পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

/ईन्बिा তাহা আমি জানিতাম না। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কলিকাতায় কোন জায়গায় তাঁহার বাসা ?” তাহা আমি কিছই জানিতাম না—আমি জানিতাম, যেমন মহেশপর একখানি গণডগ্ৰাম, কলিকাতা তেমনই একখানি গণ ডগ্রিাম মাত্র। একজন ভদ্রলোকের নাম করিলেই লোকে বলিয়া দিবে। এখন দেখিলাম যে, কলিকাতা অনন্ত অট্টালিকার সমদ্রবিশেষ। আমার জ্ঞাতি খড়াকে সন্ধান করিবার কোন উপায় দেখিলাম না। কৃষ্ণদাস বােব আমার হইয়া অনেক সন্ধান করিলেন, কিন্তু কলিকাতায় একজন সামান্য গ্রাম্য লোকের ওরােপ সন্ধান করিলে কি হইবে ? কৃষ্ণদাস বােব কালীর পজা দিয়া কাশী যাইবেন, কলপনা ছিল। পজা দেওয়া হইল, এক্ষণে সপরিবারে কাশী যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন । আমি কাঁদিতে লাগিলাম। তাঁহার পত্নী কহিলেন, “তুমি আমার কথা শন। এখন কাহারও বাড়ীতে দাসীপনা কর। আজ সবী আসিবার কথা আছে, তা’কে বলিয়া দিব, বাড়ীতে তোমার চাকরাণী রাখিবো।” আমি শনিয়া আছড়াইয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে লাগিলাম।—“শেষে কি কপালে দাসীপনা ছিল!” আমার ঠোঁট কাটিয়া রক্ত পড়িতেছিল। কৃষ্ণদাস বাবর দয়া হইল সন্দেহ নাই, কিন্তু তিনি বলিলেন, “আমি কি করিব ?” সে কথা সত্য –তিনি কি করিবেন ? আমার কপাল! আমি একটা ঘয়ের ভিতর গিয়া একটা কোণে পড়িয়া কাঁদিতে লাগিলাম। সন্ধ্যার অলপ পব্বে কৃষ্ণদাস বাবরে গিন্নী আমাকে ডাকিলেন। আমি বাহির হইয়া তাঁহার কাছে গেলাম। তিনি বলিলেন, “এই সবো এয়েছে। তুমি যদি ওদের বাড়ী ঝি থাক, তবে বলিয়া দিই।” ঝি থাকিব না, না খাইয়া মরিব, সে কথা ত স্থির করিয়াছি। :--কিন্তু এখনকার সে কথা নহে —এখন একবার সবোকে দেখিয়া লইলাম। “সবো” শনিয়া আমি ভাবিয়া রাখিয়াছিলাম যে “সাহেব সবো।” দরের একটা কি জিনিস—আমি তখন পাড়া গেয়ে মেয়ে। দেখিলাম, তা নয়— একটি সত্ৰীলোক-দেখিবার মত সামগ্রী। অনেক দিন এমন ভাল সামগ্রী কিছ দেখি নাই। মানষেটি আমারই বয়সী হইবে । রঙ আমা অপেক্ষা যে ফরসা তাও নয়। বেশভূষা এমন কিছ নয়, কাণে গোটাকতক মাকড়ি, হাতে বালা, গলায় চীক, একখানা কালপোড়ে কাপড় পরা। তাতেই দেখিবার সামগ্রী। এমন মািখ দেখি নাই। যেন পদ্মটি ফটিয়া আছে—চারি দিক হইতে সাপের মত কোঁকড়া চুলগােলা ফণা তুলিয়া পদ্মটা ঘেরিয়াছে। খাব বড় বড় চোখ— কখন স্থির, কখন হাসিতেছে । ঠোঁট দইখানি পাতলা রাঙ্গা টকটকে ফলের পাপড়ির মত উলটান, মাখখানি ছোট, সবশদ্ধ যেন একটি ফটেন্ত ফল। গড়ন-পিটন কি রকম, তাহা ধরিতে পারিলাম না। আমগাছের যে ডাল কচিয়া যায়, সে ডাল যেমন বাতাসে খেলে, সেই রকম তাহার সৰ্ব্বব্যাঙগ খেলিতে লাগিল—যেমন নদীতে ঢেউ খেলে, তাহার শরীরে তেমনই কি একটা খেলিতে লাগিল—আমি কিছ, ধরিতে পারিলাম না, তার মাখে কি একটা যেন মাখান ছিল, তাহাতে আমাকে যাদা করিয়া ফেলিল। পাঠককে সমরণ করিয়া দিতে হইবে না যে, আমি পরিষ মানষে নাহি-মেয়ে মানষ—নিজেও এক দিন একটা সৌন্দৰ্য্যাগবিবর্ণিতা ছিলাম। সবোর সঙ্গে একটি তিন বছরের ছেলে—সেটিও তেমনি একটি আধফটেন্ত ফল। উঠিতেছে, পড়িতেছে, বসিতেছে, খেলিতেছে, হেলিতেছে, দলিতেছে, নাচিতেছে, দৌড়াইতেছে, হাসিতেছে, বকিতেছে, মারিতেছে, সকলকে আদর করিতেছে। আমি অনিমেষলোচনে সবোকে ও তার ছেলেকে দেখিতেছি দেখিয়া, কৃষ্ণদাস বাবার গহিণী চটিয়া উঠিয়া বলিলেন, “কথার উত্তর দাও না যে—ভাব কি ?” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “উনি কে ?” গহিণী ঠাকুরাণী ধমকাইয়া বলিলেন, তাও কি বলিয়া দিতে হইবে ? ও সবো, আর কে ?” তখন সবো একটি হাসিয়া বলিল, “তা মােসীমা, একটা বলিয়া দিতে হয় বৈ কি ? উনি নািতন লোক, আমায় চেনেন না।” এই বলিয়া সবো আমার মািখপানে চাহিয়া বলিল, “আমার নাম সভাষিণী গো—ইনি আমার মােসীমা, আমাকে ছেলেবেলা থেকে ওরা সবো বলেন।” তার পর কথার সত্ৰটা গাঁহিণী নিজ হস্তে তুলিয়া লইলেন। বলিলেন, “কলিকাতার রােমরাম দত্তের ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। তারা বড় মানষে। ছেলেবেলা থেকে ও শবশরিবাড়ীই থাকে-আমরা কখন দেখিতে পাই না। আমি কালীঘাটে এসেছি শনে আমাকে একবার দেখা দিতে এসেছে। ওরা বড় মানষ। বড় মানষের বাড়ী তুমি কাজকৰ্ম্মম করিতে পরিবে তা ?” ○○ >