পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যািগলাঙ্গরীয় রাজা হাস্যত্যাগ না করিয়া বলিলেন, “আমার ন্যায় রাজারই এর পা রহস্য সম্পভবে। ছয় বৎসর হইল, তুমি একখানি পত্ৰাদধি অলঙ্কারমধ্যে পাইয়াছিলে ? তাহা কি আছে ?” হি। মহারাজ ! আপনি সব্বজ্ঞই বটে। পত্ৰাদ্ধ আমার গহে আছে। রা। তুমি শিবিকারোহণে পানশাচ গ'হে গিয়া সেই পত্রান্ধ লইয়া আইস। তুমি আসিলে আমি সকল কথা বলিব । হিরণ্যময়ী রাজার আজ্ঞায় শিবিকারোহণে সবগহে প্রত্যাগমন করিলেন, এবং তথা হইতে সেই পৰ্ব্বববর্ণিত পত্ৰাদ্ধ লইয়া পানশাচ রাজসন্নিধানে আসিলেন। রাজা সেই পত্ৰাদ্ধা দেখিয়া, আর একখানি পত্রান্ধ কৌটা হইতে বাহির করিয়া হিরণ্যময়ীকে দিলেন। বলিলেন, “উভয় আদর্ধকে মিলিত কর।” হিরন্ময়ী উভয়ান্ধ মিলিত করিয়া দেখিলেন, মিলিল। রাজা কহিলেন, “উভয়ান্ধ একত্ৰিত করিয়া পাঠ করা।” তখন হিরন্ময়ী নিম্নলিখিত মত পাঠ করিলেন। “ (জ্যোতিষী গণনা করিয়া দেখিলাম) যে, তুমি যে কলপনা করিয়াছ, তাহা কত্তব্য নহে। (হিরন্ময়ী তুল্য সোণার পত্তিলিকা) কখন চিরবৈধব্যে নিক্ষিপত করা যাইতে পাবে না। তাহার (বিবাহ হইলে ভযানক বিপদ । ) তাহার চিরবৈধব্য ঘটিবে গণনা দবারা জানিয়াছি। তবে পg বৎসর (পয্যন্ত পরস্পরে) যদি দম্পতি মখদশন না করে, তবে এই গ্ৰহ হইতে যাহাতে নিম্প্রকৃতি (হইতে পারে) তাহৰর বিধান আমি করিতে পারি।” পাঠ সমাপন হইলে, রাজা কহিলেন, “এই লিপি আনন্দস্বামী তোমার পিতাকে লিখিয়াছিলেন।” হি। তাহা এখন বঝিতে পারিতেছি। কেন বা আমাদিগের বিবাহকালে নয়নাবত হইয়াছিল। —কেনই বা গোপনে সেই অদভুত বিবাহ হইয়াছিল—কেনই বা পঞ্চ বৎসর অঙ্গরীয় ব্যবহার নিষিদ্ধ হইয়াছে, তাহা বঝিতে পারিতেছি। কিন্তু আর ত কিছই বঝিতে পারিতেছি না। রাজা। আর তা অবশ্য বঝিয়াছ যে, এই পত্ৰ পাইয়াই তোমার পিতা পােরন্দরের সহিত সম্মবন্ধ রহিত করিলেন। পরেন্দর সেই দঃখে সিংহলে গেল। এ দিকে আনন্দস্বামী পাত্ৰানসন্ধান করিয়া একটি পাত্ৰ স্থির করিলেন। পাত্রের কোম্পাঠী গণনা করিয়া জানিলেন যে, পাত্রটির অশীতি বৎসর পরমায় । তবে অন্টাবিংশতি বৎসর বয়স অতীত হইবার পর্ক্সেব মাত্র এক সম্পভাবনা ছিল। গণিয়া দেখিলেন যে, ঐ বয়স অতীত হইবার পকেবা এবং বিবাহের পঞ্চবৎসরমধ্যে পত্নীশয্যায় শয়ন করিয়া তাঁহার প্রাণত্যাগ করিবার সম্ভাবনা। কিন্তু যদি কোন রাপে পঞ্চ বৎসর জীবিত থাকেন, তবে দীঘজীবী হইবেন। অতএব পাত্রের ত্রয়োবিংশতি বৎসর অতীত হইবার সময়ে বিবাহ দেওয়া সিথর করিলেন। কিন্তু এত দিন অবিবাহিত থাকিলে পাছে তুমি কোন প্রকার চ৭৪লা হও, বা গোপনে কাহাকে বিবাহ করা, এই জন্য তোমাকে ভয় দেখাইবার কারণে এই পত্ৰাদ্ধ তোমার অলঙকারমধ্যে রাখিয়াছিলেন। তৎপরে বিবাহ দিয়া পণ৪ বৎসর সাক্ষাৎ না হয়, তাহার জন্য যে যে কৌশল করিয়াছিলেন, তাহা জ্ঞাত আছ। সেই জন্যই পরসপরের পরিচয় মাত্র পাও নাই। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক মাস হইল বড় গোলযোগ হইয়া উঠিয়াছিল। কয়েক মাস হইল আনন্দস্বামী এ নগরে আসিয়া, তোমার দারিদ্র্য শনিয়া নিতান্ত দঃখিত হইলেন। তিনি তোমাকে দেখিয়া আসিয়াছিলেন, কিন্তু সাক্ষাৎ করেন নাই। তিনি আসিয়া আমার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তোমার বিবাহ বািত্তান্ত আন পকিবক কহিলেন। পরে কহিলেন, “আমি যদি জানিতে পারিতাম যে, হিরণ্যময়ী এরপ দরিদ্রাবস্থায় আছে, তাহা হইলে আমি উহা মোচন করিতাম। এক্ষণে আপনি উহার প্রতীকার করবেন। এ বিষয়ে আমাকেই আপনার ঋণী। জানিবেন। আপনার ঋণ আমি পরিশোধ করিব। সম্প্রতি আমার আর একটি অননুরোধ রক্ষা করিতে হইবে। হিরন্ময়ীর স্বামী এই নগরে বাস করিতেছেন। উহাদের পরস্পর সাক্ষাৎ না। হয়, ইহা আপনি দেখিবেন।” এই বলিয়া তোমার স্বামীর পরিচয়ও আমার নিকটে দিলেন। সেই অবধি আমলা যে অর্থব্যয়ের দবারা তোমার দারিদ্র্যাদঃখ মোচন করিয়া আসিতেছে, তাহা আমা হইতে প্ৰাপত। আমি তোমার পিতৃগহ ক্ৰয় করিয়া তোমাকে বাস করিতে দিয়াছিলাম । হার আমিই পাঠাইয়াছিলাম—সেও তোমার পরীক্ষাথ । Wりふ)○