পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

झेन्द्धा পাইলাম। তাই ধরিয়া চলিলাম। যাইতে যাইতে পথের রেখা আর ও সপস্ট হইল। ভরসা হইল। গ্রাম পাইব । তখন আর এক বিপদ মনে হইল—গ্রামে যাওয়া হইবে না। যে ছোড়া মড়া কাপড়ট কু ডাকাইতেরা আমাকে পরাইয়া দিয়া গিয়াছিল, তাহাতে কোন মতে কোমর হইতে হাঁট পয্যন্ত ঢাকা পড়ে—আমার বকে কাপড় নাই। কেমন করিয়া লোকালয়ে কালামখ দেখাইব ? যাওয়া হইবে না—এইখানে মরিতে হইবে। ইহাই সিথর করিলাম। কিন্তু পথিবীকে রবিরশিমপ্রভাসিত দেখিয়া, পক্ষিগণের কলক জন শনিয়া, লতায় লতায় পািপরাশি দলিতে দেখিয়া আবার বাঁচিবার ইচ্ছা প্রবল হইল। তখন গাছ হইতে কতগলো পাতা ছিাড়িয়া ছোেটা দিয়া গাঁথিয়া, তাহা কোমরে ও গলায় ছোেটা দিয়া বাঁধিলাম। এক রকম লজজা নিবারণ হইল, কিন্তু পাগলের মত দেখাইতে লাগিল। তখন সেই পথ ধরিয়া চলিলাম। যাইতে যাইতে গরীর ডাক শনিতে পাইলাম। বঝিলাম, গ্রাম নিকট। কিন্তু আর ত চলিতে পারি না। কখনও চলা অভ্যাস নাই। তার পর সমস্ত রাত্ৰি জাগরণ, রাত্রির সেই অসহ্য মানসিক ও শারীরিক কস্ট; ক্ষধা তৃষ্ণা। আমি অবসন্ন হইয়া পথিপাশ্যবস্থা এক বােক্ষতলে শাইয়া পড়িলাম। শইবা মাত্র নিদ্রাভিভূত হইলাম। নিদ্রায় স্বপন দেখিলাম যে, মেঘের উপর বসিয়া ইন্দ্ৰালয়ে শবশঙ্কুরবাড়ী গিয়াছি। স্বয়ং রতিপতি যেন আমার স্বামী—রতিদেবী আমার সপত্নী—পারিজাত লইয়া তাহার সঙেগ কোন্দল করিতেছি। এমন সময়ে কাহারও সপশোঁ ঘািম ভাঙিগল। দেখিলাম, একজন যােবা পরিষ, দেখিয়া বোধ হইল, ইতর অন্ত্যজ জাতীয়, কুলী-মজনুরের মত, আমার হাত ধরিয়া টানিতেছে। সৌভাগ্যক্লামে একখানা কাঠ সেখানে পড়িয়াছিল। তাহা তুলিয়া লইয়া ঘরাইয়া সেই পাপিন্ঠের মাথায় মারিলাম। কোথায় জোর পাইলাম জানি না, সে ব্যক্তি মাথায় হাত দিয়া উদ্ধৰ্ব্বশবাসে পলাইল । কাঠখানা আর ফেলিলাম না ; তাহার উপর ভর করিয়া চলিলাম। অনেক পথ হাঁটিয়া, একজন বাদ্ধা সত্ৰীলোকের সাক্ষাৎ পাইলাম। সে একটা গাই তাড়াইয়া লইয়া যাইতেছিল। তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, মহেশপাের কোথায় ? মনোহরপরই বা কোথায় ? প্রাচীনা বলিল, “মা, তুমি কে ? আমন সন্দের মেয়ে কি পথে ঘাটে একা বেরতে আছে ? আহা মরি, মরি, কি রােপ গা! তুমি আমার ঘরে আইসি।” তাহার ঘরে গেলাম। সে আমাকে ক্ষধাতুরা দেখিয়া গাইটি দইয়া একটি দধি খাইতে দিল । সে মহেশপর চিনিত। তাহাকে আমি বলিলাম যে, তোমাকে টাকা দেওয়াইব—তুমি আমাকে সেখানে রাখিয়া আইস। তাহাতে সে কহিল যে, আমার ঘর-সংসার ফেলিয়া যাইব কি প্রকারে ? তখন সে যে পথ বলিয়া দিল, আমি সে পথে গেলাম। সন্ধ্যা পয্যন্ত পথ হটিলাম—তাহাতে অত্যন্ত শ্রানিত বোধ হইল। একজন পথিককে জিজ্ঞাসা করিলাম, “হাঁ গা, মহেশপাের। এখান হইতে কত দাির ? " সে আমাকে দেখিয়া সস্তম্ভিতের মত রহিল। অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া কহিল, “তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ ?” যে গ্রামে প্রাচীনা আমাকে পথ বলিয়া দিয ছিল, আমি সেই গ্রামের নাম করিলাম। তাহতে পথিক কহিল যে, “তুমি পথ ভুলিয়াছ, বরাবর উলটা আসিয়াছ। মহেশপাের এখান হইতে এক দিনের পথ।” আমার মাথা ঘরিয়া গেল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “তুমি কোথায় যাইবে ?” সে বলিল, “আমি এই নিকটে গৌরীগ্রামে যাইব ।” আমি অগত্যা তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলাম। গ্ৰামমধ্যে প্রবেশ করিয়া সে আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি এখানে কাহার বাড়ী যাইবে ?” আমি কহিলাম, “আমি এখানে কাহাকেও চিনি না। একটা গাছতলায় শয়ন করিয়া থাকিব। " পথিক কহিল, “তুমি কি জাতি ?” আমি কহিলাম, “আমি কায়স্থ । ” সে কহিল, “আমি ব্রাহ্মণ। তুমি আমার সঙ্গে আইস । তোমার ময়লা মোটা কাপড় বটে, কিন্তু তুমি বড় ঘরের মেয়ে। ছোট ঘরে এমন রােপ হয় না।” ছাই রােপ! ঐ রােপ, বাপ শনিয়া আমি জবালাতন হইয়া উঠিয়াছিলাম, কিন্তু এ ব্রাহ্মণ প্রাচীন, আমি তাঁহার সঙ্গে গেলাম। আমি সে রাত্রে ব্রাহ্মণের গহে দই দিনের পর একটা বিশ্রাম লাভ করিলাম। এই দয়াল Ꮤ0 8 CᏒ