পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী মা ধমকাইল, “নে শেলাক রাখা।” তখন মেয়ে চুপ করিল। তার পর রমণ বাবা খাইতে বসিলেন। আড়াল হইতে দেখিতে লাগিলাম। দেখিলাম, তিনি সমস্ত ব্যঞ্জনগলি কুড়াইয়া খাইলেন। গহিণীর মখে হাসি ধরে না। রমণ বাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ কে রোধেছে, মা ?” গহিণী বলিলেন, “একটি নািতন লোক আসিয়াছে।” রমণ বােব বলিলেন, “রাঁধে ভাল।” এই বলিয়া তিনি হাত ধাইয়া উঠিয়া গেলেন। তার পর কত্তা খাইতে বসিলেন। সেখানে আমি যাইতে পারিলাম না—গহিণীর আদেশমত বড়ো বামন ঠাকুরাণী কত্তার ভাত লইয়া গেলেন। এখন বঝিলাম, গহিণীর কোথায় ব্যথা, কেন তিনি সমর্থবয়স্ক সত্ৰীলোক রাখিতে পারেন না। প্রতিজ্ঞা করিলাম, যত দিন। এখানে থাকি, সে দিক মাড়াইব না। আমি সময়ান্তরে লোকজনের কাছে সংবাদ লইয়াছিলাম, কত্তার কেমন চরিত্র। সকলেই জানিত, তিনি অতি ভদ্ৰ লোক-জিতেন্দ্রিয়। তবে কালির বোতলটার গলায় গলায় কালি। বামন ঠাকুরাণী ফিরিয়া আসিলে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে, “কত্তা রান্না খেয়ে কি বললেন ?” বামনী চটিয়া লাল; চোচাইয়া উঠিয়া বলিল, “ও গো, বেশ রোধেছে। গো, বেশ রোধেছে। আমরাও রাঁধতে জানি; তা বড়ো হলে কি আর দর হয়! এখন রাঁধিতে গেলে রােপ-যৌবন চাই।” বঝিলাম, কত্তা খাইয়া ভাল বলিয়াছেন। কিন্তু বামনীকে নিয়া একটি রঙগ করিতে সাধ হইল। বলিলাম, “তা রােপ-যৌবন চাই বই কি, বামন দিদি!—বাড়ীকে দেখিলে কার খেতে রোচে ?” দাঁত বাহির করিয়া অতি ককাশ কণ্ঠে বামনী বলিল, “তোমারই বঝি রািপ-যৌবন থাকিবে ? মখে পোকা পড়বে না ?” এই বলিয়া রাগের মাথায় একটা হাঁড়ি চড়াইতে গিয়া পাচিকা দেবী হাঁড়িটা ভাঙিগয়া । আমি বলিলাম, “দেখিলে, দিদি! রািপযৌবন না থাকিলে হাতের হাঁড়ি ফাটে।” তখন ব্রাহ্মণী ঠাকুরাণী আদর্ধনগন্যাবস্থায় বেড়ী নিয়া আমাকে তাড়া করিয়া মারিতে । বয়োদোষে কাণে একটা খাট, বোধ হয় আমার সকল কথা শনিতে পান নাই। বড় কদৰ্য্য প্রত্যুত্তর করিলেন। আমারও রঙ্গ চড়িল। আমি বলিলাম, “দিদি, থামো। বেড়ী হাতে থাকিলেই ভাল।” এই সময়ে সভাষিণী সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। বামনী রাগে তাহাকে দেখিতে পাইল না। আমাকে আবার তাড়াইয়া আসিয়া বলিল, “হারামজাদী ! যা মাখে আসে তাই বলিবি ! বেড়ী আমার হাতে থাকিবে না। ত কি পায়ে দেবে নাকি ? আমি পাগল ?” তখন সভাষিণী ভ্ৰভওগ করিয়া তাহাকে বলিল, “আমি লোক এনেছি, তুমি হারামজাদী বলবার কে ? তুমি বেরোও আমার বাড়ী থেকে।” তখন পাচিকা শশব্যাস্তে বেড়ী ফেলিয়া দিয়া কাঁদ কাঁদ হইয়া বলিল, “ও মা সে কি কথা গো! আমি কখন হারামজাদী বল্লেম! এমন কথা আমি কখন মখেও আনি নে। তোমরা আশচয্য করিলে মা !” শনিয়া সভাষিণী খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। বামন ঠাকুরাণী তখন ডাক ছাড়িয়া কাঁদিতে আরম্ভ করিলেন, —বলিলেন, “আমি যদি হারামজাদী বলে থাকি, তবে আমি যেন গোল্লায় যাই—” (আমি বলিলাম, “বালাই! ষাট!”) (আমি। সে কি দিদি ; এত সকাল সকাল! ছি দিদি ! আর দদিন থাক না। “আমার যেন নরকেও ঠাঁই হয় না।--” এবার আমি বলিলাম, “ওটি বলিও না, দিদি ! নরকের লোক যদি তোমার রান্না না খেলে, তবে নরক আবার কি ?” বাড়ী কাঁদিয়া সভাষিণীর কাছে নালিশ করিল, “আমাকে যা মাখে আসিবে, তাই বলিবে, আর তুমি কিছ বলিবে না ? আমি চল্লেম গিন্নীর কাছে।” Wう○ Wり