পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী অম। ইহা তোমাকে পােরন্দর পাঠাইয়া দিয়াছে। তুমি আমার গহে থাক শনিয়া আমাকে ডাকিয়া পাঠাইয়া ইহা তোমাকে দিতে বলিয়াছে। হিরণ্যময়ী ভাবিয়া দেখিল, এই হার গ্রহণ করিলে, চিরকালজন্য দারিদ্র্য মোচন হয়। ধনদাসের আদবের কন্যা। আর অন্নবস্ত্রের কম্পট সহিতে পারিতেছিল না। অতএব, হিরন্ময়ী ক্ষণেক বিমনা হইল। পরে দীর্ঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া কহিল, “অমলা, তুমি বণিককে কহিও যে, আমি ইহা গ্ৰহণ করিব না।” অমলা বিস্মিতা হইল। বলিল, “সে কি ? তুমি কি পাগল, না। আমার কথায় বিশবাস করিতেছি না ?” ਰਜ আমি তোমার কথায় বিশবাস করিতেছি।--আর পাগলীও নই। আমি উহা গ্ৰহণ রব না । অমলা অনেক তিরস্কার করিতে লাগিল। হিরণ্যমযী কিছতেই গ্রহণ করিলেন না। তখন অমলা হার লইয়া রাজা মদনদেবের নিকটে গেল। রাজাকে প্ৰণাম করিয়া হার উপহার দিল । বলিল, “এ হার আপনাকে গ্রহণ করিতে হইবে । এ হার আপনারই যোগ্য।” রাজা হার লইয়া আমলাকে যথেস্ট অর্থ দিলেন। হিরণ্যময়ী ইহার কিছই জানিল না। ইহার কিছ দিন পরে পরিন্দরের এক জন পরিচারিকা হিরণ্যময়ীর নিকটে আসিল । সে কহিল, “আমার প্রভু বলিয়া পাঠাইলেন যে, আপনি যে পর্ণকুটীরে বাস করেন, ইহা তাঁহার সহ্য হয় না। আপনি তাঁহার বাল্যকালের সখী ; আপনার গহ তাঁহার গহ একই। তিনি এমন বলেন না যে, আপনি তাঁহার গহে গিয়া বাস করন। আপনার পিতৃগহ তিনি ধনদাসের মহাজনের নিকট ক্লীয় করিয়াছেন। তাহা আপনাকে দান করিতেছেন। আপনি গিয়া সেইখানে হিরণ্যময়ী দারিদ্র্যজন্য যত দঃখভোগ করিতেছিলেন, তন্মধ্যে পিতৃভবন হইতে নিৰ্ব্বাসনই তাঁহার সববাপেক্ষা গরতের বোধ হইত। যেখানে বাল্যক্ৰীড়া করিয়াছিলেন, যেখানে পিতামাতার সহবাস করিতেন, যেখানে তাঁহাদিগের মহত্যু দেখিয়াছেন, সেখানে যে আর বাস করিতে পান না, এ কািট গারতের বোধ হইত। সেই ভবনের কথায় তাঁহার চক্ষে জল আসিল। তিনি পরিচারিকাকে আশীৰ্ব্ববাদ করিয়া কহিলেন, “এ দান আমার গ্রহণ করা উচিত নহে!—কিন্তু আমি এ লোভ সংবরণ করিতে পারিলাম না। তোমার প্রভুর সব্ব প্রকার মঙ্গল হউক!” পরিচারিকা প্ৰণাম করিয়া বিদায় হইল। অমলা উপস্থিতা ছিল। হিরণ্যময়ী তাহাকে বলিলেন, “অমলা, তথায় আমার একা বাস করা যাইতে পারে না। তুমিও তথায় বাস করিবে: চল।” অমলা স্বীকৃত হইল। উভয়ে গিয়া ধনদাসের গহে বাস করিতে লাগিলেন। তথাপি আমলাকে সৰ্ব্ববােদা পােরন্দরের গহে যাইতে হিরণ্যময়ী এক দিন নিষেধ করিলেন। অমলা আর যাইত না । পিতৃগ হে গমনাবধি হিরণ্যময়ী একটা বিষয়ে বড় বিস্মিতা হইলেন। এক দিন আমলা কহিল, “তুমি সংসারনিৰ্ব্ববাহের জন্য ব্যস্ত হইও না, বা শারীরিক পরিশ্রম করিও না। রাজবাড়ী আমার কায্য হইয়াছে—আর এখন অর্থের অভাব নাই। অতএব আমি সংসার চালাইব—-তুমি সংসারে কত্ৰী হইয়া থাক।” হিরণ্যময়ী দেখিলেন, আমলার অর্থের বিলক্ষণ প্ৰাচুৰ্য্যা। মনে মনে নানা প্রকার সন্দিহান হইলেন। সপতম পরিচ্ছেদ বিবাহের পর পঞ্চমাষাঢ়ের শক্লিা পঞ্চমী আসিয়া উপস্থিত হইল। হিরন্ময়ী এ কথা স্মরণ করিয়া সন্ধ্যাকালে বিমনা হইয়া বসিয়াছিলেন। ভাবিতেছিলেন, “গর দেবের আজ্ঞানসারে আমি কালি হইতে অঙ্গরীয়টি পরিতে পারি। কিন্তু পরিব কি ? পরিয়া আমার কি লাভ ? হয়ত সবামী পাইব, কিন্তু স্বামী পাইবার আমার বাসনা নাই। অথবা চিরকালের জন্য কেনই বা পরের মতি মনে আকিয়া রাখি ?" এ দািরনত হৃদয়কে শাসিত করাই উচিত। নহিলে ধৰ্ম্মে পতিত হইতেছি।” Wう。8