার কাছে কোন দোষ করে নাই বা তাহার উপর আমার রাগ নাই। সে আমার এখন কনিষ্ঠা ভগিনী।” কেবল কমল ও সােয্যমখী কুন্দের সম্পভাষণে গেলেন। অনেকক্ষণ তাঁহাদের বিলম্ব হইল। শেষে কমলমণি ভয়নিক্লিঅ'টবদনে কুন্দের ঘর হইতে বাহির হইলেন। এবং অতিব্যসেত নগেন্দ্রকে ডাকিতে পাঠাইলেন। নগেন্দ্ৰ আসিলে, বধরা, ডাকিতেছে বলিয়া তাঁহাকে কুন্দের ঘর দেখাইয়া দিলেন। নগেন্দ্র তন্মধ্যে প্রবেশ করিলেন। দাবারে সােয্যমখীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। সাষ্যমখেী রোদন করিতেছিলেন। নগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে ?” সােয্যমখী বলিলেন, “সৰ্ব্বনাশ হইয়াছে। আমি এত দিনে জানিলাম, আমার কপালে একদিনেরও সখি নাই—নতুবা আমি আবার সখী হইবামাত্রই এমন সব্বনাশ হইবে কেন ?” নগেন্দ্র ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে ?” সােয্যমখী পনেরপি, রোদন কািরয়া কহিলেন, “কুন্দকে আমি বালিকা বয়স হইতেই মানষি করিয়াছি; এখন সে আমার ছোট ভগিনী, বহিনের ন্যায় তাহাকে আদর করিব সাধা করিয়া আসিয়াছিলাম। আমার সে সাধে ছাই পড়িল। কুন্দ বিষপান করিয়াছে।” নগেন্দ্র। সে কি ? স। তুমি তাহার কাছে থাক—আমি ডাক্তার বৈদ্য আনাইতেছি। এই বলিয়া সােয্যমখী নিৰ্ভীকান্ত হইলেন। নগেন্দ্র একাকী কুন্দনন্দিনীর নিকটে গেলেন। নগেন্দ্র প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, কুন্দনন্দিনীর মখে কালিমা ব্যাপিত হইয়াছে। চক্ষ তেজোহীন হইয়াছে, শরীর অবসন্ন হইয়া ভাঙিগয়া পড়িতেছে। উনপঞ্চাশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ এত দিনে মািখ ফাটিল কুন্দনন্দিনী খাটের বাজতে মাথা রাখিয়া, ভূতলে বসিয়াছিল—নগেন্দ্রকে নিকটে আসিতে দেখিয়া তাহার চক্ষর জল আপনি উছলিয়া উঠিল। নগেন্দ্র নিকটে দাঁড়াইলে, কুন্দ ছিন্ন বল্লীবৎ ○○ ふ