পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী রঙ্গভরা, ডুরে, ফরাফরে, ঝরঝরে, বাঁদরে—তাতে কারও ঘোমটা, কারও আড়ঘোমটা, কারও আধঘোমটা -কারখা কেবল কবরীপ্রান্তে মাত্র বসনসংসপেশী-কারও তাতেও ভুল। আমার প্রাণনাথ অনেক গোরার পলিটন ফতে করিয়া ঘরে টাকা লইয়া আসিয়াছেন—অনেক কণোিল, জানারেলের বন্ধিভ্রংশ করিয়া, লাভের অংশ ঘরে লইয়া আসিয়াছেন—কিন্তু এই সন্দরীর পল্টন দেখিয়া, তিনি বিশম্পক-বিত্ৰস্ত। তোপের আগানের সস্থানে নয়নবহির সাফাত্তি, কামানের কালকরালকুন্ডলীকৃত ধর্মপাঞ্জের পরিবত্তে এই কালকরালকুন্ডলীকৃত কমনীয় কেশকাদম্পিবনী, বেওনেটের ঠনঠনির পরিবত্তে এই অলঙ্কারের রণরণি, জয়ঢাকের বাদ্যের পরিবত্তে আলতা-পরা পায়ে মলের ঝমােঝমি । যে পরষ চিলিয়ানওয়ালা দেখিয়াছে—সেও হতাশবাস। এ ঘোর রণক্ষেত্রে তাঁহাকে রক্ষা করিবার জন্য, তিনি আমাকে দ্বারদেশে দেখিতে পাইয়া ইঙ্গিতে ডাকিলেন—কিন্তু আমিও শিখ সেনাপতির মত বিশবাসঘাতকতা করিলাম-এ রণে তাঁহার সাহায্য করিলাম না। সথাল কথা, এই সকল মজলিস গলায় অনেক নিল্লা জজ ব্যাপার ঘটিয়া থাকে জানিতাম। তাই কামিনী আর আমি গোলাম না-বাহিরে রহিলাম।--দবার হইতে মধ্যে মধ্যে উকি মারিতে লাগিলাম। যদি বল, যাহাতে নিল্লািডজ ব্যাপার ঘটে, তুমি তাহার বণনায় কেন প্রবত্ত, তাহাতে আমার উত্তর এই যে, আমি হিন্দীর মেয়ে, আমার রচিতে এই সকল ব্যাপার নিল্লািডজ ব্যাপার। কিন্তু এখনকার প্রচলিত রচি ইংরেজি রচি; ইংরেজি রচির বিধানমতে নীবিচার করিলে ইহাতে নিল্লািডজ, ব্যাপার কিছই পাওয়া যাইবে না। বলিয়াছি, আমি ও কামিনী দাই জনে একবার উকি মারিলাম। দেখি, পাড়ার যমনাঠাকুরাণী সভাপত্নী হইয়া জমকাইয়া বসিয়া আছেন। তাঁর বয়স পায়তাল্লিশ ছাড়াইয়াছে; রঙটা মিঠে রকম কালো; চোখ দইটা ছোট ছোট, কিন্তু একটা ঢল ঢল, ঠোঁট দইখানা পাের, কিন্তু রসে ভরা ভরা। বস্ত্ৰালঙ্কারের বাহার-পায়ে আলতার বাহার, কালোতে রাঙ্গা, যেন যমনাতেই জবা, —মাথায় ছোড়া চুলের বাহার। শরীরের ব্যাস ও পরিধি অসাধারণ দেখিয়া, আমার স্বামী তাঁহাকে “নদীর পা মহিষী" বলিয়া ব্যঙ্গ করিতেছেন। মাথারাবাসীরা যমনা নদীকে কৃষ্ণের নদীর পা মহিষী বলিয়া থাকে, সেই কথা লক্ষ্য করিয়া উ-বাব, এই রসিকতা করিলেন। এখন আমার যমােনা দিদি কখনও মাথারা যান নাই, এত খবরও জানেন না, এবং মহিষী শব্দের অর্থটা জানেন না। তিনি মহিষী আথে কেবল মাদি মহিষই বঝিয়াছিলেন এবং সেই জন্তুর সহিত আপনার শরীরর সাদশ্য লক্ষ্য করিয়া রাগে গর গর করিতেছিলেন। প্রতিশোধাৰ্থ তিনি আমার স্বামীর সম্মখে আমাকে প্রকারান্তরে “গাই” বলিলেন, এমন সময়ে আমি দবার হইতে মািখ বাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘যমােনা দিদি! কি গা ?” যমন দিদি বললেন, “একটা গাই ভাই ।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “গাই কেন গা ?” কামিনী আমার পাশ হইতে বলিল, “ডেকে ডেকে যমনা দিদির গলা কাঠ হইয়া গিয়াছে। একবার পিওবে।” হাসির চোটে সভাপত্নী মহাশয়া নিবিয়া গেলেন, কামিনীর উপর গরম হইয়া বলিলেন, “একরাত্তি মেয়ে, তুই সকল হাঁড়িতে কাটি দিস কেন লো কামিনী ?” কামিনী বলিল, “আর ত কেউ তোমার ভূসি কলাই সিদ্ধ কবতে জানে না।” এই বলিয়া কামিনী পলাইল, আমিও পলাইলাম। আবার একবার গিয়া উকি মারিলাম, দেখি, পাড়ার পিয়ারী ঠানদিদি, জাতিতে বৈদ্য—বয়স পঞ্চষক্ৰিষ্ঠ বৎসর, তার মধ্যে পঞ্চবিংশতি বৎসর বৈধব্যে কাটিয়াছে—তিনি সৰ্ব্বব্যাঙ্গে অলঙ্কার পরিয়া ঘাঘরা পরিয়া, রাধিকা সাজিয়া আসিয়াছেন। আমার স্বামীকে লক্ষ্য করিয়া, কৃষ্ণ কৈ ? কৃষ্ণ কৈ ? বলিয়া সেই কামিনীকুঞ্জবন পরিভ্রমণ করিতেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি খোঁজ ঠানদিদি ?” তিনি বলিলেন, “আমি কৃষ্ণকে খাজি ।” কামিনী বলিল, “গোয়ালবাড়ী যাও—এ কায়েতের বাড়ী।” রসিকতাপ্রবীণা বলিল, “কায়েতের বাড়ীই আমার কৃষ্ণ মিলিবে।” এখন, পিয়ারী ঠাকুরাণীর এককালে তেলি অপবাদ ছিল। এই কথায়, তিনি তেলে-বেগানে ᏬᏌ8