পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী পােরন্দর বলিল, “আমার পিতা বন্ধ হইতেছেন। আমার এখন অথোেপাজ্ঞজনের সময় য়াছে। আমি পিতার অননুমতি পাইয়াছি।” কুণ্ডিত হইতেছে, অধর সাফারিত হইতেছে, নাসিকারন্ধু সফীত হইতেছে। দেখিলেন যে, হিরন্ময়ী কাঁদিয়া ফেলিলেন । পােরন্দর মািখ ফিরাইলেন। তিনিও একবার আকাশ, পথিবী, নগর, সমদ্র সকল দেখিলেন, কিন্তু কিছতেই রহিল না—চক্ষর জল গণন্ড বহিয়া পড়িল। পােরন্দর চক্ষ মাছিয়া বলিলেন, “এই কথা বলিবার জন্য আসিয়াছি। যে দিন তোমার পিতা বলিলেন, কিছতেই আমার সঙ্গে তোমার বিবাহ দিবেন না, সেই দিন হইতেই আমি সিংহলে যাইবার কলপনা সিথর করিয়াছিলাম। ইচ্ছা আছে যে, সিংহল হইতে ফিরিব না। যদি কখন তোমায় ভুলিতে পারি, তবেই ফিরিব। আমি অধিক কথা বলিতে জানি না, তুমিও অধিক কথা বঝিতে পরিবে না। ইহা বঝিতে পরিবে যে, আমার পক্ষে জগৎসংসার এক দিকে, তুমি একদিকে হইলে, জগৎ তোমার তুল্য নহে ।” এই বলিয়া পােরন্দর হঠাৎ পশ্চাৎ ফিরিয়া পাদচারণ করিয়া অন্য একটা বক্ষের পাতা ছিড়িলেন। আশ্রবেগ কিঞ্চিৎ শমিত হইলে, ফিবিয়া আসিয়া আবার কহিলেন, “তুমি আমায় ভালবাস, তাহা জানি । কিন্তু যবে হউক, অন্যের পত্নী হইবে। অতএব, তুমি আর আমায় মনে রাখিও না । তোমার সঙ্গে যেন এ জন্মে। আমার আর সাক্ষাৎ না হয়। “ এই বলিয়া পােরন্দর বেগে প্রস্থান করিলেন। হিরণ্যময়ী বসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। রোদন সংবরণ করিয়া একবাব ভাবিলেন, “আমি যদি আজি মরি, তবে কি পােরন্দর সিংহলে যাইতে পারে ? আমি কেন গলায় লতা বধিয়া মারি না— কিমবা সমন্দ্রে ঝাঁপ দিই না ? “ আবার ভাবিলেন, “আমি যদি মরিলাম, তবে পােরন্দর সিংহলে যাক না যাক, তা”তে আমার কি ?” এই ভাবিয়া হিরণ্যময়ী আবার কাঁদিতে বসিলেন। দিবতীয় পরিচ্ছেদ কেন যে ধনদাস বলিয়াছিলেন যে, “আমি পােরন্দরের সঙ্গে হিরণের বিবাহ দিব না', তাহা কেহ জানিত না। তিনি তাহা কাহারও সাক্ষাতে প্রকাশ করেন নাই। জিজ্ঞাসা করিলে বলতেন, “বিশেষ কারণ আছে।” হিরণ্যময়ীর অন্যান্য অনেক সম্বন্ধ আসিল--কিন্তু ধনদাস কোন সম্বন্ধেই সম্মত হইলেন না। বিবাহের কথামাত্রে কর্ণপাত করিতেন না। “কন্যা বড় হইল।” বলিয়া গাহিণী তিরস্কার করিতেন ; ধনদাস শনিতেন না। কেবল বলিতেন, “গরদেব আসন —তিনি আসিলে এ কথা হইবে।” পােরন্দর সিংহলে গেলেন। তাঁহার সিংহল যাত্রার পর দই বৎসর এইরনুপে গেল। পােরন্দর ফিরিলেন না। হিরণ্যময়ীর কোন সম্বন্ধ হইল না। হিরণ্য অস্টাদশ বৎসরের হইয়া উদ্যানমধ্যসন্থ নবপল্লবিত চন্তবক্ষের ন্যায়। ধনদাসের গহি শোভা করিতে লাগিল । হিরণ্যময়ী ইহাতে দঃখিত হয়েন নাই। বিবাহের কথা হইলে, পােরন্দরকে মনে পড়িত; তাঁহার সেই ফল্লিকুসমমালামণিডত কুণ্ডিতকৃষ্ণকুন্তলাবিলনীবেষ্মিন্টত সহাস্য মখমন্ডল মনে পড়িত; তাঁহার সেই দিবরদশভ্র স্কন্ধাদেশে সবণ পাপশোভিত নীল উত্তরীয় মনে পড়িত; পদ্মহস্তে হীরকাঙ্গরীয়গালি মনে পড়িত; হিরণ্যময়ী কাঁদিতেন। পিতার আজ্ঞা হইলে যাহাকে-তাহাকে বিবাহ করিতে হইত। কিন্তু সে জীবন্মত্যুবৎ হইত। তবে তাঁহার বিবাহোদ্যোগে পিতাকে অপ্রবত্ত দেখিয়া, আহমাদিত হউন, বা না হউন, বিস্মিতা হইতেন। লোকে এত বয়স অবধি কন্যা অবিবাহিতা রাখে না— রাখিলেও তাহার সম্মবন্ধ করে। তাঁহার পিতা সে কথায় কণী পৰ্য্যন্ত দেন না কেন ? এক দিন অকস্মাৎ এ বিষয়ের কিছর সন্ধান পাইলেন। ধনদাস বাণিজ্যহেতু চীনদেশে নিৰ্ম্মিত একটি বিচিত্র কোঁটা পাইয়াছিলেন।” কোটা অতি বহিৎ—ধনদাসের পত্নী তাহাতে অলঙ্কার রাখিতেন। ধনদাস কতকগালিন নািতন অলঙকার প্রস্তুত করিয়া পত্নীকে উপহার দিলেন। শ্রেমিঠপত্নী পরাতন অলঙ্কারগালিন কৌটাসমেত কন্যাকে দিলেন। অলঙ্কারগালিন রাখা ঢাকা করিতে হিরণ্যময়ী দেখিলেন যে, তাহাতে একখানি ছিন্ন লিপির অদধাবশেষ রহিয়াছে। \DNO