পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাও বলিয়া দিলাম। বলিলাম, “তা কি জানি ?” শনিলাম, রমণবাব, সেখানেও পত্র লিখিলেন। কিন্তু কোন উত্তর আসিল না। বড় বিষগ্ন হইলাম। কিন্তু একটা কথা তখন মনে পড়িল, আমি আশায় বিহবল হইয়া পত্র লিখিতে বারণ করি নাই। এখন আমার মনে পড়িল, ডাকাতে আমাকে কাড়িয়া লইয়া গিয়াছে ; আমার কি জাতি আছে ? এই ভাবিয়া, শাবশার-স্বামী আমাকে প্রত্যাখ্যান করিবেন সন্দেহ নাই। সে সন্থলে, পত্র লেখা ভাল হয় নাই। এ কথা শনিয়া সভাষিণী চুপ করিয়া রহিল। আমি এখন বঝিলাম যে, আমার আর ভরসা নাই। আমি শয্যা লইলাম। একাদশ পরিচ্ছেদ ঃ একটা চোরা চাহনি এক দিবস প্রাতে উঠিয়া দেখিলাম, কিছর ঘটার আয়োজন। রমণ বােব উকীল। তাঁহার একজন বড় মোয়াক্কেল ছিল। দই দিন ধরিয়া শনিতেছিলাম, তিনি কলিকাতায় আসিয়াছেন। রমণ বাব ও তাঁহার পিতা সৰ্ব্বদা তাঁহার বাড়ীতে যাতায়াত করিতেছিলেন। তাঁহােব পিতা যাতায়াত করিয়াছিলেন, তাহার কারণ এই যে, তাঁহার সহিত কারবার-ঘটিত কিছর সম্মবন্ধ ছিল। আজ শনিলাম, তাঁহাকে মধ্যাহ্নে আহারের নিমন্ত্রণ করা হইয়াছে। তাই পাকশাকের কিছ: বিশেষ আয়োজন হইতেছে। রান্না ভাল চাই-অতএব পাকের ভারটা আমার উপর পড়িল। যত্ন করিয়া পাক করিলাম । আহারের সােথান অন্তঃপরেই হইল। রামবামবাব, রমণবাব, ও নিমন্ত্ৰিত ব্যক্তি আহারে বসিলেন। পরিবেশনের ভার বাড়ীর উপর-আমি বাহিরের লোককে কখন পরিবেশন করি না । বাড়ী পরিবেশন করিতেছে—আমি রান্নাঘরে আছি—এমন সময়ে একটা গোলযোগ উপস্থিত হইল। রমণ বাবা বাড়ীকে বড় ধমকাইতেছিলেন। সেই সময়ে এক জন রান্নাঘরের ঝি আসিয়া বলিল “ইচ্ছে ক'রে লোককে অপ্ৰতিভ কর।” জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি হয়েছে ?” ঝি বলিল, “বাড়ী দাদাবাবরে (বড়া ঝি, দাদাবাব, বলিত )—-বাটিতে ডাল দিতেছিল --তিনি তা দেখেও উহ! উপহা! ক'রে হাত বাড়িয়ে দিলেন—সব ডাল হাতে পড়িয়া গেল। " আমি এদিকে শনিতেছিলাম, রমণ বাব, বামনীকে ধমকাইতেছিলেন, “পরিবেশন করতে জান না। ত এসো কেন ? আর কাকেও থাল দিতে পার নি ?” রােমরাম বােব বলিলেন, “তোমার কম নয়! কুমোকে পাঠাইয়া দাও গিয়া ।” গহিণী সেখানে নাই, বারণ করে কে ? এদিকে খোদ কৰ্ত্তার হকুম——অমান্যই বা করি কি প্রকারে ? গেলেই গিন্নী বড় রাগ করিবেন, তাও জানি। দই চারি বার বাড়ীকে বঝাইলাম— বলিলাম, “একটি সাবধান হ'য়ে দিও থাইও”—কিন্তু সে ভয়ে আর যাইতে স্বীকৃত হইল না। কাজেই, আমি হাত ধাইয়া, মখ মছিয়া, পবিস্কার হইয়া, কাপড়খানা গছাইয়া পরিয়া, একট, ঘোমটা টানিয়া, পরিবেশন করিতে গেলাম। কে জানে যে এমন কাণড বাধিবে ? আমি জানি যে, আমি বড় বন্ধিমতী—জানিতাম না যে, সভাষিণী আমাষ এক হাটে বেচিতে পারে, আর এক হাটে কিনিতে পারে। আমি অবগণ্ঠনবতী, কিন্তু ঘোমটায় স্ত্রীলোকের স্বভাব ঢাকা পড়ে না। ঘোমটার ভিতর হইতে একবার নিমন্ত্রিত বাবটিকে দেখিয়া লইলাম। দেখিলাম, তাঁহার বয়স ত্রিশ বৎসর বোধ হয়; তিনি গৌরবণ এবং অত্যন্ত সপরিষে ; তাঁহাকে দেখিয়াই রমণীমনোহর বলিয়া বোধ হইল। আমি বিদ্যুচ্চমকিতের ন্যায় একটি অন্যমনস্ক হইলাম। মাংসের পাত্ৰ লইয়া একটি দাঁড়াইয়া রহিলাম, আমি ঘোমটার ভিতর হইতে তাঁহাকে দেখিতেছিলাম, এমত সময়ে তিনি মািখ তুলিলেন-দেখিতে পাইলেন যে, আমি ঘোমটার ভিতর হইতে তাঁহার প্রতি চাহিয়া আছি। আমি তা জানিয়া শনিয়া ইচ্ছাপবেক তাঁহার প্রতি কোন প্রকার কুটিল কটাক্ষ করি নাই। তত পাপ এ হৃদয়ে ছিল না। তবে সাপও বঝি, জানিয়া শনিয়া, ইচ্ছা করিয়া ফণা ধরে না ; ফণা ধরিবার সময় উপস্থিত হইলেই ফণা। আপনি ফাঁপিয়া Ꮼ Ꮤ Ꮼ