পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী মীরকাসেম হিন্দীদিগের নিকট জ্যোতিষ শিক্ষা করিয়াছিলেন। শিক্ষামত অঙক পাতিয়া দেখিলেন। কিছক্ষেণ পরে, কাগজ দরে নিক্ষেপ করিয়া, বিমর্ষ হইয়া বসিলেন। দলনী জিজ্ঞাসা মীরকাসেম বলিলেন, “যাহা দেখিলাম, তাহা অত্যন্ত বিস্ময়কর। তুমি শনিও না।” নবাব তখনই বাহিরে আসিয়া মীরমন্যাসীকে ডাকাইয়া আজ্ঞা দিলেন, “মরশিদাবাদে একজন হিন্দ কৰ্ম্মমচারীকে পরওয়ানা দাও যে, মরশিদাবাদের অনতিদারে বেদগ্রাম নামে স্থান আছে—তথায় চন্দ্রশেখর নামে এক বিদ্বান ব্রাহ্মণ বাস করে—সে আমাকে গণনা শিখাইয়াছিল— তাহাকে ডাকাইয়া গণাইতে হইবে যে, যদি সম্প্রতি ইংরেজীদিগের সহিত যাদ্ধারম্ভ হয়, তবে যাদ্ধকালে এবং যাদ্ধ-পরে, দলনী বেগম কোথায় থাকিবে ?” মীরমানসী তাঁহাই করিল। চন্দ্ৰশেখরকে মরশিদাবাদে আনিতে লোক পাঠাইল । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ঃ ভীমা পঙ্করিণী ভীমা নামে বহৎ পস্করিণীর চারি ধারে ঘন তালগাছের সারি। অসাতগমনোন্মখ সহযোিব হেমাভ রৌদ্র পঙ্করিণীর কাল জলে পড়িয়াছে; কাল জলে রৌদ্রের সঙ্গে, তোলগাছের কাল ছায়া সকল অঙিকত হইয়াছে। একটি ঘাটের পাশে, কয়েকটি লতামণি'ডত ক্ষদ্র ব্যক্ষ, লতায় লতায় একত্র গ্রথিত হইয়া, জল পৰ্য্যন্ত শাখা লম্বিত করিয়া দিয়া, জলবিহারিণী কুলকামিনীগণকে আব্বত করিয়া রাখিত। সেই আবতে অলপান্ধকারমধ্যে শৈবলিনী এবং সন্দরী ধাতুকলসীহস্তে জলের সঙেগ ক্ৰীড়া করিতেছিল। যাবতীর সঙ্গে জলের ক্ৰীড়া কি ? তাহা আমরা বঝি না, আমরা জল। নই। যিনি কখন রােপ দেখিয়া গালিয়া জল হইয়াছেন, তিনিই বলিতে পরিবেন। তিনিই বলিতে পারিবেন, কেমন করিয়া জল কলসীতাড়নে তরঙ্গ তুলিয়া, বাহবিলম্বিত অলঙ্কার শিঞ্জিতের তালে, তালে তালে নাচে । হৃদয়োপরে গ্রথিত জলজ পহেল্পর মালা দোলাইয়া, সেই তালে তালে নাচে। সন্তরণকুত হলী ক্ষদ্র বিহঙগমটিকে দোলাইয়া, সেই তালে তালে নাচে। যাবতীকে বেড়িয়া বেড়িয়া তাহার বাহিতে, কন্ঠে, সকন্ধে, হৃদয়ে উকিঝকি মারিয়া, জল তরঙগ তুলিয়া, তালে তালে নাচে। আবার যাবতী কেমন কলসী ভাসাইয়া দিয়া, মন্দবায়ার হস্তে তাহাকে সমপণ করিয়া, চিবকে পৰ্যন্ত জলে ডুবাইয়া, বিমবাঁধরে জলসপার্ট করে, বক্ত-মধ্যে তাহাকে প্রেরণ করে; সােয্যাভিমখে প্রতিপ্রেরণ করে ; জল পতনকালে বিম্বে বিম্বে শত সােয্য ধারণ করিয়া যাবতীকে উপহার দেয়। যাবতীর হস্তপদসঞ্চালনে জল ফোয়ারা কাটিয়া নাচিয়া উঠে, জলেরও হিল্লোলে যাবতীর হৃদয় নত্য করে । দই সমান । জল চ৭8ল; এই ভুবনচ৭৪ল্যবিধায়িনীদিগের হৃদয়ও চ৭8ল। জলে দাগ বসে না, যাবতীর হৃদয়ে বসে কি ? পভকরিণীর শ্যাম জলে সবণ রৌদ্র ক্ৰমে মিলাইয়া মিলাইয়া দেখিতে দেখিতে সব শ্যাম হইল—কেবল তালগাছের অগ্রভাগ সাবণ পতাকার ন্যায় জীবলিতে লাগিল। সন্দরী বলিল, “ভাই, সন্ধ্যা হইল, আর এখানে না। চল বাড়ী যাই।” শৈবলিনী। কেহ নাই, ভাই, চুপি চুপি একটি গান গা না। স। দরি হ! পাপা! ঘরে চ।

  • ा। ঘরে যাব না লো সই!

আমার মদনমোহন আসছে ওই। হায়! যাব না লো সই! স। মরণ আর কি ? মদনমোহন ত ঘরে বোসে, সেইখানে চল না। শৈ। তাঁরে বল গিয়া, তোমার মদনমোহিনী, ভীমার জল শীতল দেখিয়া ডুবিয়া মরিয়াছে । স। নে এখন রঙ্গ রােখ। রাত হলো-আমি আর দাঁড়াইতে পারি না।” আবার আজ ক্ষেমির মা বলছিল, এদিকে একটা গোরা এয়েছে। শৈ। তাতে তোমার আমার ভয় কি ? স। আ মালো, তুই বলিস কি ? ওঠ, নাহিলে আমি চলিলাম। শৈ। আমি উঠবো না—তুই যা। 8O8