পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• বিষবক্ষ এই বলিয়া সােয্যমখী রোরােদ্যমান সবামীর হস্তধারণ করিয়া সস্থানান্তরে লইয়া গেলেন। পরে নগেন্দ্র ধৈৰ্য্যাবলম্বনপৰ্ব্ববাক কুন্দকে নদীতীরে লইয়া যথাবিধি সৎকারের সহিত, সেই অতুল সবণ প্রতিমা বিসৰ্জন করিয়া আসিলেন। পঞ্চাশত্তম পরিচ্ছেদ ঃ সমাপিত কুন্দনন্দিনীর বিয়োগের পর সকলেই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল যে, কুন্দনন্দিনী বিষ কোথায় পাইল । তখন সকলেই সন্দেহ করিল যে, হীরার এ কাজ । তখন হীরাকে না দেখিয়া, নগেন্দ্র তাহাকে ডাকিতে পাঠাইলেন। হীরার সাক্ষাৎ পাওয়া গেল না। কুন্দনন্দিনীর মাতুকাল হইতে হীরা আদ্যশ্যা হইয়াছিল। সেই অবধি আর কেহ সে দেশে হীরাকে দেখিতে পাইল না। গোবিন্দপরে হীরার নাম লৈাপ হইল। এক বার মাত্র বৎসরেক পরে, সে দেবেন্দ্রকে দেখা দিয়াছিল। তখন দেবেন্দ্রের রোপিত বিষবক্ষের ফল ফলিয়াছিল। সে অতি কদৰ্য্য রোগগ্ৰস্ত হইয়াছিল। তদাপরি, মদ্যসেবার বিরতি না হওয়ায় রোগ দানিবাৰ্য্য হইল। দেবেন্দ্র মন্ত্যুশয্যায় শয়ন করিল। কুন্দনন্দিনীর মাতুত্যুর পরে বৎসরেকমধ্যে দেবেন্দ্রেরও মাতৃত্যুকাল উপস্থিত হইল। মরিবার দই চারি দিন পবে সে গহমধ্যে রাগনাশয্যায় উত্থানশক্তিরহিত হইয়া শয়ন করিয়া আছে—এমত সময় তাহার গহি দবারে বড় গোল উঠিল। দেবেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কি ?” ভূত্যেরা কহিল যে, “একজন পাগলী আপনাকে দেখিতে চাহিতেছে। বারণ মানে না।” দেবেন্দ্ৰ অনািমতি করিল, “আসক।” উন্মাদিনী গহমধ্যে প্রবেশ করিল। দেবেন্দ্ৰ দেখিল যে, সে একজন অতি দীনভাবাপন্ন সত্ৰীলোক। তাহার উন্মাদের লক্ষণ বিশেষ কিছল বঝিতে পারিল না—কিন্তু অতি দীনা ভিখারিণী বলিয়া বোধ করিল। তাহার বয়স অলপ এবং পািকব লাবণ্যের চিহ্নসকল বৰ্ত্তমান রহিয়াছে। কিন্তু এক্ষণে তাহার অত্যন্ত দদশা। তাহার বসন অতি মলিন, শতধা ছিন্ন, শতগ্রন্থিবিশিস্ট এবং এত অলপ্যােয়ত যে, তাহা জানার নীচে পড়ে নাই, এবং তদ্দ্বারা পাঠ ও মস্তক আবিত হয় নাই। তাহার কেশ রক্ষ, অবেণীবদ্ধ, ধালিধসরিত—কদাচিৎ বা জটায্যক্ত । তাহার তৈলবিহীন অঙ্গে খড়ি উঠিতেছিল এবং কাদা পড়িয়াছিল। ভিখারিণী দেবেন্দ্রের নিকট আসিয়া এরােপ তাঁৱদন্টি করিতে লাগিল যে, তখন দেবেন্দ্র বঝিল, ভূত্যাদিগের কথাই সত্য—এ কোন উন্মাদিনী । উমােদিনী অনেক ক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “আমায় চিনিতে পারিলে না ? আমি s' দেবেন্দ্র তখন চিনিল যে, হীরা। চমৎকৃত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার এমন দশা কে করল ?” হীরা রোষদীপত কটাক্ষে অধর দংশন করিয়া মন্টিবদ্ধহস্তে দেবেন্দ্রকে মারিতে আসিল। পরে স্থির হইয়া কহিল, “তুমি আবার জিজ্ঞাসা করা—আমার এমন দশা কে করিল ? আমার এ দশা তুমিই করিয়াছ। এখন চিনিতেছি না-কিন্তু এক দিন আমার খোসামোদ করিয়াছিলে। এখন তোমার মনে পড়ে না, কিন্তু এক দিন এই ঘরে বসিয়া আমার এই পা ধরিয়া (এই বলিয়া হীরা খাটের উপর পা রাখিল) গাহিয়াছিলে— “সমরগরিলখণীডনং মম শিরসি মন্ডনং দেহি পদ পল্লবমদারং।” এইরনুপ কত কথা মনে করাইয়া দিয়া, উন্মাদিনী বলিতে লাগিল, “যে দিন তুমি আমাকে উৎসস্ট করিয়া নাথি মারিয়া তাড়াইলে, সেই দিন হইতে আমি পাগল হইয়াছি। আমি আপনি বিষ খাইতে গিয়াছিলাম-—একটা আহাদের কথা মনে পড়িল—সে বিষ আপনি না। খাইয়া তোমাকে কি তোমার কুন্দকে খাওয়াইব । সেই ভরসায় কয় দিন কোন মতে আমার পীড়া লকাইয়া রাখিলাম—আমার এ রোেগ কখন আসে, কখন যায়। যখন আমি উন্মত্ত হইতাম, তখন ঘরে পড়িয়া থাকিতাম; যখন ভাল থাকি,তাম, তখন কাজকৰ্ম্মম করিতাম। শেষে তোমার O8 S