পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दकोश तरुनादव्ी তাঁহার পদপ্রান্তে মাথা লটাইয়া পড়িল। নগেন্দ্ৰ গদগদকণ্ঠে কহিলেন, “এ কি কুন্দ! তুমি কি দোষে আমাকে ত্যাগ করিয়া যাইতেছে ? কুন্দ কখন স্বামীর কথার উত্তর করিত না—আজি সে অন্তিমকালে মন্তকণ্ঠে স্বামীর সঙ্গে কথা কহিল—বলিল, “তুমি কি দোষে আমাকে ত্যাগ করিয়াছ ?” নগেন্দ্র তখন নিরািত্তর হইয়া, অধোবদনে কুন্দনন্দিনীর নিকটে বসিলেন। কুন্দ তখন আবার কহিল, “কাল যদি তুমি আসিয়া এমনি করিয়া একবার কুন্দ বলিয়া ডাকিতে-কাল যদি একবার আমার নিকটে এমনি করিয়া বসিতে——তবে আমি মরিতাম না। আমি অলপ দিন মাত্র তোমাকে পাইয়াছি-তোমাকে দেখিয়া আমার আজিও তৃপিত হয় নাই। আমি মরিতাম না।” এই প্রীতিপর্ণ শেলসম কথা শনিয়া নগেন্দ্র জানার উপর ললাট রক্ষা করিয়া, নীরবে: রহিলেন । তখন কুন্দ আবার কহিল—কুন্দ আজি বড় মািখরা, সে আর ত স্বামীর সঙ্গে কথা কহিবার দিন পাইবে না-কুন্দ কহিল, “ছি! তুমি আমন করিয়া নীরব হইয়া থাকিও না। আমি তোমার হাসিমােখ দেখিতে দেখিতে যদি না মরিলাম—তবে আমার মরণেও সাখ নাই।” সােয্যমখীও এইরনুপ কথা বলিয়াছিলেন ; অন্তকালে সবাই সমান। নগেন্দ্র তখন মৰ্ম্মম পীড়িত হইয়া কাতরস্বরে কহিলেন, “কেন তুমি এমন কাজ করিলে ? তুমি আমায় একবার কেন ডাকিলে না ?” কুন্দ, বিলয়ভুয়িত্ঠ জলদান্তব্বত্তিানী বিদ্যুতের ন্যায় মদ-মধরে দিব্য হাসি হাসিয়া কহিল, “তাহা ভাবিও না। যাহা বলিলাম, তাহা কেবল মনের আবেগে বলিয়াছি। তোমার আসিবার আগেই আমি মনে সিথর করিয়াছিলাম যে, তোমাকে দেখিয়া মরিব । মনে মনে সিথর করিয়াছিলাম যে, দিদি যদি কখনও ফিরিয়া আসেন, তবে তাঁহার কাছে তোমাকে রাখিয়া আমি মরিব—আর তাঁহার সখের পথে কাঁটা হইয়া থাকিব না। আমি মরিব বলিয়াই সিথর করিয়াছিলাম—তবে তোমাকে দেখিলে আমার মরিতে ইচ্ছা করে না।” নগেন্দ্র কোন উত্তর করিতে পারিলেন না। আজি তিনি বালিকা অবাকপট কুন্দনন্দিনীর নিকট নিরািত্তর হইলেন। কুন্দ ক্ষণকাল নীরব হইয়া রহিল। তাহার কথা কহিবার শক্তি আপনীত হইতেছিল। মাতু্য তাহাকে অধিকৃত করিতেছিল। নগেন্দ্র তখন, সেই মাতৃত্যুচ্ছায়ান্ধকারম্পিলান মখমন্ডলের স্নেহপ্ৰফল্লিতা দেখিতেছিলেন। তাহার সেই আধিক্লন্ট মাখে মন্দবিদ্যুন্নিন্দিত যে হাসি তখন দেখিয়াছিলেন, নগেন্দ্রের প্রাচীন বয়স পয্যন্ত তাহা হৃদয়ে অঙ্কিত ছিল । কুন্দ আবার কিছকাল বিশ্রামলাভ করিয়া, অপরিতৃতের ন্যায় পনেরপি ক্লিন্টনিশবাসসহকারে কহিতে লাগিল, “আমার কথা কহিবার তৃষ্ণা নিবারণ হইল না।--আমি তোমাকে দেবতা বলিয়া জানিতাম।---সাহস করিয়া কখনও মািখ ফটিয়া কথা কহি নাই। আমার সাধ মিটিল না——আমার শরীর অবসন্না হইয়া আসিতেছে——আমার মািখ শকাইতেছে--জিব টানিতেছে—আমার আর বিলম্ব নাই।“ এই বলিয়া কুন্দ, পৰ্য্যওকাবলম্বন ত্যাগ করিয়া, ভূমে শয়ন করিয়া, নগেন্দ্ৰেব অঙ্গে মাথা রাখিল এবং নয়ন মাদ্রিত করিয়া নীরব হইল। ডাক্তার আসিল। দেখিয়া শনিয়া ঔষধ দিল না।--আর ভরসা নাই দেখিয়া সম্পলানমখে প্রত্যাবত্তন করিল। পরে সময় আসন্ন বঝিয়া, কুন্দ সৰ্য্যেমখী ও কমলমণিকে দেখিতে চাহিল। তােহর । উভয়ে আসিলে, কুন্দ তাঁহাদের পদধলি গ্রহণ করিল। তাহারা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করি, লন। তখন কুন্দনন্দিনী স্বামীর পদযািগল।মধ্যে মাখ লে.কাইল। তাহাকে নীরব দেখিয়া দাই জনে আবার উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিয়া উঠিলেন। কিন্তু কুন্দ আর কথা কহিল না। ক্লমে ক্ৰমে চৈতন্যভ্রস্টা হইয়া স্বামীর চরণমধ্যে মািখ রাখিয়া, নবীন যৌবনে কুন্দনন্দিনী প্রাণত্যাগ করিল। ‘অপরিস্ফটি কুন্দকুসমে শকাইল। প্রথম রোদন সংবরণ করিয়া সম্যািমদুখী মতা সপত্নীপ্ৰতি চাহিয়া বলিলেন, “ভাগ্যবতি । তোমার মত প্ৰসন্ন অদ্যটি আমার হউক। আমি যেন এইরনুপে স্বামীর চরণে মাথা রাখিয়া প্রাণত্যাগ করি।” Ꮼ8Ꭴ