পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেলে দেখা হইবে না,-কেই বা আমাকে নিয়ে যাবে, কেই বা দেখা করাইবে ? এইখানেই দেখা করিতে হইবে। সভা। কখন ? আমি। রাত্রে, সবাই শাইলে। সভা। অভিসারিকে ? আমি। তা বৈ আর গতি কি ? দোেষই বা কি-স্বামী যে । সভা। না, দোষ নাই। কিন্তু তাহা হইলে তাঁকে রাত্রে আটকাইতে হয়। নিকটে তাঁর বাসা; তা ঘটিবে কি ? দেখি একবার র-বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে। সভাষিণী রমণ বাবকে ডাকাইল। তাঁর সঙ্গে যে কথাবাত্তা হইল, তাহা আমাকে আসিয়া বলিল। বলিল, “র-বাব, যাহা পারেন তাহা এই :—তিনি এখন মোকদ্দমার কাগজপত্ৰ দেখিবেন। না—একটা ওজর করিয়া রাখিবেন । কাগজ দেখিবার জন্য সন্ধ্যার পর সময় অবধারণ করবেন। সন্ধ্যার পর তোমার স্বামী আসিলে, কাগজপত্ৰ দেখিবেন। কাগজপত্ৰ দেখিতে দেখিতে একটা রাত্ৰ করিবেন। রাত্র হইলে আহারের জন্য অন্যুরোধ করবেন। কিন্তু তার পর তোমার বিদ্যায় যা থাকে তা করিও। রাত্রে থাকিতে আমরা কি বলিয়া অন্যুরোধ করিব ?” আমি বলিলাম, • “সে অননুরোধ তোমাদের করিতে হইবে না। আমিই করিব। আমার অননুরোধ যাহাতে শানেন, তাহা করিয়া রাখিয়াছি। দই একটা চাহনি ছাড়িয়া মারিয়াছিলাম। তিনি তাহা ফিরাইয়া দিয়াছেন। লোক ভাল নহেন। এখন আমার অন্যুরোধ তাঁহার কাছে পাঠাই কি প্রকারে ? এক ছত্ৰ লিখিয়া দিব। সেই কাগজটকু কেহ তাঁর কাছে দিয়ে এলেই হয় ।” সভা। কোন চাকরের হাতে পাঠাও না ? আমি। যদি জন্ম-জন্মান্তরেও স্বামী না পাই, তবও পরিষ মানষেকে এ কথা বলিতে পারি না। সভা। তা বটে। কোন ঝি ? আমি । ঝি বিশবাসী কে ? একটা গোলমাল বাধাইবে, তখন সব খোওয়াব। সভা। হারাণী বিশ্ববাসী। আমি। হারাণীকে বলিয়াছিলাম। বিশ্ববাসী বলিয়া সে নারাজ। তবে তোমার একটি ইণ্ডিগত পাইলে সে যাইতে পারে। কিন্তু তোমায় এমন ইণ্ডিগত করিতে কি প্রকারে বলিতে পারি ? মারি তা আমি একাই মরিব ।—পোড়া চোখে আবার জল আসিল । সভা। হারাণী আমার কথা কি বলিয়াছে ? আমি। তুমি যদি বারণ না কর, তবে সে যাইতে পারে। সভাষিণী অনেকক্ষণ ভাবিল। বলিল, “সন্ধ্যার পর তাকে এই কথার জন্য আসিতে दळल९ ।' ত্ৰিয়োদশ পরিচ্ছেদ ঃ আমাকে একজামিন দিতে হইল। সন্ধ্যার পর আমার স্বামী কাগজপত্ৰ লইয়া রমণ বাবার কাছে আসিলেন। সংবাদ পাইয়া, আমি আর একবার হারাণীর হাতে-পায়ে ধরিলাম। হারাণী সেই কথাই বলে, “বৌদিদি যদি বারণ না করে, তবে পারি। তবে জানিব, এতে দোষ নেই।” আমি বলিলাম, “যাহা হয় করা— আমার বড় জবালা ৷” এই ইঙিগত পাইয়া হারাণী একটা হাসিতে হাসিতে সভাষিণীর কাছে ছটিল। আমি তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। দেখিলাম যে, সে হাসির ফোয়ারা খালিয়া দিয়া, আলথাল কেশ-বেশ সামলাইতে সামলাইতে, হাঁপাইতে হাঁপাইতে, ছটিয়া আসিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি গো, এত হাসি কেন ?” হারাণী। দিদি, এমন জায়গায়ও মানষেকে পাঠায় ? প্ৰাণটা গিয়াছিল। আর কি ! আমি । কেন গো ? হারা। আমি জানি বৌদিদির ঘরে ঝাঁটা থাকে না, দরকার মত ঝাঁটা লইয়া গিয়া আমরা S) V. C.