পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ಹಾಇ সন্দরী রাগ করিয়া কলসী পণ করিয়া কলে উঠিল। পনেকবার শৈবলিনীর দিকে ফিরিয়া বলিল, “হাঁ লো, সত্য সত্য তুই কি এই সন্ধ্যেবেলা একা পাকুরঘাটে থাকিবি না কি ?” শৈবলিনী কোন উত্তর করিল না; অঙ্গলি নিন্দেশ করিয়া দেখাইল। অঙ্গলিনিন্দো শানসারে সন্দরী দেখিল, পঙ্করিণীর অপর পারে, এক তালব্যক্ষতলে, সব্বনাশ! সন্দেরী আর কথা না কহিয়া কক্ষ হইতে কলসী ভূমে নিক্ষিপত করিয়া উদ্ধ বশবাসে পলায়ন করিল। পিত্তল কলস, গড়াইতে গড়াইতে ঢাকা ঢািক শব্দে উদারস্থ জল উদগীর্ণ করিতে করিতে, পনেকবার ব্যাপীজলমধ্যে প্ৰবেশ করিল। সন্দরী তালব্যক্ষতলে একটি ইংরেজ দেখিতে পাইয়াছিল। ইংরেজকে দেখিয়া শৈবলিনী হেলিল না—দলিল না—জল হইতে উঠিল না। কেবল বক্ষঃ পৰ্য্যন্ত জলমধ্যে নিমজজন করিয়া আদ্র বসনে কবরী সমেত মস্তকের অন্ধভাগ মাত্র আব্বত করিয়া প্ৰফল্লিরাজীবৎ জলমধ্যে বসিয়া রহিল। মেঘমধ্যে, অচলা সৌদামিনী হাসিল—ভীমার সেই শ্যামতরঙ্গে এই সবর্ণকমল ফাটিল। সন্দরী পলাইয়া গেল, কেহ নাই দেখিয়া ইংরেজ ধীরে ধীরে তালগাছের অন্তরালে অন্তরালে থাকিয়া, ঘাটের নিকটে আসিল । ইংরেজ, দেখিতে অলপবয়স্ক বটে। গাম্পফ বা শামশ্র কিছই ছিল না। কেশ ঈষৎ কৃষ্ণবর্ণ; চক্ষও ইংরেজের পক্ষে কৃষ্ণাভ। পরিচ্ছদের বড় জকি জমক, এবং চেন অঙ্গরীয় প্রভৃতি অলঙ্কারের কিছ পারিপাট্য ছিল। ইংরেজ ধীরে ধীরে ঘাটে আসিয়া, জলের নিকটে আসিয়া, বলিল, "I Come again, fair lady.” শৈবলিনী বলিল, “আমি ও ছাই বঝিতে পারি না।” "Oh-ay-that nasty gibberish-I must speak it I suppose. &al again আয়া। হ্যায়।” শৈব । কেন ? যমের বাড়ীর কি এই পথ ? ইংরেজ না বঝিতে পারিয়া কহিল, “কিয়া বোলতা হ্যায় ?” শৈ। বলি, যম কি তোমায় ভুলিয়া গিয়াছে ? ইংরেজ ৷ যম | John you mean ? হাম জন নহি, হম, লরেন্স। শৈ। ভাল, একটা ইংরেজী কথা শিখিলাম, লরেন্স অৰ্থে বন্দির। সেই সন্ধ্যাকালে শৈবলিনীর কাছে লরেন্স ফন্টর কতকগলি দেশী গালি খাইয়া সবসথানে ফিরিয়া গেল। লরেন্স ফন্টর, পঙ্করিণীর পাহাড় হইতে অবতরণ করিয়া আমবােক্ষতল হইতে আশবমোচন করিয়া, তৎপঠে আরোহণ পরিবর্তক টিবিয়ট নদীর তীরস্থ পৰ্ব্বব্যািতপ্ৰতিধবনি সহিত শ্রত গীতি সমরণ করিতে করিতে চলিলেন। এক একবার মনে হইতে লাগিল, “সেই শীতল দেশের তুষাররাশির সদশে যে মেলি ফাস্টাব্যের প্রণযে বাল্যকালে অভিভূত হইয়াছিলাম, এখন সে সাবপেইেনর মত। দেশভেদে কি রচিাভেদ জন্মে ? তুষারময়ী মেরি কি শিখার পিণী উষ্ণ দেশের সন্দরীর তুলনীয়া ? বলিতে পারি না।” ফন্টর চলিয়া গেলে শৈবলিনী ধীরে ধীরে জলকলস পণ করিয়া কুম্ভকক্ষে বসন্তপাবনারাঢ় মেঘবৎ মন্দপদে গহে প্রত্যাগমন করিল। যথাস্থানে জল রাখিয়া শয্যাগহে প্রবেশ করিল। তথায় শৈবলিনীর স্বামী চন্দ্রশেখর কমবিলাসনে উপবেশন করিয়া, নামাবলীতে কটিদেশের সহিত উভয় জান বন্ধন করিয়া মৎপ্রদীপ সম্মমখে, তুলটে হাতে-লেখা পতি পড়িতেছিলেন। আমরা যখনকার কথা বলিতেছি, তাহার পর এক শত দশ বৎসর অতীত হইয়াছে। চন্দ্রশেখরের বয়ঃক্রম প্রায় চত্বারিংশৎ বর্ষ। তাঁহার আকার দীর্ঘ; তদনুপযোগী বলিষ্ঠ গঠন। মস্তক বহৎ, ললাট প্রশস্ত, তদনুপরি চন্দন-রেখা। শৈবলিনী গহে প্ৰবেশকালে মনে মনে ভাবিতেছিলেন, “যখন ইনি জিজ্ঞাসা করিবেন, কেন এত রাত্র হইল, তখন কি বলিব ?” কিন্তু শৈবলিনী গহমধ্যে প্রবেশ করিলে, চন্দ্রশেখর কিছ বলিলেন না। তখন তিনি ব্রহ্মসত্রের সন্ত্রবিশেষের অর্থসংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। শৈবলিনী হাসিয়া উঠিল। তখন চন্দ্রশেখর চাহিয়া দেখিলেন, বললেন, “আজি এত অসময়ে বিদ্যুৎ কেন ?” শৈবলিনী বলিল, “আমি ভাবিতেছি, না জানি আমায় তুমি কত বকিবে!" 8OG: